বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অন্তত খারাপ কিছু নেই : ফোরকান উদ্দীন

চাটার্ড একাউন্টেন্ট প্রতিষ্ঠান মসিহ মুহিত হক এন্ড কোম্পানির অংশীদার মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন আজকের বাজার ও এবি টিভির সঙ্গে দীর্ঘ আরাপচারিতায় এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক আরোপ, সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর পর্যবেক্ষণ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইনসেনটিভ হিসেবে খুব বেশি কিছু না থাকলেও অন্তত নেগেটিভ কিছু নাই, এটা কিন্তু ফ্যাক্ট। সরাসরি না হলেও কিছু জিনিস কিন্তু বাজারের জন্য আছে, যেটা আবার অন্য দিকটার জন্য একটু খারাপ। যেমন,আমরা যদি খেয়াল করে দেখি সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর কথা চিন্তা করা হচ্ছে, এটা বাজারের জন্য একটা ভালো দিক। কারণ যখনই সঞ্চয়পত্রের সুদ কমে যাবে, তখন ওই টাকাগুলো হয়তো শেষ পর্যন্ত বাজারের দিকেই চলে আসতে পারে। এক ল বা তার বেশি টাকা ব্যাংকে রাখার ক্ষেত্রে যে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, এগুলো নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে এটা সত্যি। তবে এটার একটা পজিটিভ দিক হলো যে, টাকাগুলো আস্তে আস্তে হয়তো ব্যাংকে না থেকে পুঁজিবাজারের দিকে আসতে পারে। যদি এটা আল্টিমেটলি বহাল থাকে। তাই বলে এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাবো, তা কিন্তু না। কারণ সঞ্চয় তো করতে হবে একটু একটু করে, তারপরে আস্তে আস্তে পুঁজিবাজারে আসবে।

এই দুটো জায়গা ছাড়া পুঁজিবাজারের জন্য সেরকমভাবে আমরা যা আশা করেছিলাম, বিশেষ করে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর ট্যাক্স কমানোর কথা আমরা চিন্তা করেছিলাম, রেভিনিউর উপর কিছু ট্যাক্স যাতে কমিয়ে দেওয়া হয় সেরকম চিন্তা করেছিলাম বা কোম্পানিগুলোকে বাজারে আসার জন্য প্রণোদিত করার জন্য কিছু ইনসেনটিভের কথা আমরা বলেছি। সেই জায়গাগুলোতে সরকার ওইভাবে চিন্তা করেনি, করা হয়তো দরকার ছিলো। তো এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি জুনের ৩০ তারিখ সম্ভবত বাজেট পাশ হবে, এর মধ্যে সরকার চিন্তা করতে পারে। সেটা অবশ্যই পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু হবে। সরকার পুঁজিবাজারের জন্য সেরকম কিছু দেয়নি আবার খারাপ কিছুও করেনি। সবকিছু মিলিয়ে পুঁজিবাজারের জন্য খারাপ কিছু হয়েছে এমন কথা আমরা বলতে পারবো না। হয়তো সরাসরি ভালো কিছু হয়নি কিন্তু ইনডিরেক্টলি কিছু বেনিফিটও আছে।

টেক্সটাইলে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রভাব
এটা সার্বিকভাবে বাজারটাকে হয়তো খুব একটা আঘাত করবে না, কিন্তু কিছুটা প্রভাব আছে, ওই খাতকে কিছুটা হয়তো সাহায্য করবে। যেমন আগে এটা ২০ পার্সেন্ট ছিলো, এখন ১৫ পার্সেন্ট করা হয়েছে। এটা ওই সেক্টরের জন্য একটা ভালো দিক হবে অবশ্যই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেটা ওই খাতকে নির্দিষ্টভাবে সহায়তা করবে , তবে ডেফিনিটলি ওই সেক্টরটাকে যদি কিছুটা সুবিধা দেয়, তাহলে দেখা যাবে যে বাজারের উপরেও কিন্তু কিছুটা পজিটিভ প্রভাব থাকতে পারে।

ব্যাংকের সঞ্চয়ে আবগারি শুল্কে পুঁজিবাজারে প্রভাব
এটাকে আমরা দুইভাবে চিন্তা করতে পারি, আবগারি শুল্ক যেটা দেয়া হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। ঠিক হয়নি এজন্য বলবো যে, এটা কিন্তু অনেক আগে থেকেই ছিলো। ৫০০ টাকা করে ছিলো আমরা জানি। এবছর বিশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত কর আওতামুক্ত সীমা করা হয়েছে, এটা আগেও ছিল। এখন প্রশ্ন হয়েছে যে, এটা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা যে আগেই ছিলো, ৫০০ টাকা ছিলো, এটাও কিন্তু জনগণ সেভাবে জানতো না। মানুষের কিছুটা নলেজের বাইরে, জ্ঞাত অবস্থার বাইরেই কিন্তু এই আবগারি শুল্কটা আদায় করা হতো। এখন প্রশ্ন হলো যে, আবগারি শুল্কটা কী? এটা এক ধরনের সিন বা পাপযুক্ত ট্যাক্স, নিষিদ্ধ জিনিসের উপর যে শুল্কটা রাখে সরকা এটা তাই। আসলে ব্যাংকে টাকা রাখা তো কোনো পাপ না যে তাকে একটা ‘সিন-ট্যাক্স’ দিতে হবে। যাই হোক, এটা অবশ্যই অর্থনীতির জন্য কোনো ভালো দিক বলে আমি মনে করি না, অবশ্য টাকার পরিমাণও যে খুব বড় কিছু তা কিন্তু না। সরকারও যে এখান থেকে খুব বড় অঙ্কের টাকা পাবে তাও না। কিন্তু এটা মানুষের মনে ভীতি তৈরি করার জন্য যথেষ্ট কাজ করে। এতে করে যেটা হবে মানুষের সঞ্চয়ের মানসিকতায় আঘাত লাগবে। সাধারণ মানুষ হয়তো আজকে এটা নিয়ে খুব একটা ভাবতোই না, যদি না ইন্টারেস্ট রেটটা ওরকমভাবে ফল করতো। কিন্তু তার মানে এই না যে, ইন্টারেস্ট রেটটা বেশি থাকবে। সুদের হার কমানোর দরকার আছে। সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের জায়গাগুলোতেও কিন্তু সমন্বয় করার দরকার আছে। আমি এটাও বলছি না যে, ইন্টারেস্ট রেটটা ফল করা ঠিক হয় নাই, ইন্টারেস্ট রেটটা ফল করার খুবই দরকার ছিলো। তবে দরকার ছিলো আবগারি শুল্ক না দেওয়া। বরং যেটা আছে সেটা পুরোপুরিভাবে তুলে দেওয়া উচিত কারণ এটা স্বাভাবিক বিবেচনায় কোনোভাবেই থাকা উচিত নয়। এতে কোনও যৌক্তিক বিবেচনা কাজ করে না। বরং এতে করে অবশ্যই মনস্তাত্ত্বিক কারণে মানুষের সঞ্চয়ের মানসিকতা নষ্ট করার সম্ভাবনা থাকে । যতটা না আর্থিকভাবে তির কারণ হবে তার চেয়ে বেশি হবে কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়ে।

যদি সরকার চিন্তা করে, আমি বিশ্বাস করি এটা সরকার খুব গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করবে, এই শুল্ক ওঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। আমরা চাইবো এটা ওঠে যাক, যাতে করে মানুষের মনে ভীতি তৈরি না হয়, সঞ্চয়ের অভ্যাস নষ্ট না হয়।

সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ঘোষণায় পুঁজিবাজারে প্রভাব
সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর চিন্তা যেটা করা হচ্ছে, এটার ভালো এবং মন্দ দুটো দিকই কিন্তু আছে। যদি আমি পুঁজিবাজারের দিক থেকে চিন্তা করি, তাহলে অবশ্যই এটা একটা ভালো দিক। কারণ টাকাগুলো ওখান থেকে এখানে আসবে। একটা নেগেটিভ দিকও কিন্তু আছে। আমি এই কথাটাকে একটু অন্যভাবে বলতে চাই, যদিও স্বাভাবিক আমরা অর্থনীতির ভাষায় বুঝি যে ব্যাংকের সুদের সাথে সঞ্চয়পত্রের সুদ ২ থেকে ৩ পার্সেন্টের বেশি পার্থক্য হওয়া ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের এখানে এখনও গ্যাপটা অনেক বেশি। সেই হিসাবে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমে আসা উচিত। তাহলে যখনই আমি সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে দিবো, এই টাকাগুলো হয়তো পুঁজিবাজারে আসবে ঠিকই। কিন্তু আপনি খেয়াল করে দেখেন, তার সাথে সাথে পুঁজিবাজারের জন্য যে শক্ত কৌশলগত অবস্থান সরকারের নেয়া উচিত ছিলো, সেই শক্ত স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানে আমরা সরকারকে দেখতে পাইনি। যদিও কোনো নেগেটিভ অবস্থান সরকার নেয়নি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সমন্বয়ের ব্যাপারগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে যদিও এখন অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। যেমন, ব্যাংকগুলোর েেত্র ইনভেস্টমেন্টের এক্সপোজারের যে জায়গাগুলো আছে, সেখানে যেসব ডেফিনেশন আছে, সেগুলো নিয়েও কিন্তু অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। এসব বিষয় পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখা যাবে যে এটা হয়তোবা ভালো দিক হিসেবে কাজ করবে।

আর মন্দ দিক হচ্ছে, যদি পুঁজিবাজারকে আমরা স্ট্র্যাটেজিক্যালি ভালো করতে না পারি, একদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদটাও আমরা কমিয়ে দিই, তাহলে আমাদের দেশে যারা সিনিয়র সিটিজেন আছেন, তাদের কী হবে? তারা তো এখন আর চাকরি করছেন না, তাদের এই সঞ্চয়ের উপায় কী হবে? মধ্যবিত্ত শ্রেণী যাদের হাতে কিছু টাকা-পয়সা আছে তারা কী করবে?

এ পর্যায়ে দুটো দিকের কথা বলা যায়। যেমন, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজনের কাছে কিন্তু বাড়ি বা ফ্যাট কিনে ভাড়া দিয়ে পয়সা পাবে এরকম অবস্থা নেই। তাহলে যদি আমরা ধরে নিই তাদের কাছে সম্পদ মানে ক্যাশ। আর ওই ক্যাশটাকে ব্যাংকে রাখলে একদিকে যেমন আবগারি শুল্ক বাড়ছে অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমে যাচ্ছে। আবার শেয়ারবাজারে আসার পর স্ট্র্যাটেজিক অবস্থার কারণে যদি বাজারটাকে ঠিক রাখা না যায়, তাহলে টাকাটা সেখানেও লস হচ্ছে। তাহলে এই মানুষগুলো চলবে কীভাবে?

সবমিলিয়ে আমার মনে হয়, এই যে আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের সুদ এবং শেয়ারবাজার -এই তিনটাকে একই সূত্রে আনা যায়। এর পর একটা স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানে এসে যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সেটাই আমাদের জন্য শুভ সিদ্ধান্ত হবে। সরকারও সেখান থেকে ট্যাক্স আদায়ের জন্য চেষ্টা করতে পারে। সরকার আসলে এইসব ছোট ছোট জায়গাগুলো থেকে কত টাকা পাবে? আবগারি শুল্ক আরোপ বা সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে কত টাকা পাবে সরকার? কিন্তু যদি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, যে কথাটা সবসময় বলার চেষ্টা করি স্ট্র্যাটেজিক ডিসিশন নেয়ার মতো চিন্তা-ভাবনা সরকারকে করতে হবে। এনবিআরের এইসব বুদ্ধি যখন সরকারকে দেয়া হচ্ছে যে, আপনি আবগারি শুল্ক বসান, আপনি সঞ্চয়পত্রে সুদ কমান, আপনি স্টক মার্কেটের জন্য এগুলো দিয়েন না। তাহলে এনবিআরের এই ‘না’ বলার জায়গাগুলোতে ‘হ্যা’ বলতে হবে। এসব জায়গা অন্তর্ভুক্তি করার পরে সরকার কিছু টাকাও হয়তো পাবে। এসবের জন্য দরকার স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান। আর এই স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানগুলো আসলে কী? যেমন, আপনি যদি বেশি করে ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার ব্যবস্থা করেন, তাহলে সরকারের ট্যাক্স বাড়বে। একটা কোম্পানি যখন তালিকভুক্ত হযে যাবে, তাহলে কিন্তু আট দশটা জায়গা বা কমপক্ষে পাঁচটা জায়গা থেকে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে তার ট্যাক্স আহরণ হয়। কারণ কোম্পানির কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের কারণে, আইনগত কারণে, তালিকভুক্তির কারণে,সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের কারণে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কারণে, ব্রোকারেজ হাউজের কারণে, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য, মার্চেন্ট ব্যাংকের কারণে অর্থ্যাৎ সবমিলিয়ে যে চাঞ্চল্যটা তৈরি হয় তার সব একটা ইস্যুর সঙ্গে জড়িত, একটা আইপিওর সঙ্গে জড়িত।

পাশাপাশি বেশি পরিমাণে আইপিও, ভালো আইপিও বাজারে নিয়ে আসার জন্য যদি মানুষকে প্রণোদিত করা যায় ভালো হয় আর সে প্রণোদনা দিতে হবে ট্যাক্স দিয়ে। যদি আপনি ট্যাক্স দিয়ে প্রণোদিত না করতে পারেন, তাহলে কিন্তু কেউ আকর্ষণ বোধ করবে না, আর বাজারমুখীও হতে চাইবে না। ভালো কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে পারলে অন্তত পাঁচটা খাত থেকে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব সরকার পাবে। সেখানে আবগারি শুল্কের মতো ছোট জায়গাগুলোকে চিন্তা করার খুব একটা প্রয়োজন পড়বে বলে আমি মনে করি না।

পুঁজিবাজারে ব্যক্তি পর্যায়ের কর আরোপের প্রভাব
এটা আসলে খুব দুঃখজনক। যদিও পৃথিবীর কোনো কোনো দেশের কথা আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রীও বলেছেন। আমরাও বলে থাকি, তারা একবার যখন সেট করে দিয়েছে যে, এত টাকার উপরে গেলে আপনাকে ট্যাক্স দিতে হবে। আমাদের এখানে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স ফ্রি সম ব্যক্তিদের জন্য, যারা রিটায়ার্ড এবং যারা ৬০-৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে এবং মেগা করদাতা যারা আছেন, তাদের জন্য একটা আলাদা হার আছে। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করার বিষয়, আমরা যেসব দেশের উদাহরণ টানছি তাদের মূল্যস্ফীতির হার। আমার এখানে যখন বাজেটটা হয়েছে, তখন সরকার নিজেই বলেছে যে, ৫.৫ হারে মূল্যস্ফীতি ধরেই কিন্তু বাজেট হয়েছে। তাহলে কমপে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার আরও ৫.৫ ভাগ যোগ করে ততটুকু পর্যন্ত আমার এক্সাম্পশন হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আসলে আমার ইনফাশন রেট ৫.৫ ভাগ কি এই বাজেটে থাকবে? অবশ্যই না। এই ভ্যাটের কারণে, গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে দেখা যাবে বিদ্যৎ বিল বাড়বে। কারণ ভ্যাট আরোপ হচ্ছে, যেখানে আগে ৪% ছিলো, সেটা এখন বেড়ে ১৫% হবে। এই সবকিছুর কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের উপর যে প্রভাব পড়বে, তাতে করে ইনফাশনের রেট যেটা বাড়ার কথা, আমি হলফ করে বলতে পারি সেটা ৫.৫% এর মধ্যে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি, এরচেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। বেড়ে গেলে তাহলে কমপে ওই পরিমাণেই আমাদের যোগ করে দেয়া উচিত ছিলো অর্থাৎ আমাদের যেখানে আড়াই লাখ টাকা হয়, যদি আমি ৫.৫% যোগ করি, তাহলে আরও প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা আমি পেয়ে যাই। তার মানে দুই লাখ সত্তর-আশি হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় এমনিতেই হওয়া উচিত ছিলো ।

আর বাস্তবভিত্তিক যদি আমি চিন্তা করে দেখি, এটা আসলে তিন ল টাকা হওয়ার কথা। তাহলেই মানুষ শ্বাস নিতে পারবে, না হলে কিন্তু মানুষ শ্বাস নিতে পারবে না। এই ঢাকা শহরে বসবাস করতে গেলে, এক কেজি সবজি কিনতে গেলে ৫০ টাকার কমে কিনতে পারেন না, তাহলে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা এক্সাম্পশন না নিয়ে, এক্সাম্পশন লিমিট দিয়ে আপনি কী করবেন? এক্সাম্পশনের ইমপ্যাক্ট কোথায়? তাহলে ইনফাশন ইমপ্যাক্ট ছাড়া আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে আমরা চিন্তা করি কিভাবে? আমরা কোনো ইনফাশন রেটের ইমপ্যাক্ট দিব না বাজেটে, এটা কতটুকু যৌক্তিক সিদ্ধান্ত, কতটুকু বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য? আজকে আমেরিকা বলতে পারে যে আমি কোনো ইনফাশন ইমপ্যাক্ট দিব না, আজকে জাপান বলতে পারে আমি কোনো ইনফাশন দিব না, আজকে ইউরোপ বলতে পারে আমি কোনো ইনফাশন দিব না, ব্রিটেন বলতে পারে কোনো ইনফাশন দিব না, কিন্তু আমি কি করে বলি? কারণ আমার তো ইনফাশন হচ্ছেই।

চূড়ান্ত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য প্রত্যাশা
বাজেটে এখনো পুনর্বিবেচনার সুযোগ যদি থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা তালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্যাক্স কমানোর কথা বলতে পারি। শুধু কমিয়ে দিলেই লাভ হবে না, কারণ সরকারকেও তো চলতে হবে। ভালো কোম্পানিগুলো যাতে বাজারে আসে, তাদেরকে বাধ্য করার মতো কোনো নীতিমালা যদি আমরা তৈরি করতে পারি ভালো হয়। আমাদের কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের যে জায়গাগুলো আছে, সুশাসনের যে জায়গাগুলো আছে, সেগুলোকে যদি শক্ত করতে পারি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা এইসব আবগারি শুল্ক বা ছোট ছোট জায়গাগুলো থেকে ট্যাক্স পাবো।

কারণ,খেয়াল করলে দেখা যাবে ট্যাক্স দিচ্ছে তারাই খুব বিপদে আছে, যারা দিচ্ছে না তারা আরামে আছে। তাহলে যারা দিচ্ছে আপনি তাদের উপরেই বেশি পরিমাণে চাপ দিয়ে দিচ্ছেন, আর যারা দিচ্ছে না, তারা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে, টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে -সেরকম জায়গাগুলোতে আপনারা ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন আর সেখানে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। আইন বানাচ্ছেন, কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না। এসব জায়গা যদি আমরা ধরতে পারি, তাহলে সেটা ভালো কিছু হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

পুঁজিবাজার নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
এখন পর্যন্ত আসলে সরকার অনেক চেষ্টা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। মাননীয় অর্থমন্ত্রী অন্তত নেগেটিভ কিছু বলেন নি। গত বছরও পজিটিভ কিছু না বললেও নেগেটিভ কিছু বলতে শুনিনি, এর আগেরবারও দেখিনি। এই যে একটা স্থিতিশীল বাজেট, পুঁজিবাজার বিবেচনায় এটা কিন্তু খুবই ভালো। হয়তো আমাকে ভালো কিছু দিতে পারেনি, দেয় নি বা দেয়ার সুযোগ ছিলো না কিংবা এখনও দেয়ার সময় আছে, কিন্তু খারাপ কিছু বলেন নি। এটিও সৌভাগ্যের ব্যাপার। আসলে দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির জন্য বাজেটের এই যে স্থিতিশীল একটা পরিস্থিতি, এটা যেমন খুব দরকার, সাথে সাথে আবার নীতি সহায়তাও দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সমস্যাটা এখন আছে এক্সপোজার লিমিটের, এটাকে যদি আমরা অ্যাড্রেস করতে পারি, এটাই এখন পুঁজিবাজারের উন্নতির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। এক্সপোজার লিমিটের ডেফিনেশন এটার মার্ক টু মার্ক বিশ্লেষণ যেটা করে থাকে সেটা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন যেটা চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংককে ম্যানেজ করার জন্য।

আবার একটু আগে যেটা বললাম যে, স্ট্র্যাটেজিক ওয়েতে ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা, সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া- এসবই এখন দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব রাখার জন্য দরকার। কারণ পুঁজিবাজারে আপনি যদি সরবরাহ ভালো দিতে পারেন, চাহিদার অভাব হবে না । সুতরাং সাপ্লাই ভালো করার জন্য যে প্রণোদনাগুলো দরকার সেগুলো আপনাকে দিতেই হবে। আর তা ট্যাক্সের আয় ছাড়া সম্ভব নয়।

মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন
অংশীদার
মসিহ মুহিত হক এন্ড কোং