বিদেশেও সুনাম ছড়াচ্ছে যশোরের ‘বড়ি’

চাল কুমড়া, কলাই, কচু, পেঁপে, মূলাসহ নানা খাদ্য দ্রব্যের সংমিশ্রনে বিশেষভাবে ‘বড়ি’ তৈরি হয়। যশোরের মনিরামপুরে তৈরিকৃত বড়ি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা এখন ঢাকা, খুলনা এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ ইউরোপ, আমেরিকায় পাঠানো হচ্ছে। মণিরামপুর পৌর এলাকার হাকোবা, জুড়ানপুর দাসপাড়া ও উপজেলার ভবানিপুর, দেবিদাসপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ পরিবারের নারীরা ‘বড়ি’ তৈরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এতে করে এসব এলাকার নারীরা একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অপরদিকে পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক সময় নিজেদের জন্য ও অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসেবে প্রস্তুত করা হয়ে থাকলেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘বড়ি’ তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে মণিরামপুরে তৈরিকৃত বড়ির বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেয়ে এটিকে একটি শিল্পে রূপ দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয়রা। হাকোবা গ্রামের কুন্ডু পাড়ায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানকার বিভিন্ন বয়সী নারীরা ‘বড়ি’ তৈরিতে ব্যস্ত। নারীদের পাশাপাশি পরিবারে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা এমনকি পুরুষরাও ‘বড়ি’ তৈরির কাজ করছেন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘বড়ি’ তৈরি করে নারীরা নিজেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বন্ধনা রানী, সাবিত্রী, শুক্লা, রুপাসহ বেশ কয়েকজন নারী জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী ৭২-৭৩ সালের পর থেকে তারা এ এলাকায় ‘বড়ি’ তৈরি করে আসছেন। শুরুতে যারা ‘বড়ি’ তৈরির সাথে জড়িত ছিলেন আজ তারা অনেকেই জীবিত নেই।

তারা বলেন, ‘চাল কুমড়া, কলাই (ঠিকরি কলাই), কঁচু, পেঁপে, মাস কলাই ও প্রয়োজনমত পানি দিয়ে ঢেঁকি বা মেশিনের সাহায্যে ভালোভাবে গুড়া করা হয়। এবার হাত দিয়ে ভালোভাবে ফাটিয়ে রোদের মধ্যে পাতলা কাপড়ের ওপর নজর কাড়া এক বিশেষ কায়দায় হাতের কারুকার্যে ‘বড়ি’ দেয়া হয়। ‘বড়ি’ তৈরির আগের দিন কলাই মেশিনে ভাঙিয়ে খোসা উঠিয়ে ডাল বানিয়ে নরম করার জন্য তা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় বলেও জানান তারা। এছাড়া ‘বড়ি’ তৈরির জন্য মেঘমুক্ত আকাশ এবং পর্যাপ্ত রোদ থাকা একান্ত প্রয়োজন। ‘বড়ি’ ভালোভাবে শুকানো পর্যন্ত রোদে রাখা হয়। এরপর শুকানো ‘বড়ি’ বাজারজাত করা হয়।’

বয়োবৃদ্ধা কাকলী কুন্ডু বলেন, তার বাবার বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। সেখানে অনেক আগে থেকেই ‘বড়ি’ তৈরি হতো। তারপর হাকোবা গ্রামে বউ হয়ে আসার পর নিজের পরিবারের জন্য ‘বড়ি’ তৈরি করেন। কিন্তু কাকতলীয়ভাবে ফুলতলার অনেক মেয়েরই এই গ্রামে বিয়ে হয়। নিজেদের পরিবারের জন্য তৈরি ‘বড়ি’র স্বাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপকহারে ‘বড়ি’র চাহিদা বেড়ে যায়। মূলত চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বাণিজ্যিকভাবে ‘বড়ি’ তৈরি শুরু হয়। কুমড়া-বড়ি ব্যবসায়ী মধুসূদন কুন্ডু বলেন, আগে থেকেই পাইকারি ক্রেতাদের কাছ থেকে বড়ির অর্ডার নেয়া হয়। তারপর হাত বদলের পর ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। এমনকি মণিরামপুরে তৈরি বড়ি এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা কিনে ভারতে রপ্তানি করছে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের মাধ্যমে বড়ি নিয়ে যান। প্রতি কেজি বড়ি মান-ভেদে ২০০-২৫০ দরে বিক্রি করা হয়। কলাইয়ের ডাল, চাল কুমড়াসহ ‘বড়ি’ তৈরির কঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে লাভের পরিমান কিছুটা কমে এসেছে বলে তিনি জানান। তবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে প্রচার-প্রসার ঘটলে ‘বড়ি’ বিদেশে রপ্তানি হলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ‘বড়ি’ তৈরির পেশায় জড়িতদের দাবি। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান