বাংলাদেশ ও মিশর দেশ দুটি’র মধ্যে বেসরকারি খাতে আরো অধিকতর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একটি বাণিজ্য ফোরাম প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে।
আজ এক বার্তায় বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মিশরের রাজধানী কায়রোর নিউ ক্যাপিটালে অবস্থিত দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পররাষ্ট্র অফিস পরামর্শ (এফওসি) সভা চলাকালীন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, কৃষি, অ্যাকুয়াকালচার, জাহাজ নির্মাণ, প্রতিরক্ষা ও দু’দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগের পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দুই দেশ একে অপরকে যে সহযোগিতা ও সম্ভাব্য সকল সম্ভাবনা প্রদান করতে পারে, তা অন্বেষণ করার সুযোগ করে দিয়েছে এফওসি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন ও মিশরের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ শাহীন তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
এফওসি-তে উভয় পক্ষ দু’দেশের মধ্যেকার বহু পুরনো বন্ধুত্ব ও অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে উচ্চ-স্তরের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও নিয়মিত কূটনৈতিক পরামর্শের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।
উভয় পক্ষ কৃষি গবেষণা, সেচ প্রযুক্তি ও টেকসই কৃষি অনুশীলনসহ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে।
তারা শিক্ষা বিনিময়, বৃত্তির সুযোগ ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছে।
মিশরের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করবেন।
এ সময় উভয়ই পর্যটন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি প্রচার ও দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার গুরুত্বের ওপর একমত পোষণ করেছেন।
প্রতিনিধিদল বিদ্যমান চুক্তিগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতা সহজতর করার জন্য নতুন সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
বৈঠককালে উভয় পক্ষ ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রত্বের অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
রোহিঙ্গা সমস্যাও এ আলোচনার আলোচ্য সূচিতে ছিল। বৈঠকে এ সংকটের মানবিক দিক ও টেকসই সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র সচিব টেকসই সমাধানের জন্য অব্যাহত বৈশ্বিক সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা বিষয়ক আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন সম্পর্কে অবহিত করেন।
উভয় দেশ একে অপরের প্রার্থীতাকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক ফোরামে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যৌথ প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য নিয়মিত উচ্চ-স্তরের যোগাযোগ ও পরামর্শ বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, তৃতীয় দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ২০২৬ সালে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।
একই দিনে, পররাষ্ট্র সচিব মিশরীয় চেম্বার অফ কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. হানি মাহমুদের সঙ্গেও একটি বৈঠক করেন।
আলোচনায় ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও মিশরীয় চেম্বারের মধ্যে ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর জোর দেওয়া হয়।
উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য আরও পদক্ষেপ অনুসন্ধানের জন্য ভার্চুয়াল বৈঠক করতে সম্মত হয়েছে।