নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে সরকারকে আরেক দফা সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই নিয়ে ওই গেজেট প্রকাশে ২৭ বার সময় পেল সরকার।
৮ অক্টোবর রোববার দায়িত্প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে।সকালে ওই গেজেট প্রকাশের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরও চার সপ্তাহ সময় চাইলে তা মঞ্জুর করে নতুন তারিখ ঠিক করে দেয় বেঞ্চ।
এর আগে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারকে আরও ২৬ বার সময় দেওয়া হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি।
এরপর গত ২০ আগস্ট নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার শুনানির জন্য ৮ অক্টোবর রোববার দিন ধার্য করে। তার আগে গত ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত করতে আপিল বিভাগ ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছিল।
এর আগে, অধঃস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য গত ৩ আগস্ট বিকেলে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনমন্ত্রী অসুস্থ থাকার কারণে ওই নির্ধারিত দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
তার আগে ২৩ জুলাই শুনানিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া গ্রহণ করেননি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওইদিন খসড়ার বিভিন্ন ধারার অসংগতি তুলে ধরে ছুটিতে যাওয়া প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, আমার সঙ্গে আলোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, সব অসংগতি দূর হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রণীত এই খসড়ায় সেটার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে রায় দেয়। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।
সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত ২৮ আগস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।
এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আপিল বিভাগ। ১৫ জানুয়ারি সরকার আবার সময় চাইলে তখন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময় দেওয়া হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চম এপ্রিল ও মে মাসেও কয়েক দফা সময় পায় সরকার।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৮ অক্টোবর ২০১৭