বিজয়ের ৪৬তম বছরপূর্তি: উদযাপনে প্রস্তুত জাতি

১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। আর এ দিনটিকে বাংলাদেশ পালন করে আসছে মহান বিজয় দিবস হিসেবে।

শনিবার ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ পালন করবে বিজয়ের ৪৬তম বর্ষপূর্তি। এ অঞ্চলের মানুষের হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন হিসাবে সারাদেশে পালিত হবে বিজয়ের এ দিনটি।

৩০ লাখ প্রাণ, হাজারো নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ নামের ভূ-খণ্ডের নাগরিকরা সেই শহীদ ও মা-বোনদের স্মৃতির প্রতি জানাবে তাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।পাশাপাশি বিজয়ের দিনটি স্মরণে বের হবে আনন্দ র‌্যালি। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, শোষণহীন একটি সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বীরের জাতি হিসাবে নিজেদের আরও উচ্চতায় আসীন করতে নতুন করে শপথ নিবে এদেশের সর্বস্তরের জনগণ।

 এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ধোয়া মোছা শেষে রং তুলির আঁচড়ে বর্ণিল রূপ ধারণ করেছে মহান এই স্থাপনাটি। ইটের দেয়াল থেকে শুরু করে বাগানের ঘাসকেও সাজানো হয়েছে পরিপাটি রূপ দিয়ে।

শ্রদ্ধা নিবেদন নির্বিঘ্ন করতে এবার জঙ্গি হামলার আশংকাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। এজন্য পুরো জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকা থাকবে নিরাপত্তার চাদরে। সিসি টিভি ক্যামেরা দিয়েও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত।

মহান বিজয় দিবসে উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

কর্মসূচি : ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তববক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ১০ টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।

এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। শের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সমূহে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি , জাসদ , সিপিবি , ওয়াকার্সপার্টি , গনফোরাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।

আজকের বাজার: এলকে/ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭