বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে আরও ৩ দিন সময়

দেশের নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য আরও এক বার সময় পেল সরকার। শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য সরকারকে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ। এই নিয়ে ওই গেজেট প্রকাশে ৩০ বার সময় পেল সরকার।

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ওই গেজেট প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার ১০ ডিসেম্বর সময় চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ তা মঞ্জুর করে নতুন তারিখ ঠিক করে দেয়।

গত ৩ ডিসেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশে সরকারকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল আদালত।

এর আগে, গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, শৃঙ্খলা বিধিটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) চলে গেছে বলে আমি জানি। আমি আশা করছি, আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে এ গেজেট প্রকাশ হবে।

সরকারের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সিনহা।

শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

এরপর বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি আপিল বিভাগে উঠলে দুই দফায় ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। গত ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হয়েছে।

উল্লেখ, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা প্রণয়ন না হওয়ায় আপিল বিভাগের নির্দেশনায় ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলাবিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট এ বিষয়ে শুনানিকালে আপিল বিভাগ বলেন, একটি খসড়া ডিসিপ্লিনারি রুলস তারা (সরকার) দাখিল করেছে। এটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এখন আমরা কমিটি করে একটি রুলস তৈরি করে দিয়েছি।

এটির আলোকে শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আপিল বিভাগকে জানাতে সরকারের প্রতি নির্দেশনা ছিল। কিন্তু শৃঙ্খলাবিধির ওই গেজেট জারি না হওয়ায় আপিল বিভাগ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এর পর গেজেট প্রকাশের জন্য সময় চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রতিবারই আদালত এসব আবেদন মঞ্জুর করেন, আজ যার ধারাবাহিকতায় আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হল।

সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় আপিল বিভাগ। ১৫ জানুয়ারি সরকার আবার সময় চাইলে তখন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময় দেওয়া হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এপ্রিল ও মে মাসেও কয়েক দফা সময় পায় সরকার।

আজকের বাজার:এলকে /এলকে ১০ ডিসেম্বর ২০১৭