ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন নৌপথ

বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এবার নতুন নৌপথ তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র দিয়ে এ পথ তৈরি হবে। ভারতের ইউনিয়ন মন্ত্রী মানসুক মানদাবিয্য শনিবার আগরতলায় এক অনুষ্ঠানে একথা জানান। খবর ফার্স্টপোস্টের।

মানসুক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র ব্যবহার করে ২ দেশের মধ্যে নতুন নৌপথ তৈরির জন্য চুক্তি সই করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত সরকার ব্রহ্মপুত্রে তাদের অংশে নদীখনন করবে। আবার বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশ সরকার খনন করবে।

মন্ত্রী বলেন, আগামী ১ বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ হবে বলে আমরা আশা করছি। এ পথের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়বে। একইসঙ্গে যোগাযোগ ও চলাচলের পথ সুগম হবে।

খবরে বলা হয়, নৌপথসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংযোগ বাড়ানোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে ভারত। এরইমধ্যে অঞ্চলটির জন্য ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২,৯৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমা এবং ১,১১৬ কিলোমিটার নৌসীমা রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রসহ ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে।

ত্রিপুরার পরিবহন সচিব সমরজিৎ ভৌমিক জানান, ত্রিপুরার গোমতী ও হাওড়া এবং বাংলাদেশি নদীগুলোর সঙ্গে জলপথে যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটাতে রাজ্য সরকারের তরফে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ত্রিপুরার গোমতী এবং বাংলাদেশের মেঘনা নদীর মধ্যে জলপথের উন্নয়নে বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ভারতের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে ১২ কোটি রুপি বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে।

পার্বত্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কানেকটিভিটি সঙ্কট সমাধানে বর্তমানে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দরে কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে ভারত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রকল্পের নির্ধারিত ব্যয় ৫৩৫ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ২,৯০৪ কোটি রুপি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বর্তমান জলপথ ও বন্দর

বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চারটি জলপথ কার্যকর রয়েছে। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ হয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয আসামের কলকাতা-পান্ডু, কলকাতা-করিমগঞ্জ, বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় আসামের ধুলিয়ান এবং বাংলাদেশ হয়ে করিমগঞ্জ-পান্ডু-করিমগঞ্জ। এ জলপথগুলো ১৯৭২ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে এবং দু‘দেশের মধ্যকার ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড-এর প্রটোকলের আওতায় সেগুলো নবায়ন করা হয়ে থাকে।

আন্তঃদেশীয় জলপথ ব্যবহারের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে প্রত্যেকটি দেশে চারটি করে বন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের বন্দরগুলো হল-নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, মংলা এবং সিরাজগঞ্জ। আর ভারতের বন্দরগুলো হল-কলকাতা, হালদিয়া, করিমগঞ্জ এবং পান্ডু।

ত্রিপুরা আর অন্য উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো তিন দিক থেকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভুটান এবং চীন দিয়ে বেষ্টিত।

কলকাতা আর আগরতলার মধ্যে ১,৬৫০ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে। কিন্তু যদি বাংলাদেশ হয়ে আসা যায় তবে এ দূরত্ব কমে ৫১৫ কিলোমিটারে দাঁড়ায়। আর তাই কলকাতাসহ অন্যান্য শহর থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা নেওয়ার সময় কমাতে বাংলাদেশের জলপথ এবং বন্দর ব্যবহারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে ভারত।

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ২৩ জুলাই ২০১৭