বাংলাদেশকে সোলার নেশন হতে হবে

বর্তমান সরকারের সফলতার একটি বড় উদাহরণ বিদ্যুৎ খাত। এই সফলতার পেছনে সৌরবিদ্যুতের বড় ভূমিকা রয়েছে। দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ তাদের দৈনন্দিন বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সাল থেকে চালু হওয়া আধুনিক এই পদ্ধতি বেশ এগিয়েছে। রয়েছে আরও কিছু পরিকল্পনা। সোলার বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ২০১২ সালের শুরুতে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ)। সংগঠনটির সভাপতি ও ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দীপাল চন্দ্র বড়ূয়া। সোলার বিদ্যুতের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশনের (এবি টিভি) সাথে। কথোপকথনের অনুলিখন তাঁরই ভাষ্যে আজকের বাজারের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।

দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সৌরবিদ্যুতের বড় ভূমিকা রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামে গ্রামে সোলার হোম সিস্টেম শুরু করা হয়। এখন এটি অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার হোম সিস্টেম সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশে প্রায় ৪৫ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেম ইনস্টল হয়েছে গ্রামে গ্রামে। প্রায় ২ কোটি মানুষ তাদের দৈনন্দিন বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ বিদ্যুতেরও অগ্রগতি হচ্ছে। দুই দিক থেকে এমন অগ্রগতি হওয়ায় আশা করা যাচ্ছে যে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।

তবে সাধারণ বিদ্যুৎ এলেই যে সৌরবিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে এমন নয়। বরং দিনে দিনে বাড়ছে। বিদ্যুৎ থাকার পরও অনেকে সোলার সিস্টেম ব্যবহার করছে। কাারণ অনেক সময় হঠাৎ করেই লোডশেডিং হয়। পাশাপাশি দিনে দিনেই বিদ্যুতের বিল বেড়ে যাচ্ছে। আর সোলারে একবার ইনভেস্ট করলে পরে তার আর বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে না।

শুধু সোলার হোম সিস্টেম নয়, সোলার ইরিগেশন পাম্পও বাড়ছে। ছয় শতাধিক পাম্প হয়ে গেছে এই সোলার সিস্টেমে। তা ছাড়া সোলার সিস্টেমে স্ট্রিট লাইটও স্থাপন করা হচ্ছে। সাধারণ বিদ্যুৎ যেখানে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে, সোলার বিদ্যুৎ সেখানে আগেই পৌঁছে যাচ্ছে।

কনভেনশনাল বিদ্যুতেরও প্রসার ঘটাতে হবে
২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর যে পরিকল্পনা; তা বাস্তবায়ন করতে হলে সোলার বিদ্যুতের পাশাপাশি কনভেনশনাল বিদ্যুতেরও প্রসার ঘটাতে হবে। কারণ এটা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি হবে, প্রত্যাহিক চাহিদা মিটবে। অনেক ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করছে, সেগুলোর জন্য দরকার। দুটি যদি সমান গতিতে এগিয়ে যায়, তাহলে এনার্জিটা সাসটেইনেবল হবে। এ জন্য আমরা গভীরভাবে কাজ করছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে যাতে সোলার সিস্টেম ব্যবহারে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা যায়, আমরা সেভাবে কাজ করছি এবং এটা সম্ভব।

বাংলাদেশে অফুরন্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এই সূর্যের আলোকেই কাজে লাগিয়ে সোলার হোম সিস্টেমটাকে আরও শক্তিশালী করা যায়। এটিকে কাজে লাগিয়েই আজ প্রায় ৫০ লক্ষ পরিববারের কাছে সোলার হোম সিস্টেম পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে এবং সোলার ইরিগেশন পাম্পে যাচ্ছে। রুফ টপ ব্যবহারের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।

সোলার নেশনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার
সোলার নেশন করার জন্য অনেকগুলো প্রস্তুতি দরকার। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার, মিশন দরকার। বাংলাদেশে কীভাবে একটা সোলার মিশন গ্রহণ করা যায়, সে বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে কাজও হচ্ছে। সোলার কমিশন প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ করবে। রুফ টপ নিয়ে কাজ করবে, সোলার ইরিগেশন পলিসি কী হবে, সোলার হোম সিস্টেমে কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়Ñ এমন নানা বিষয়ে কাজ করবে। কমিউনিটি সোলার নিয়েও কাজ হচ্ছে। যেমন একটি গ্রামে যদি ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে ৩ মেগাওয়াট সোলার থেকে কীভাবে আনা যায়, তা নিয়েও কাজ হচ্ছে।

সোলার নেশনের উদ্দেশ্য
আগামী ১০ বছরের মধ্যে জেনারেল বিদ্যুতের চেয়ে অনেক কম মূল্যে সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। সোলার ন্যাশনের উদ্দেশ্য হলো বিদ্যুৎটাকে সাসটেইনেবল করা। আর এটা করতে হলে সমান গতিতে রিনিউয়েবল এনার্জি সোলার থেকে, বায়োমাস থেকে এবং উইন্ড এনার্জিসহ অন্যান্য সোর্স থেকে মিলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে হবে। যদি ৩০ হাজার মেগাওয়াটের প্ল্যান থাকে। সেখান থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট সৌরশক্তি থেকে এলে আগের বিদ্যুৎ কিছুটা হলেও সাসটেইনেবল হবে। আর ৩০ হাজার মেগাওয়াটই যদি ফসিল ফুয়েল থেকে করতে হয়, তাহলে ওটা প্রতি বছর কস্ট বাড়বে। কারণ, কিছু কিছু বিষয়ে বিনিয়োগ লাগবে, প্ল্যান্ট আবার নতুন করে বসাতে হবে। এভাবে কস্ট বেড়ে যাবে।

অর্থাৎ, যে খরচটা আমরা করে ফেলেছি, তারপরও প্রতি বছর আবার ফুয়েলের জন্য খরচ বাড়বে। কিন্তু রিনিউয়েবল এনার্জি একবার খরচ করলে কমপক্ষে ২০ বছর চালাতে পারবেন। বাড়তি খরচ হবে না। খুব সামান্য খরচেই হবে। এটাকে বলে ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম। যাঁরা গভীরভাবে এনার্জি নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের মতে ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সিস্টেম। কারণ ন্যাশনালি করলে কোনো এক জায়গায় সমস্যা হলে সারা বাংলাদেশের গ্রাহকই সাফার করবে। আর এই সিস্টেমে কোনো এক জায়গায় সমস্যা হলে শুধু ওখানেই সমস্যা হবে। বাকি সব জায়গায় ঠিক থাকবে। অতএব, ডিস্ট্রিক্টওয়ারি কাজ করাটাই বেটার। আর সবচেয়ে স্মার্ট গ্রিড আইডিয়া হচ্ছে যে গ্রিডটা ভালো হলে সেটাকে ন্যাশনাল গ্রিডে যোগ করে দেওয়া। যদিও তার একটা ম্যাকানিজম লাগবে।

তাপমাত্রা কমাতে হবে
বিশ্বে এরই একটি আন্দোলন হচ্ছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে অনেক দেশ থ্রেটে আছে। বাংলাদেশও এর মধ্যে আছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে সমুদ্রের পানি বেড়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যাবে। তাহলে এ দেশের অবস্থা কী হবে?
এ থেকে মুক্তি পেতে একটি সমাধানের দরকার। সমাধানটা শুধু বাংলাদেশে সংশোধন হলেই হবে না; এর জন্য পুরো বিশ্বকেও সতর্ক হতে হবে। ২০১৬ সালে একটি এগ্রিমেন্ট হয়েছে। আমাদের ফসিল ফুয়েল-নির্ভর যে এনার্জি, এটা কমাতে হবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং যাতে ২ ডিগ্রি না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেটা ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ ডিগ্রির নিচে রাখলে বিশ্বের স্ট্যাবিলিটি সাসটেইনেবল হবে। এ জন্য ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ বলে বিশ্বসম্প্রদায় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সে জন্য আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশের সোলার বিদ্যুৎব্যবস্থাকে প্রদর্শন করতে। চাইছি, সোলার নেশন কনসেপ্টটাকে অত্যন্ত গভীর ও নিবিড়ভাবে একটি পলিসি সাপোর্ট দেওয়া হোক। আমরা প্র্যাকটিক্যালি এটা করে দেখাতে চাই। বাংলাদেশের ১৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে সৌরশক্তির সাহায্যে। সরকারি হিসাবে ১২-১৩ পার্সেন্ট বলা হয়। কিন্তু সব মিলিয়ে ধরলে ১৫ শতাংশ মানুষ বর্তমানে সৌরশক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বিদ্যুতের যে হিসাব গণনা করা হচ্ছে, সেটার মধ্যে এটা আছে। এনার্জি মিনিস্ট্রি, স্রেডা, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ সেন্টারসহ সবারই এ বিষয়ে একটা সফট কর্নার আছে।

বাংলাদেশের জন্য সুযোগ
অনেক দেশ এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে আর ফসিল ফুয়েল দিয়ে বা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না। কারণ এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। এতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বেড়ে যাচ্ছে। আর এখানেই বাংলাদেশের জন্য এটা অনেক বড় সুযোগ।
দেশে ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় ৩৪০ দিনই সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এখন আমরা যদি এটা পজিটিভলি কাজে লাগাতে পারি, সেটাই বেটার হবে। এখন সুন্দরভাবে প্ল্যানিং করে সোলার মিশন কীভাবে অ্যাচিভ করতে পারি।

সরকার একটা লক্ষ্য ঠিক করেছে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। একইভাবে আমরাও যদি পরিকল্পনা করে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সোলারের মাধ্যমে করতে পারি, ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ করতে পারি; সেই চেষ্টা হচ্ছে। এবং এটা সম্ভব। এখানে সানশাইন আছে। আমাদের ৭৫০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত ও সীমানা আছে। সেখানে আমরা ওয়েল স্পিড সোলার এসেস করতে পারি।

সোলার ব্যবহারে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না
সোলার সিস্টেম ব্যবহারে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আমাদের জায়গা যেহেতু কম; সেই অল্প জায়গাকে কীভাবে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে কাজ হচ্ছে। যেমন ওপরে একটা স্টিল লাইট থাকলে নিচে কাজ করতে কিন্তু আমাদের সমস্যা হবে না। ইরিগেশন পাম্প করলে পাশে আদা চাষ করতে বা অন্য কিছু চাষ করতে কোনো সমস্যা হবে না। এভাবে পুরো জায়গাটা পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। একটু জায়গাও আমরা নষ্ট করতে চাই না।

আমরা সরকারকে বলছি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদটা সোলার বিদ্যুতের ওপরে থাকবে। ওখান থেকে যে বিদ্যুৎ তৈরি হবে, তা নিজেরা ব্যবহার করবে এবং সহযোগী অন্য গ্রিড লাইনেও দিতে পারবে। এখন সোলার সিস্টেমের মূল কস্ট হচ্ছে ব্যটারি। আমরা চেষ্টা করছি আস্তে আস্তে ব্যাটারিটাকে উঠিয়ে দিতে। অথবা এখন একটা ব্যাটারি ৫ বছর যাচ্ছে, সেখানে গবেষণা হচ্ছে কীভাবে এটিকে ২০ বছর ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায়।

এলইডি লাইট ব্যবহারে বিদ্যুতের সাশ্রয়
আগে যে সোলার এনার্জি লাইট ছিল, সেটি অনেক পাওয়ার কনজামশন করত। কনভেনশনাল লাইটের বদলে এখন এলইডি লাইট ব্যবহার করা হয়। এলইডি লাইটে ৮০ পার্সেন্ট বিদ্যুৎ কম লাগে। বাংলাদেশে যদি এলইডি লাইট আরও বেশি প্রোভাইড করা যায়, তাহলে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সেইভ হবে। সুতরাং আমরা যদি একটা প্ল্যানিং করে এগোই, তাহলে ভালো করা সম্ভব।

অনেকে মনে করেন, আমাদের দেশে জায়গা কম। কিন্তু আমাদের বাড়ির ছাদগুলো, রাস্তার ব্রিজ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এসব জায়গা ব্যবহার করে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এভাবে প্ল্যান করে এগোলে বাংলাদেশ একটা স্মার্ট কান্ট্রিতে পরিণত হবে। পুরো বিশ্ব দেখবে, বাংলাদেশ যেখানে এনার্জি শর্টেজ কান্ট্রি ছিল, সেখানে রিনিউয়েবল এনার্জি রিচ কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ একবার যেটাকে ধরে, সেটাকে যদি গ্রহণ করে তাহলে এমন উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যায়; শতভাগ সাকসেস করে ফেলে। স্বাধীনতা আন্দোলন বা বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট পর্যন্ত সবই সম্ভব হয়েছে।

ছোট একটি ভূখণ্ড থেকে ১৬০ মিলিয়ন মানুষকে খাওয়ানোর পরও রপ্তানির সুযোগ সুষ্টি হচ্ছে। আবার পাটের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার হচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশের রিনিউয়েবল এনার্জি অলরেডি বিশ্বের মধ্যে বড় সোলার হোম সিস্টেম ইনস্টল করেছে। সুতরাং যেকোনো বিষয়ে যদি আমরা একটি দিকে নজর দিই, তবে এটা আমাদের জন্য অ্যাসিভ করা সম্ভব।

আমার বিশ্বাস, অতি দ্রুতই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সোলার সিস্টেম ব্যবহার করবে। সেটা ৫১ শতাংশও হতে পারে, ৫৫ শতাংশও হতে পারে অথবা এর বেশিও হতে পারে। আমাদের দেশের পটেনশিয়াল অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি। যেমন জার্মানিতে ২৬ জুন লং ডে হওয়াতে তারা এক দিনে ৭৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে এই সোলার সিস্টেমে। সেখানে বাংলাদেশে তো অনেক সূর্যের আলো। আমরা যদি সব ক্ষেত্রে গুছিয়ে যেতে পারি, তাহলে অতি দ্রুতই সোলার ন্যাশনের মাধ্যমে একটি ভালো অবস্থানে যাওয়া সম্ভব।

সোলার পাম্প দিয়ে এখন বেশ ইরিগেশন হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬০০ পাম্প বসেছে। এ ছাড়া আমাদের আরও মিলিয়ন পাম্প আছে। সেগুলো ধীরে ধীরে রিপ্লেস হবে। চারটা শ্যালো টিউবয়েলকে বাদ দিয়ে যদি ইরিগেশন পাম্প বসে অথবা ছোট ছোট পাম্প বসিয়ে তিন-চার বছর ধরে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, ইকোনমি মডেল এখনো পরিষ্কার হয়নি, কিন্তু সায়েন্টিফিক মডেল পরিষ্কার হচ্ছে। সেটা কাজে লাগিয়ে যদি পাম্প বা প্যানেল ঠিকমতো বসাতে পারি, তবে কৃষকেরা পানি পাবে। এ জন্য কোনো ব্যাটারি লাগবে না। এটা দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে বসিয়ে পরীক্ষাও করা হয়েছে।

এখন হয়তো এটা দিয়ে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে লোনের কিস্তি ও সুদ দেওয়া কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটাকে যদি আমরা একটু সফট করতে পারি, তাহলে কৃষকেরা ইরিগেশন পাম্পের ৫০ শতাংশ দামে চাষ করতে পারবে। বৃষ্টি না হলেও পাম্পের পানি দিয়ে রবিশস্য, ইরি মৌসুমে ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করছে। সুতরাং এটা সম্ভব। ইন্ডাস্ট্রির দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, বিদ্যুতের লাইন থাকা সত্ত্বেও জেনারেটর বসাতে হচ্ছে। কারণ অনেক সময় তাদের বিদ্যুৎ না-ও থাকতে পারে বা সমস্যা হতে পারে। আর কিছু কিছু ফ্যাক্টরি ইতোমধ্যে জেনারেটর বাদ দিয়ে আবার অনেকে জেনারেটরের পাশাপাশি সোলার সিস্টেম ব্যবহার করছে। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিও এখন এটা করছে।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড আছে। তারা বলেছে, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে হবে। এখন সবাই গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির দিকে যাচ্ছে। এখন অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রিই ২৫০ কিলোওয়াট বা ১৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসাচ্ছে। এখন ওদের যদি আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে যে ৫০ শতাংশের বেশি ফ্যাক্টরি সোলার থেকেও নেবে এবং সাধারণ বিদ্যুৎ থেকেও নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে ১৫-২০টি ফ্যাক্টরি সাপ্লিমেন্টরি হিসেবে সোলার ব্যবহার শুরু করেছে। এগুলো বেশ ভালো হচ্ছে। যাঁরা বাইরে থেকে অডিটে আসেন, তাঁরা অবাক হচ্ছেন। তাঁরা বাংলাদেশিদের গার্মেন্ট সেক্টরের অনেক মন্দ দিক নিয়ে হয়তো আলোচনা করেন, কিন্তু ভালো দিকও বাংলাদেশে কম নেই।

রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে বাড়তি কিছু দরকার
আমাদের সোলার সিস্টেম নিয়ে অনেক পলিসি আছে কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য একটা নিখুঁত পরিকল্পনা দরকার, যেটা আমাদের নেই। এই পরিকল্পনা করার জন্য একটা আয়োজন দরকার। এখানে একটা এনার্জি মিনিস্ট্রি আছে। তারা প্রতি বছর ২০০০ বা ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়াতে ব্যস্ত আছে। ইতোমধ্যে ৩ লক্ষ কানেকশন প্রতি মাসে আরইবির মাধ্যমে দিচ্ছে। এটা একটা হিউজ কাজ। কিন্তু রিনিউয়েবল এনার্জি তাদের জন্য বাড়তি কাজ। তারা মুখে বলছে অন্তর দিয়ে করি, কিন্তু বাস্তবতা দেখে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। বাস্তবতা হলো, এটার জন্য পৃথক জনবল দরকার। পৃথক সেল হোক বা মিনিস্ট্রি হোক বা পাওয়ারফুল ডিপার্টমেন্ট হোক; এক্সট্রা কিছু প্রয়োজন। যেমন এসডিজির (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) জন্য একটা কো-অর্ডিনেশন সেল করা হয়েছে। রিনিউয়েবল এনার্জির জন্যও এ রকম একটা কো-অর্ডিনেশন সেল দরকার। ন্যূনতম একটা ডিপার্টমেন্ট করে এটাকে দাঁড় করানো যেতে পারে। এরপর তা ধীরে ধীরে মিনিস্ট্রিতে রূপ দেওয়া যাবে।

সরকার এরই মধ্যে কিছু স্টেপ নিয়েছে। যেমন একটা হলো সাসটেইনেবল রিনিউয়েবল এনার্জি অথরিটি, আরেকটা এনার্জি রিচার্জ অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার। এ দুটিই এখন নতুন। এগুলোর সাথে এখন একটা ডিপার্টমেন্ট চালু করতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে পাঁচ বছরের মধ্যে যদি একটা পূর্ণাঙ্গ মিনিস্ট্রি করা যায়, তাহলে ভালো হবে। এতে কোনো ক্ষতি হবে না। মিনিস্ট্রি করতে যে ব্যয় হবে, তার চেয়ে বেশি উপকার হবে।

আমরা যদি রিনিউয়েবল এনার্জির একটা ওপেন উইন্ডো করতে পারি, তাহলে দেশের বাইরে থেকেও অনেক ইনভেস্টমেন্ট আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে দেশ উন্নত অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে। এ জন্য অবশ্য এনার্জি বাড়াতে হবে। যদিও ফসিল ফুয়েলের মাধ্যমে অনেক এনার্জি বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু এক্সপেনসিবল না। ফসিল ফুয়েলের কস্ট আরও বাড়াতে হবে। এখন রিনিউয়েবল এনার্জির উইন্ডো যদি আস্তে আস্তে বড় করতে থাকি, তাহলে সবার জন্য মঙ্গল হবে। সুতরাং এটা আমাদের খুবই প্রয়োজন।

এবারের বাজেটে প্রত্যাশা
প্রতি বাজেটের আগেই রিনিউয়েবল এনার্জির ওপর ট্যাক্স না রাখার অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যখন এটা গ্রো করবে বা পূর্ণাঙ্গ পর্যায়ে যাবে, তখন সবারই ট্যাক্স দিতে হবে। কিন্তু এখন এটার পরিমাণ এত কম যে ট্যাক্স না নেওয়াটাই বেটার। এটাকে এখন গ্রো করার সুযোগ দেওয়া উচিত। আর এই সুযোগটা তো প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিবদের দেওয়া হচ্ছে। এদের যেহেতু রেগুলার বিদ্যুৎ দিতে পারছি না, সো এতটুকু সুযোগ তো দিতেই পারি।

এ ছাড়া প্রতি বাজেটেই রিনিউয়েবল এনার্জির জন্য আলাদা একটা বাজেট চাওয়া হয়। প্রথমে অল্প দিয়ে হলেও শুরু হোক এটা আমরা চাই। এবং কোনো ট্যাক্স না ধরে কোথায় কোথায় ইনসেনটিভ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। বাজেট বরাদ্দ হলে এটি ব্যবহারে একটি নীতিমালা হবে। নীতিমালা হলে দেশের বিভিন্ন মহলে এটি নিয়ে আলোচনা হবে। নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে। ধীরে ধীরে এটি দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু এখনো এর জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ করা হয়নি। এখন আমাদের টার্গেট ১০ শতাংশ সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও আমরা সেটা ফিলআপ করতে পারছি না। আমরা তৈরি করছি ৫ শতাংশ। বাজেট বরাদ্দ দিলে এটা বেড়ে ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশে যাওয়া সম্ভব।

দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া
বিএসআরইএ সভাপতি ও ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান