বাংলাদেশ থেকে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চান সু চি: ব্রিটিশ মন্ত্রী

মায়ানমারে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বাংলাদেশ থেকে সব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত ব্রিটেনের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড।

২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। মার্ক ফিল্ড ও ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী অ্যালিয়েস্টার বার্ট বুধবার ঢাকায় আসেন। তারা ঢাকায় দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে আসার আগে এই দুই ব্রিটিশ মন্ত্রী মিয়ানমার সফর করে অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে মার্ক ফিল্ড বলেন, “মায়ানমার সফরকালে আমি স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি (সু চি) আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তিনি সব শরণার্থীকে বার্মায় ফিরিয়ে নিতে চান।“

মার্ক ফিল্ড দাবি করেন, “বর্তমান পরিস্থিতির ওপর সুচির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সাংবিধানিকভাবে সামরিক বাহিনী সেখানে অনেক ক্ষমতাধর। তবে সুচি চান, রোহিঙ্গারা বার্মায় ফিরে যাক। এটা ঠিক, রোহিঙ্গাদের বার্মায় ফিরে যাওয়াই মূল ইস্যু। সুচি যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের বন্ধু। তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্রের বিকাশ চান। তার প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন। তিনি আমার চোখে চোখ রেখে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের তিনি ফিরিয়ে নেবেন। তার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল সমর্থন আছে।”

মায়ানমারে সুচির ক্ষমতা না থাকায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তার আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখা যায় কিনা- জানতে চাইলে মার্ক ফিল্ড বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, তাই সু চির পাশে আছি। বিপুল জনসমর্থন তিনি পেয়েছেন, তবুও দেশটির মধ্যে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের বিকাশ রয়েছে। সংবিধানে সামরিক বাহিনীর প্রচুর ক্ষমতা।“

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ব্রিটিশ সরকারের তিন দফার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মায়ানমার সরকারকে দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। রাখাইন রাজ্যে সাহায্য কর্মীদের প্রবেশে অনুমতি দিতে হবে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। যুক্তরাজ্য সরকারের এ তিন দফা মায়ানমারকে মানতে হবে।”

ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সার্বজনীন সিদ্ধান্তের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এক সময় রোহিঙ্গা সংকটটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের ইস্যু ছিল। এখন এটা একটা বৈশ্বিক সংকট। তাই বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করতে হবে।”

মার্ক ফিল্ড বলেছেন, “রাখাইন রাজ্যের মানুষকে নিরাপদে রাখার মৌলিক চাহিদা পূরণে মায়ানমার ব্যর্থ হয়েছে। আমরাই যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকটকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে গেছি। এখন নিরাপত্তা পরিষদে মুক্ত আলোচনা হচ্ছে। মায়ানমার সামরিক বাহিনীকে দেয়া প্রশিক্ষণ স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। এর মাধ্যমে আমরা মায়ানমারের সামরিক বাহিনীকে স্পষ্ট সংকেত দিয়েছি, নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে যা করছে তা আমাদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে মার্ক ফিল্ড বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সদিচ্ছা দেখিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশের পাশে আছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে আছে।”

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ওই অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭