বিএনপি’র আচরণ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’র মতো : তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি’র আচরণ এখন ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’র মতো। তিনি বলেন,‘বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায়, আর যখনই নির্বাচনে হেরে যায় তখন তাদের আচরণ‘নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’র মতো। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে তাদের অভিযোগও সেরকম।’ হাছান মাহমুদ আজ দুপুরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তথ্যমন্ত্রী বিএনপিকে এধরণের আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন না করে বাস্তবতাকে মেনে নেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনাদের নেতাকর্মীরা কেন আপনাদের কাছ থেকে সরে গেছেন এবং তার কেন ভোটের দিন মাঠে ছিল না সেই বিশ্লেষণ করুন। তাহলে আপনাদের দল উপকৃত হবে।

তিনি বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হবার পর দেখলাম দুই মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তারা কিছু আজগুবি অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির নেতারা বলেছেন ইভিএম মেশিনে নাকি রাত পর্যন্ত ভোট দেওয়া হয়। ইভিএম মেশিনে যদি এমন সুযোগ থাকতো তাহলে ভোট গ্রহণের হার ২৫ শতাংশ থাকতো না, ৬০ শতাংশের উপরে যেত।

ইভিএম মেশিন নিজেই সব দলের জন্য পোলিং এজেন্টের কাজ করে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন,‘কারো যদি আঙ্গুলের ছাপ না মিলে তবে তার কোনভাবেই ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি সিইসিকেও তা না মেলায় ভোট দিতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দ্বিগুণ ভোট পেয়ে যখন জয়ী হয়েছে তখনতো বিএনপিকে নানা ধরণের অভিযোগ উপস্থাপন করতে হবে। সেটাই তারা করছে বলেন তিনি।

ঢাকা দক্ষিণের চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে চারটা পর্যন্ত সময় কেন লাগলো বিএনপির এমন অভিযোগের ব্যাপারে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা তো বিএনপির মতো গোঁজামিল দিয়ে নির্বাচন শেষ হবার দু’ঘন্টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করিনি। সঠিক ফলাফল ঘোষণার জন্যেই নির্বাচন কমিশন সময় নিয়েছে। বিএনপির এসব অভিযোগ জনগণের কাছে নিজেদের হাস্যস্পদ করেছে। দেশের ইতিহাসে ঢাকা দুই সিটির নির্বাচন অন্যতম একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে।

বিএনপি সবসময় প্রযুক্তিকে ভয় পায় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে যখন প্রথম টেলিভিশন আসে তখন অনেকে বলেছে টেলিভিশন দেখলে ঈমান চলে যাবে। আবার যখন দেশে প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয় তখনও গ্রামে গঞ্জে অনেকে প্রচারণা করেছে এটি ব্যবহার করা যাবে না। এখন কিন্তু পবিত্র হজ্বের অনুষ্ঠান এবং বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতও টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হয়। বিএনপির অবস্থাও হয়েছে সেরকম। ইভিএম মেশিনেও ভোট দেয়া যাবে না বলে বিএনপি প্রচারণা চালাচ্ছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন বাংলাদেশে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হলে তখন তিনি বলেছিলেন এই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সব গোপন তথ্য চলে যাবে। আর সেই সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে আমরা পরে সংযুক্ত হয়েছি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রথম থেকে বলে আসছে ঢাকা সিটির নির্বাচন হচ্ছে তাদের আন্দোলনের অংশ। তাদের আন্দোলন সম্পর্কে মানুষ জানে। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্য পাঁচ’শ ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ভোটার ও নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারসহ অনেককে হত্যা করেছে। সুতরাং, তারা যখন ঘোষণা দেয় এই নির্বাচন আন্দোলনের অংশ তখন মানুষ সেই হাঙ্গামার আশঙ্কা করে। সেই কারণেই অনেকে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। এছাড়াও, বিএনপি প্রথম থেকে ইভিএমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা না চালালে এই উপস্থিতি আরো ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেশি হতো বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ঢাকা দুই সিটির নির্বাচনে কোন কেন্দ্র দখল, বড় কোন হাঙ্গামা হয়নি, সিল মারার কোন ঘটনা ঘটেনি। অতীতে দেখেছি আমাদের দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অনেক হাঙ্গামা, কেন্দ্র দখল ও মানুষ মারা যায়। ঢাকা সিটি করপোরেশনে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ফলে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। শুধুমাত্র দেশের বিচারে নয় উপমহাদেশীয় মানদন্ডেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল অত্যন্ত ভালো একটি নির্বাচন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে যে সরকার সেটা আওয়ামী লীগের সরকার, সরকারের আওয়ামী লীগ নয়। আমাদের মূল ঠিকানা দল। আমরা যারা নির্বাচিত এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবার মূল ঠিকানা হচ্ছে দল। সুতরাং দায়িত্ব পালন করার সময় দলকে গুরুত্ব দিতে হবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ৭৫-এর পরে আমরা অনেক বছর ক্ষমতায় ছিলাম না। বুকে পাথর বেঁধে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। দল কিন্তু অনেক শক্তিশালী ছিল। দলের শক্তি বর্তমানের চেয়ে আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন কোন অংশে কম ছিল না। আজকে পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মধ্যে আলস্য এসেছে। এই আলস্য ঝেড়ে ফেলতে হবে।

দলে অনেক অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকেছে। এদের চিহ্নিত করে তারা যদি দলীয় পদে থাকে তাদেরকে বাদ দেয়া এবং ২০১৪ সালের পর যারা পিঠ বাঁচানোর জন্যে অথবা ক্ষমতার সাথে থাকার জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদেরকে দলীয় পদে দেয়া যাবে না। বিকেলে একই স্থানে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান