গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৪ শতাংশের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ গণশুনানিতে অংশ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৪.৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে আয়োজিত ধারাবাহিক গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে পিসিবি চেয়ারম্যান এই প্রস্তাব করেন।
পিডিবির আবেদনে বলা হয়, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরে খুচরা সর্বরাহ ব্যয় ইউনিট প্রতি ৬.৯৫ টাকা। বিদ্যমান খুচরা বিদ্যুৎ মূল্যহার ইউনিট প্রতি ৬.৭৩ টাকা। সে তুলনায় ইউনিট প্রতি ঘাটতি ০.২১ টাকা। প্রস্তাবিত বাল্ক ট্যারিফ বৃদ্ধি পাস থ্রু এবং পূর্ববর্তী খুচরা ট্যারিফ ঘাটতি বিবেচনায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জোনসমূহের ইউনিট প্রতি খুচরা ট্যারিফ হার ১৪.৫%।’
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম সভাপতিত্বে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের দাম ১০.৬৫ শতাংশ বা ৭২ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। একই সাথে ২০১৬-১৭ বছরের হিসাবকে ভিত্তি ধরে পিডিবির প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি চলতি বছরের জন্য পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৫৭ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করে।
খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরে ট্যারিফ নির্ধারণে মোট বিতরণ লস ১১ শতাংশ বিবেচনা করা হয়েছে। খুচরা ট্যারিফের পূর্ববর্তী ঘাটতি ৩ শতাংশ ও প্রস্তাবিত বাল্ক ট্যারিফ বৃদ্ধি সাড়ে ১২ শতাংশ বিবেচনা করো হয়েছে। বর্তমানে ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে ঘাটতি থাকায় প্রতি ইউনিটে ৩ শতাংশ হারে লোকসান দেয়া হচ্ছে। শুধু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ কারণে দাম বাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলতি অর্থবছর বা ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পিডিবি পাইকারি বিদ্যুতের প্রাক্কলিত সরবরাহ ব্যয় ধরেছে ইউনিট প্রতি পাঁচ টাকা ৯৯ পয়সা। এ হিসেবে ইউনিট প্রতি লোকসান হবে এক টাকা নয় পয়সা। এই বিপুল আর্থিক ক্ষতি সমন্বয় করার জন্যই পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত।’
গণশুনানিতে উপস্থিত ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড যেসব ব্যয় বিবেচনা করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে, তার কারণে ভোক্তাদের ওপর আলাদা চাপের সৃষ্টি হবে। একেতো বন্যা তার ওপর খাদ্যমূল্যের বৃদ্ধি হচ্ছে দিন দিন। এভাবে প্রতি বছরই বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের ওপর আলাদা চাপ তৈরি হয়। বিদ্যুতের দাম প্রতি বছর বাড়লেও জনগণের আয় কিন্তু বাড়ছে না।’
গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ আরো কয়েকটি বিভাগকে এই বছরের মধ্যেই শতভাগ প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা এবং গ্রাহকদের এনার্জি চার্জের ওপর ২ শতাংশ রিবেট প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয় পিডিবি থেকে। তবে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি উদ্যোগটির সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করে রিবেটের পরিমাণ ১ শতাংশ করার পাল্টা প্রস্তাব রাখেন।
গণশুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভুইয়া, আব্দুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান প্রমুখ।
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭