বাজেটের প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানেও: সামীমা খাতুন

সামীমা খাতুনের স্বপ্নের রঙ। ইভেন্ট, ওয়েডিং প্ল্যানার অ্যান্ড ক্যাটারিং। একসঙ্গে ৪০ হাজার মানুষের খাবার আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সব দায়িত্ব নিতে পারে। তার বাবার ব্যবসাও এটাই। বিবিএ শেষ করে নিজেও বেছে নিয়েছেন বাবার গোছানো ব্যবসা। তবে একেবারেই অন্যরকমভাবে। নিজের সৃষ্টিশীলতার ছাপে ছাপে ছাপিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেকে। আমাদের একান্ত নিজস্ব শাহী খাবারকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান । এ দেশে কি ক্যাটারিং ব্যবসায় আর কোনও নারী ব্যবসায়ী আছেন কেউ? আমাদের অন্তত জানা নেই। শামীমা খাতুন তার শাহী খাবারের গল্প বলেছেন আজকের বাজার ও এবি টেলিভিশনের কাছে। শোনা যাক সেই গল্প–

আমি একজন নারী উদ্যক্তা ক্যাটারিং এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা করছি। ১৯২৬ সাল থেকে এটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা । যখন বাংলাদেশে ভ্যাট প্রচলন শুরু হলো তখন থেকে আমাদের এই ব্যবসায় আমরা ১৫ পার্সেন্ট করে ভ্যাট দিয়ে আসছি। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে দ্রব্যমূল্যের দাম মানে কাঁচামালের উপরও ৪ ভাগের জায়গায় ১৫ পার্সেন্ট ধরা হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে দ্রব্যমূল্যের দাম যেমন বেড়ে যাবে তেমনি রান্না করা খাবারের দামও বেড়ে যাবে। তখন কিন্তু আমাদের ভোক্তারাও প্রভাবিত হবে এমনকি ব্যবসায়ীরাও প্রভাবিত হবে। এখানে প্রডিউসাররা আছেন, সাপ্লায়াররা আছেন, ভোক্তারা আছেন আর আমরা ব্যবসায়ীরাও আছি সবাই সমান তিগ্রস্ত হবো। আর এতে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রথম থেকেই আমরা বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট দিয়ে দিই। সেটা কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে, হল ভাড়া, ডেকোরেটর, পানির বিল, গ্যাস বিল, রান্না করা খাদ্যমূল্যসহ প্রত্যেকটি বিলের উপর কিন্তু ১৫ পার্সেন্ট হারে ভ্যাট দিয়ে আসছি। কিন্তু এবারের বাজেটের কারণে আমাদের যে রান্না করা খাবার সেই খাদ্যের দামও বেড়ে যাবে। এটার কারণে কিন্তু ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীা দু’ পই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেক বড় বড় ব্যবসা খাত যারা অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরজন্যেও প্রতিটা ক্ষেত্রে ১৫% ভ্যাট বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর আমরা নতুন নারী উদ্যোক্তা বলেন আর নতুন ব্যবসায়ী বলেন কোথায় দাঁড়াব? যা বড় ব্যবসায়ীদের জন্য বোঝা মনে হচ্ছে সেটা আমাদের জন্য কত কঠিন হবে এটা আমার প্রশ্ন। আমাদের ব্যবসায় প্রসার কিভাবে হবে?

বাজেটে প্রত্যাশা
আসলে বাজেটে ভ্যাটের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু আমি বলি একে কি অন্যভাবে চিন্তা বা পরিকল্পনা করা যায় না? এই মাত্রাতিরিক্ত ভ্যাটকে সহনশীল পর্যায়ে রেখে যারা করের আওতাধীন নয় এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা বছরের পর বছর ব্যবসা করে যাচ্ছে অথচ কোনোরকম আয়কর দিচ্ছেনা তাদের করজালে আনা হোক। ভ্যাটের মাত্রা কমালে তারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভ্যাট দিতে পারবে আমরাও দিতে পারবো, যেমনটা এতদিন দিয়ে আসছি।

ভ্যাটের মাত্রাটা সহনশীল পর্যায়ে করে আমাদের দেশটাকে উন্নয়নের পথে নিতে হবে। দেশ তখনই উন্নত হবে যখন সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সবাই ভ্যাট দিতে পারবে। আমরা তো ভ্যাট দিচ্ছিই আমাদের উপরেই কেন ভ্যাটের চাপ অব্যাহত থাকবে? ইনক্রিজ এমাউন্টের চাপটা আমাদের উপরেই কেন?

চূড়ান্ত বাজেটে আমাদের আশা
বাজেটের পর এই ভ্যাটের কারণে শুধু আমাদের ব্যবসায়ের েেত্রই নয় কর্মসংস্থানের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে । ধরুন আমি না হয় ব্যবসা করি কিন্তু নতুন উদ্যোক্তা যারা আর আমার মত আগ্রহী নারী উদ্যোক্তারাও কিন্তু এটাকে নেগেটিভলি নিবে, তারা ভাববে যে আমি একটা ব্যবসায় বিনিয়োগ করবো সেখান থেকে রিটার্ন কী পাবো? ব্যবসা যখন আমি করবো রিটার্ন তো অবশ্যই চাইবো। ব্যবসা করে আমি কিন্তু কিছু মানুষের কর্মসংস্থ নের ব্যবস্থা করছি। এই মাত্রাতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে কিন্তু কর্মসংস্থান কমে যাবে। নতুন ব্যবসায়ীরা কিন্তু বিনিয়োগে উৎসাহ হারাবে। উৎসাহ হারানোয় কর্মসংস্থান কমে যাবে বেকারত্ব বেড়ে যাবে । যেখানে বেকারত্ব আমাদের দেশে বড় একটা সমস্যা। বেকারত্ব দূর করতে হলে ভ্যাটের মাত্রা কমিয়ে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে হবে।

ভ্যাট নিয়ে নতুন করে ভাবুন
সবশেষে বলবো দেশের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য,বেকারত্ব কমানোর জন্য এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আমাদের নারী ,উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নারী উন্নয়নের জন্যেও অনেক ব্যবস্থা নিয়েছেন। তিনি ভ্যাটের এই বিষয়টাও যদি ভেবে দেখেন তাহলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাবো আমাদের এই ক্যাটারিং ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ে ভ্যাটের পরিমাণ যদি ১৫ পার্সেন্ট থেকে কমিয়ে ৫ পার্সেন্ট করা হয় তাহলে আমরা ব্যবসা প্রসারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবো।