পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের জোয়ারের চিত্রসহ বিনিয়োগে সর্বোচ্চ মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনার কথা এবং এ দেশের ইতিবাচক দিকসমূহ তুলে ধরতে বিদেশী সাংবাদিক ও লেখকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার রাতে বাংলাদেশ সফরে আসা ২০টি দেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধি দলের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে তিনি বলেন, আপনারা যখন দেশে ফিরবেন, আপনাদের দেশবাসীকে বলবেন অর্থ বানাতে চাইলে বাংলাদেশে যাও। কারণ, এখানে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিনিধি দলটি ১৪ থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে। বিদেশী অতিথিদের এ দলে ছিলেন সাংবাদিক, লেখক, ইতিহাসবিদ ও কূটনীতিবিদ। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বিদেশী অতিথিদের সামনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বাংলাদেশের ব্যাপক বিনিয়োগ ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব(এশিয়া ও প্যাসিফিক)মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বান্ধব দারুণ সুযোগ বিরাজ করছে। কারণ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্যে কোন শুল্ক বা করের বাধা নেই।
তিনি বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্যে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বা এফডিআই) আকৃষ্ট করতে এক’শটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নতি ঘটেছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আমি তাকে বলি তিনি (শেখ হাসিনা) একজন অলৌকিক নারী।
বাংলাদেশের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে মোমেন বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নারীর উন্নয়ন। বর্তমানে এ দেশের শ্রমশক্তির ৩৬ শতাংশ নারী যা গত দশ বছর আগে ছিল মাত্র ছয় শতাংশ। দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে ধর্ম আছে অনেক কিন্তু উৎসব সবার।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সম্ভাব্য অন্যতম ব্যাপক গণহত্যা প্রত্যক্ষ করা থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে রক্ষা করেছে। তিনি বলেন, আমরা তাদের আশ্রয় না দিলে বড় ধরণের আরও একটি গণহত্যা সংঘটিত হতো।
তিনি বলেন, কিন্তু তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে আমাদের মূল্য দিতে হয়েছে। এসব রোহিঙ্গা যাতে মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সেই লক্ষ্য অর্জনে আপনাদের (বিশ্ব মিডিয়া) সহযেগিতা আমাদের প্রয়োজন। মন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে সৃষ্টি এবং এর সমাধানও তাদের কাছেই রয়েছে।
মিডিয়াকে পাওয়ার হাউজ উল্লেখ করে মোমেন বলেন, আপনাদের লেখনী আমাদের প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ওপর যারা সহিংসতা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লিখুন। এই সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে। এটি চলতে পারে না। শান্তিপূর্ণ ও টেকসই বিশ্ব তৈরিতে অন্যকে সহ্য এবং সম্মান করার মানসিকতা তৈরির ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশের ভাবমূতি ও সম্ভাবনা বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে‘ভিজিট বাংলাদেশ প্রোগ্রাম’এর আওতায় ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট এই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। সপ্তাহব্যাপী সফরকালে প্রতিনিধি দলটি টুঙ্গিপাড়া যায় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তথ্য-বাসস
আজকের বাজার/আখনূর রহমান