মায়ানমারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সে দেশের সরকারের প্রয়াসকে চীন সমর্থন করে। মায়ানমারের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের উপনেতা গুয়ো ইয়েঝু গতকাল এ কথা বলেছেন। মায়ানমারে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বিদেশী হস্তক্ষেপ ফলপ্রসূ হয় না। খবর রয়টার্স।
মায়ানমার বাহিনীর বর্বরতা থেকে বাঁচতে গত আট সপ্তাহে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ছয় লাখ মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মায়ানমার সরকারের পদক্ষেপকে জাতিসংঘ জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে অভিহিত করেছে। বর্বর এ অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার মায়ানমারের সামরিক নেতৃত্বকেই দায়ী মনে করে বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র মায়ানমারের পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে।
বেইজিং বরাবরই মায়ানমারের দমন-পীড়নে সমর্থন জুগিয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের আন্তর্জাতিক বিভাগের উপনেতা গুয়ো ইয়েঝু বেইজিংয়ের পুরনো নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, রাখাইনে বিভিন্ন হামলার নিন্দা জানিয়েছে চীন। সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মায়ানমারের প্রয়াসগুলো চীন বোঝে এবং সমর্থন করে।
গুয়ো ইয়েঝু বলেন, চীন ও মায়ানমারের সম্পর্ক গভীর ও পুরনো। চীনের বিশ্বাস, মায়ানমার নিজেই তার সমস্যাগুলো মেটানোর সামর্থ্য রাখে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীনের নীতি হলো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে আমরা বহির্দেশীয় হস্তক্ষেপের পরিণতি দেখেছি। আমরা তা করব না।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ঊর্ধ্বতন এ নেতা বলেন, চীন ময়ানমারে অস্থিতিশীলতা দেখতে চায় না। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ স্থলসীমান্ত থাকায় মায়ানমারে অস্থিতিশীলতার প্রভাব অনিবার্যভাবে চীনের ওপরও পড়বে।
মায়ানমারে পাঁচ দশকের সামরিক শাসনে জান্তা সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে চীন। অং সান সু চি মায়ানমারের নেতৃত্বে আসার পর দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্কোন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগ। চীন সরকার নয়, এ বিভাগের আমন্ত্রণেই ২০১৫ সালে সু চি বেইজিং সফর করেন। বিভাগীয় প্রধান জং তাও গত আগস্টে মায়ানমার সফরে গিয়ে সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মায়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে গুয়ো ইয়েঝু বলেন, পরস্পরের বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ভিত্তিতে এ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
এর আগে গত মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঈ মিয়ানমারের প্রতি তার সরকারের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন। ওয়াং ঈ বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মায়ানমার সরকারের প্রয়াসকে চীন সমর্থন করে।
মায়ানমারে, বিশেষত রাখাইন রাজ্যে চীনের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে রাখাইন উপকূল হয়ে ময়ানমারের মধ্য দিয়ে চীনে যাওয়া ৭৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে। এ পাইপলাইনের সুবাদে মধ্যপ্রাচ্য ও ককেশাস অঞ্চল থেকে তেল চীনের ভূবেষ্টিত ইউনান প্রদেশে দ্রুত ও স্বল্প খরচে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। রাখাইন উপকূলে নির্মিতব্য কিউক ফু বন্দরের ৮৫ শতাংশ মালিকানা নিয়েছে চীন। ওই বন্দরের সঙ্গে ইউনান প্রদেশের সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে চীন দীর্ঘ রেললাইন স্থাপনেও কাজ করছে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২২ অক্টোবর ২০১৭