বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার ভ্যাট (মূসক) ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে প্রতিষ্ঠানটি এ বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাকিঁ দিয়েছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর শাখা পাওনা আদায়ে বাংলালিংকে চিঠি (ডিমান্ড নোট) দিয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত স্থান ও স্থাপনা ভাড়া হিসেবে ৩৪ কোটি টাকা ফাঁকি দেয়।
তারও আগে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে বাংলালিংকের ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফাঁকি খুঁজে পায় এনবিআর।
এনবিআর ২০১০ সালের এসআরও (এসআরও নং-২০০-আইন/২০১০/৫৪৯-মূসক) অনুযায়ী স্থান ও স্থাপনার ওপর মূসক আরোপ ও একটি ব্যাখ্যা দেয়। তাতে বলা হয়, ভ্যাট আইন অনুযায়ী ১৫০ বর্গফুটের বেশি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ১৫% মূসক প্রযোজ্য।
বাংলালিংকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, গত ৩ জুলাই বাংলালিংকে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত স্থান ও স্থাপনা ভাড়া ব্যয়ের হিসাব ৭ দিনের মধ্যে দিতে চিঠি দেয় এলটিইউ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সাড়া দেয়নি।
পরে ৩০ জুলাই ৩ দিনের মধ্যে হিসেব দিতে আবার চিঠি দেয়া হয়। ৮ সেপ্টেম্বর মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার হিসাব জমা দেয়।
সে হিসাব বিশ্লেষণ করে ৬ মাসে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩৮ টাকা ১০ পয়সার ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করে এলটিইউ।
এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনা ভাড়া হিসেবে ব্যয় করে ৯ কোটি ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৫ টাকা। ১৫০ বর্গফুটের উর্ধ্বে হওয়ায় এর ওপর ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য।
এ হিসেবে জানুয়ারি মাসে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪৮৬ টাকা ২৫ পয়সা।
ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ টাকা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৮ টাকা ৭৫ পয়সা।
মার্চ মাসে ৮ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৩৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭৩৯ টাকা ৭৫ পয়সা।
এপ্রিল মাসে ৯ কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ৩ টাকা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ লাখ ২০ হাজার ৮৫০ টাকা ৪৫ পয়সা।
মে মাসে ৯ কোটি ২৯ লাখ ৫৬ হাজার ১৩৩ টাকা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৯ টাকা ৯৫ পয়সা।
জুন মাসে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৩ টাকা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩২ টাকা ৯৫ পয়সা।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এইসব ভ্যাট পরিশোধ করেনি।
মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৩৭ ধারার উপধারা (৩) অনুযায়ী অপরিশোধিত মূসকে সুদের হার ২%। ডিমান্ড নোট জারির পর থেকে এ সুদ প্রযোজ্য হবে। ডিমান্ড নোট জারির ১৫ দিনের মধ্যে ফাঁকিকৃত মূসক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। না দিলে মামলাসহ পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছর, ২০১৩-১৪ অর্থবছর এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নতুন সিম কেনার জন্য ৬০০ টাকা হারে পরিশোধ করতে হতো গ্রাহকদের।
সে সময়ে সিম বিক্রিতে মূসক ছিল ৩০০ টাকা। তবে সিম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো ট্যাক্স নেওয়া হতো না। এই সুযোগের অপব্যবহার করে পুরাতন সিম নতুন করে বিক্রি করে বাংলালিংক। এতে প্রতিষ্ঠানটি ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কোম্পানিটির হেড অব পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন (মার্কেটিং) নাফিস আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া মেলেনি।
সূত্র:অর্থসূচক
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭