বাজেটে আসছে বিশেষ সুবিধা, তবুও আস্থাহীনতা পুঁজিবাজারে

এবছরে বাজেটে বিশেষ সুবিধা থাকছে পুঁজিবাজারের জন্য। আসছে বাজেটে কমানো হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার। কর্পোরেট ট্যাক্স ও লেনদেনের ওপর উৎসে করও কমানো হবে । বাড়ানো হচ্ছে- লভ্যাংশের ওপর করমুক্ত সুবিধা এবং বন্ড মার্কেটকে চাঙ্গা করতে বিশেষ প্রনোদনাও দেওয়া হচ্ছে এই বাজেটে । জাতীয় রাজস্ব র্বোড (এনবিআর) ও অর্থমন্ত্রণালয়সহ একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রতিনিধিরা। তারা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখা ও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে এইবারের বাজেটে বেশ কিছু দাবী তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে।
দাবীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডার কর্তৃক সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর আরোপিত উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ০১৫ শতাংশ করা, ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশের ওপর করমুক্ত সুবিধা দেওয়া, এবং ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।দাবীগুলোতে অর্থমন্ত্রী সম্মতি রয়েছে বলে আজকের বাজারকে নিশ্চিত করেছেন ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট মোশতাক আহমেদ সাদেক।

তিনি আজকের বাজারকে বলেন, এছাড়াও ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের ওপর কর মওকুফের দাবি জানানো হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যান এর সাথে বসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মোশতাক আহমেদ সাদেক আজকের বাজারকে বলেন।

এ ছাড়াও পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এডি রেশিও (ঋণ-আমানত অনুপাত) না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজেটের পর পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল রাখতে মার্কেট মেকারদের সাথে আলোচনায় বসার পরিকল্পনাও রয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ।

তাছাড়া সিআরআর সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবগুলো উদ্যোগ পুঁজিবাজরের জন্য ইতিবাচক। এগুলোর দেওয়া হলে পুঁজিবাজারেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই মুহূর্তে বাজারে নতুন বিনিয়োগ দরকার। ফলে এমন প্রণোদনা দিতে হবে যা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। না হলে বিনিয়োগকারীরা এর সুফল পাবে না।

প্রণোদনার বিষয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানোসহ পুঁজিবাজারের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকছে। আর বাজেটের পর বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসা হবে। কিভাবে বাজারটাকে স্থিতিশীল রাখা যায়। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির বিনিয়োগের বড় উৎস হিসেবে কাজ করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হবে। অর্থমন্ত্রীর কথা সঙ্গে একমত পোষণ করে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও বলেন, ‘এবারের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হবে।’

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ আজকের বাজারকে বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেটাই আসুক অর্থবহ হতে হবে তাহলে ভালো হবে। কর্পোরেট টেক্স এবং ডিভিডেন্ট ইনকামের ওপর টেক্স কিছুটা ছাড় দিতে পারে।পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ২ থেকে ৩ বছর টেক্স ছাড় দেওয়ার সুবিধা থাকতে পারে প্রনোদনা হিসেবে।

এখন তারল্য সংকট রয়েছে, বাজেটে টাকা সরবরাহ করতে পারবেনা। কিন্তু টেক্স কমানো হলে পুঁজিবাজারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভালো কিছু হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ । তিনি বলেন গতবছরও গুঞ্জন ছিল বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে, কিন্তু পুঁজিবাজারের জন্য আসলে কিছুই ছিলনা। এবার বাজেটে হয়তো কিছু থাকবে কারন অর্থমন্ত্রী নিজেই যেহেতু বলছেন।তবে সামান্য কিছু থাকলে হবেনা যেটাই দেওয়া হবে সেটা যেন অর্থবহ হয়।
বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ সুবিধা বা প্রণোদনা: স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর ৫ বছর কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করের হার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত অন্যান্যখাতের কোম্পানির করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হতে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ পেলে তার জন্য কোনো কর দিতে হয় না। এছাড়া কোনো কোম্পানি বা অংশীদারী ফার্ম পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ হতে যে টাকা মুনাফা করে, তার ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করলে উৎসে কর দিতে হবে না।

তবে এসব প্রণোদনার পর বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত তিন বছরে বাজার আর ঘুরে দাড়াঁতে পারেনি।প্রায় প্রতিদিনই কমছে সূচক ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। ফলে হাড়াচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। ফলে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের আস্থাহীওনতা আর সংকট তৈরি হয়েছে।

জাকির/ আজকের বাজার