বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেল জাহালম

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে অবশেষে মুক্তি লাভ করেছেন আলোচিত জামালপুরের জাহালম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় নিরাপরাধ জাহালম তিন বছর কারাভোগের পর সোমবার রাত ১টায় কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ থেকে মুক্তি লাভ করেন।

এসময় কারাফটকে জাহালমের ভাই সাহানুর মিয়াসহ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে রবিবার অব্যাহতি দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ওই দিনের মধ্যেই মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়।

আদালতের নির্দেশের পর এ সংক্রান্ত কাগজপত্র কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে রাত ১টায় তাকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, রাতে জাহালমের মুক্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে এসে পৌঁছে। পরে তা যাচাই বাছাই ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে ওই কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এর আগে গত ২০১৬ সালের ৬ জুন তাকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জাহালমকে। পরে ওই বছরের ২৭ মে তাকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

মুক্তি লাভের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাহালম বলেন, দুদুকের ভুলে তিনি বিনা কারণে তিন বছর জেল খেটেছেন। তাই দুদকের কঠিন বিচার চাই। সঠিক তদন্ত করে যেন আসামি ধরা হয় এই আহবান জানান তিনি।

জাহালমের ভাই সাহানুর মিয়া বলেন, যাদের ভুলের কারণে তার ভাই জেল খেটেছে তাদের বিচার এবং ক্ষতি পূরণ চাই।

কারা ফটক থেকে ভাই জাহালম বেরিয়ে আসায় খুশিতে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে একটি মাইক্রোবাস করে বাড়ির উদ্দেশে ভাইকে নিয়ে রওয়ানা করেন।

গত ২৮ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে: ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শিরোনাম একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলায় নিরপরাধ জাহালমের জেলখাটার প্রসঙ্গ তোলা হয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন এবং আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছিলেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।

এরপর ওই প্রতিবেদনটি গত সোমবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অমিত দাসগুপ্ত।

এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মইনুল ইসলাম, দুদকের মামলার বাদী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়রে সচিবের একজন প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের মনোনীত প্রতিনিধিকে গতকাল রবিবার তলব করেন আদালত। সকালে ওই চারজন হাইকোর্টে হাজির হন।

শুনানিতে আদালত জাহালমের কারাভোগের ঘটনাকে আরেকটি ‘জজ মিয়া নাটক’ উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে দুদককে অবশ্যই স্বচ্ছতার সঙ্গে করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি দুদকের মামলা থেকে নিরাপরাধ জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে ওইদিনই তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ