বিএনপি’র রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস জনগণ : তারেক রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি’র সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ।

‘জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদেরকে পরাভূত করতে পারবে না’- উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিক্ষকদের জাতীয় সম্মেলনে লন্ডন থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তারেক রহমান।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব-প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রভাবশালী একটি জাতি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই, এই মুহূর্তে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে যুক্তি-তর্কে, অর্থ-বিত্তে, মেধা-মননে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতেই হবে।’

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চেীধুরী, ও রেগম সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সবাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অনেকে বক্তৃতা করেন।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম ভঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগই গ্রহণ করি না কেন, চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে অবশ্যই শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।’

জীবনের শুরুতেই পরিবারের পর কিশোর-কিশোরী-শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকারাই আদর্শ রোল মডেল- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরাই যদি রাষ্ট্র ও সমাজে সম্মান-সংসার নিয়ে টানাপোড়েনে থাকেন, তাহলে একজন শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন কিভাবে সম্ভব!

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে শিক্ষার্থীদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে একজন রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন, সেই শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে রাষ্ট্র এবং সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষকতা পেশা কখনোই ‘উপায়হীন বিকল্প’ কিংবা একটি সাধারণ চাকুরি নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে শিক্ষকতা পেশাকেই আনন্দের সঙ্গে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, তেমন পরিবেশ পরিস্থিতি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র এবং সরকারেরই দায়িত্ব।

অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, স্বাচ্ছন্দময় এবং সম্মানজনক জীবন-মানের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে বিশেষ করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল শিক্ষকের চাকরিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক, লোভনীয় এবং আকর্ষণীয় করে তোলা জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেযারম্যান বলেন, স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসসহ প্রতি বছর বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে বঙ্গভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধান শুভেছা বিনিময় করেন। আমি মনে করি, এ ধরনের দিবসগুলোতে আমন্ত্রিতদের তালিকায় অবশ্যই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের কমপক্ষে একজন করে শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো আবশ্যক। কারণ, রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের ‘রোল মডেল’ শিক্ষকদের সম্মানজনক অবস্থান এবং বিচরণ দেখতে পেলে সেটি অবশ্যই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোজগতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের সম্পর্ক তৈরি করার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র উদাসীন থাকতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‘আমরা প্রায়শই একটি কথা বলি, এটিকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে, ওটিকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে’- একথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন ধারণার সঙ্গে নীতিগতভাবে ভিন্নমত পোষণ করি। কারণ, আমরা যাই বলি না কেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকেই সকল কিছু পরিচালিত হয়। তাই, কোনো কিছুকে শুদ্ধ রাখার জন্য রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা কিংবা রাজনীতির বাইরে রাখা কোনো সমাধান নয়। বরং রাজনীতিটাই শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ হওয়া জরুরি।

তিনি বলেন, প্রচলিত রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন না হলে জনগণের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিএনপি রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল সংস্কারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পক্ষের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করেই জনগণের সামনে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি পেশ করেছে। জনগণের রায় পেলে বিএনপি পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

দেশের সংবিধানে মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন,পলাতক স্বৈরাচার ইচ্ছেমতো কাটাছেঁড়া করে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে প্রায় দলীয় সংবিধানে রূপ দিয়েছে। একইভাবে নির্বাচন কমিশন কিংবা দুদকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অকার্যকর করে দিয়েছে। দুদককে নখদন্তহীন বাঘে পরিণত করা হয়েছে। এমন বাস্তবতায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন, দুদক এবং সংবিধান সংস্কারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সংস্কার কর্যক্রমের সঙ্গে দু’একটি বিষয়ে কিছুটা প্রক্রিয়াগত ভিন্নমত থাকলেও মৌলিক কোনো বিরোধ নেই।

তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, বিএনপি সংস্কার এবং নির্বাচন দ’টিরই পক্ষে। দু’টিই জরুরি। ‘সংস্কার নাকি নির্বাচন’ কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্য-প্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কূটতর্ক করার অপচেষ্টা করলেও দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি কিন্তু ভিন্ন। দেশে কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে ‘নির্বাচন এবং সংস্কারে’র চেয়েও ‘সংসার’ পরিচালনা করাই গুরুত্ত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে দ্রবমূল্যের উর্দ্ধগতি, অপরদিকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর স্বল্প আয়ের মানুষ, এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কাছে সংসার টেকানোই দায় হয়ে পড়েছে।’

তারেক রহমান বলেন, অনেক পরিবারে নীরব হাহাকার চলছে। কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়, জনগণকে ফ্যাসিস্ট আমলের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেওয়া যায় এবং কীভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে আরও সক্রিয় করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়- এসব প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি জানান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যত্ম জরুরি।

এ অনুষ্ঠানে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছড়ানো কিংবা বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’ (বাসস)