নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে শক্তিশালী সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির দাবিতে বিজয় দিবসে বিজয় সাইকেল র্যালির আয়োজন করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন মুভমেন্ট, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্ট।
রোজ শুক্রবার সকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে পুনরায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এসে র্যালি শেষ হয়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা সাইক্লিস্ট নারী পুরুষ সমবেত হয়ে ঐতিহ্য বাহনে নানা রঙের বেলুন, গায়ে লাল-সবুজ রঙের টি শার্ট আর হাতে স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে অংশ নেন র্যালিতে। বাদ্যযন্ত্রের মুহুর্মুহু তালে ও নৃত্য শিল্পীর পরিবেশনায় সাইক্লিস্টদের কণ্ঠে সমস্বরে বেজে ওঠে, আমার সোনার বাংলাদেশ সবার চাইতে বেশ।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, পরিবেশ ও সচেতনতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পরিবেশবিদ মোঃ মাহফুজুর রহমান।
সভাপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম টুববুস।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন নাজিম, মিরপুর স্টান্ট বয়েজের সভাপতি মোহাম্মাদ আলী রিমন, লেখক ও ট্যুরিস্ট গবেষক রফিকুল ইসলাম, বিডি ক্লিকের উপদেষ্টা সদস্য মো. মুসা, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি শহীদুল মাহমুদ শহীদুল্লা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সম্প্রতি মিশরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন (COP 27) এ জাতি সংঘের বর্মান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর “ বিশ্ব এখন জলবায়ু-নরকের মহাসড়কে রয়েছে” উদ্ধৃত করে বলেন আমাদেরকে আবশ্যই পরিবেশ দূষণমুক্ত করে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তণ রোধে মনোযোগী হতে হবে।
তিনি বলেন অসময়ে বন্যা ঘূর্ণীঝড় যে হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তণের কারণে।
তিনি বলেন যে আজ ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ চলে যাচ্ছে শীতের কোন দেখা নাই, অথচ অতীতে এ সময়ে শীতের কাপড় ছাড়া এখানে কেহ দাঁড়িয়ে থাকার কোন সুযোগ ছিল না। এর থেকেই সহজেই অনুমিত যে পৃথিবীর তাপমাত্রা কত বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুতরা্ং আমাদেরকে অবশ্যই জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি সাইকেলের ব্যবহার প্রসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য থাকা কালে একটি পৃথক সাইকেললেন স্থাপনসহ সাইকেল চালানোর সুবিধা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেন সাইকেল শুধু পরিবেশ সুরক্ষা দেয় না, সাইকেল সুস্বাস্থ্যও গঠন করে।একজন সাইকেল চালক ডায়াবেটিস হতে শুরু করে বহু রোগের আক্রান্ত হতে রক্ষা পায়। তাই সাইকেল প্রসারে যে কোন অনুষ্ঠান ও র্যালীতে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ভাবে অংশগ্রহনের কথা জানান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির,
তিনি বলেন পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান এজেন্ডা। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন যা তাঁর বক্তৃতা, বিবৃতি ও কর্মকান্ডে প্রতিফলিত হচ্ছে।
তিনি বলেন আমি সাইকেলের ব্যবহারের প্রতি একাত্ব ঘোষণা করছি এবং ঢাকা শহরে আলাদা সাইকেল লেন বাস্তবায়ন ও সবস্থানে সাইকেল পার্কিং স্থাপনের জন্য সিটি কর্পারেশনের মেয়রদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং গ্রীণ পেইজ এর প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট পরিবেশবিদ মোঃ মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্ব আজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার হুমকীর সম্মূখীন। মানুষের সীমাহীণ লোভ লালসা, বড় হতে আরো বড় হওয়ার স্বপ্ন এবং অত্যাধিক আরাম প্রিয়তা মানুষকে আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং অত্যাধিক শিল্প উৎপাদনের ফলে শিল্প, রাসায়নিক এবং নতুন ভাবে শুরু হওয়া ইলেকট্রনিক বর্জ্যে পৃথিবীর পরিবেশ আজ মারাত্বক দূষিত হচ্ছে। শিল্পে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, কৃষিতে এবং জ্বীবাশ্ম জ্বালানী তথা ডিজেল, প্রেট্রোল, অকটেন চালিত মোটর গাড়ী ব্যবহারে দিন দিন বায়ু মন্ডলে গ্রীণ হাউজ গ্যাস (মিথেন, কার্বণ ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি)এ নি:সরণ দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসা বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু এবং বাঙ্গালী জাতির সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রতি সন্মাণ প্রদর্শণ করে এবং বলেন আজ বিশ্ব পরিবেশ যে চরম আকার ধারণ করেছে তা দূষণমুক্ত করে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার কাজে আমাদেরকে আবার একটা যুদ্ধ শুরু করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্ট এর সভাপতি, ম. আমিনুল ইসলাম টুববুস প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি,সহ উপস্থিত সর্স্তরের সুধীবৃন্দ এবং অংশগ্রহনকারী সাইক্লিস্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন
তিনি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সাইকেল ব্যবহার প্রসারে সাইকেল র্যালীসহ এতদসংক্রান্ত আন্দোলন দিন দিন স্থিমিত হয়ে যাচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং
বাঙালির জাতিসত্তার আন্দোলনের সূতিকাগার শহিদ মিনার থেকে বিভিন্ন বয়সী সাইক্লিস্টদের নিয়ে গৌরবময় বিজয় সাইকেল র্যালি আমরা আয়োজন করেছি। তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতনতা ও দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধকরণের প্রয়াস অব্যহত থাকার সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করে
ভবিষ্যতে এ আন্দোলনেকে বেগবান করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সাবিকুন্নাহারের মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনায় ছিলেন নৃত্য শিল্পী ও অভিনেত্রী নাহার কনা ও তার দলের শিশু শিল্পীরা।