ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৫৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জিতেছে রংপুর রাইডার্স। অবশ্য এমনও বলা যায়, মহারণে ঢাকাকে হারিয়েছেন ক্রিস গেইল!
ক্রিস গেইলে প্রতিপক্ষের ভয়টা ছিল আগে থেকেই। যে রংপুর আসরের শুরুতে ধুঁকছিল, তারাই খোলস পাল্টে ফেলল গেইলের আবির্ভাবের পরপর। ম্যাচের মোড় যেমনি ঘুরাতে পারে একটি শট কিংবা একটি ডেলিভারি, তেমনি ক্রিস গেইল মোড় ঘোরালেন পুরো টুর্নামেন্টেরই। রীতিমতো খাদের কিনারা থেকে রংপুর রাইডার্সকে তুললেন শীর্ষ চারে, পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ দল করে। দু-দু’টি কোয়ালিফাইং ম্যাচ খেলে মাটি কামড়ে নিশ্চিত হল ফাইনাল। টানা তিন দিন মাঠে নামার বিরল পেশাদারিত্বের প্রমাণের সাথে সমর্থকদের চাপ আর প্রতিপক্ষের দর্শক ঠাসা গ্যালারি- সবকিছুকে হারিয়ে ক্রিস গেইল একাই চ্যাম্পিয়ন করলেন রংপুর রাইডার্সকে।
ঢাকার মাটিতে রান পায় না বিপিএল- ক্রিকেটপ্রেমীদের এমন অনুযোগ যেন শুনতে পেলেন ক্রিকেট দেবতা। আর তাই শেষ চারের মঞ্চে রান ফোয়ারা কাকে বলে এবং তা কত উপায়ে দেখা যেতে পারে- সম্ভাব্য সব উপায়ই দর্শন করাল ক্রিকেট দেবতার রসিকতা। অবশ্য এক্ষেত্রে রসিক ক্রিকেট দেবতার কৃতিত্বকে খাটো করে দেখতেও পারেন ক্রিস গেইল। একপেশে ফাইনালে বলার মতো মারকুটে ব্যাটিং যে দেখিয়েছেন একমাত্র তিনিই!
টস জিতে ফিল্ডিং। গুঞ্জনের শুরু তখনই- ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন না তো সাকিব আল হাসান? আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জনসন চার্লসকে ব্যক্তিগত ৩ এবং দলীয় ৫ রানে ফিরিয়ে সাকিব নিজেই জানালেন, ভুল নয় তার সিদ্ধান্ত। তবে তার সেই জানানোতেই যে ছিল খাদ, সেটি কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন টি-২০ ফরম্যাটের সবচেয়ে আবেদনময়ী ব্যাটের মালিকদ্বয় ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
ধীর-স্থির শুরু। একপ্রান্ত আগলে রাখলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ক্রিস গেইল তখনও ছন্দ খুঁজে পাননি। ঢাকার বোলাররা ইনিংসের প্রায় অর্ধেক ওভার পর্যন্ত ম্যাচ রাখলেন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে এর পরই শুরু ‘গেইল শো’! বলকে সীমানা ছাড়া করছিলেন দৃষ্টিনন্দন সব শট হাঁকিয়ে। তাও শটগুলোর যেন আবার চারের চেয়ে ছক্কায় পরিণত হতেই স্বাচ্ছন্দ্য বেশি!
শেষমেশ গেইল আর ম্যাককালাম মাঠ ছেড়েছেন অপরাজিত থেকেই। তার আগে ৬৯ বল মোকাবেলা করে ১৪৬ রানের (১৮ ছক্কা, ৫ চার) ইনিংস খেলেছেন গেইল, যে ইনিংস খেলার পথে ছুঁয়েছেন বিপিএলের ছক্কার শতক, ইনিংসে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এবং সবচেয়ে বেশিবার ইনিংসে দশটিরও বেশি ছক্কা হাঁকানোর কীর্তি। সেই সাথে বিপিএলের হাজারী ক্লাবেও টুক করে ঢুকে পড়েছেন ইতিহাসের প্রথম বিদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৪৩ বলে ৫১ রানের ৩ ছক্কা, ৪ চার কার্যকরী কিন্তু স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংস খেলে ম্যাককালাম যেন ছিলেন গেইলের ছায়া হয়ে।
২০৭ রানের লক্ষ্য পূরণ যেকোনো দলের জন্যই বেশ কঠিন, বিশেষ করে ম্যাচটি যখন শিরোপা নির্ধারণী। খরুচে বোলিংয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল ব্যাট হাতে। তবে ঢাকার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ সেখানেও। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই মাশরাফির দুর্দান্ত ডেলিভারি পায়ে লাগিয়ে সাজঘরে মেহেদী মারুফ। এভিন লুইস এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন জো ডেনলিকে, তাতে নিজের প্রথম শিকার পেয়ে গেলেন সোহাগ গাজী। দলীয় ১৯ রানের এভিন লুইসকে গাজীর বলে তালুবন্দী করলেন অধিনায়ক মাশরাফি; আর দলীয় ২৯ রানে কাইরন পোলার্ডকে তালুবন্দী করেন গেইল, রুবেল হোসেনের বলে।
৪.৪ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ঢাকা তখন দিশেহারা। তবে এতো সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন সাকিব! ক্রিজে নেমে দলের হাল ধরলেন জহুরুল ইসলামকে সঙ্গী করে। তবে ১৬ বলে ২৬ রান করে সাকিব সাজঘরে ফিরলে সে যাত্রায় রতিরধ ভাঙে। সাকিবের বিদায়ের পর আউট হন মোসাদ্দেক হোসেন ও শহীদ আফ্রিদিও। সুনীল নারাইনকে সঙ্গে নিয়ে শেষদিকে সম্মানজনক সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন জহুরুল ইসলাম। তবে তাতে শুধু নিজের হাফ-সেঞ্চুরিটাই পেয়েছেন জহুরুল। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে শিরোপা খোয়ানো দলটির সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৯।
আর এতে ৫৭ রানের জয় পেয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপার স্বাদ পায় রংপুর রাইডার্স।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
রংপুর রাইডার্স– ২০৬/১ (২০ ওভার) (গেইল ১৪৬*, ম্যাককালাম ৫১*; সাকিব ২৬/১)
ঢাকা ডায়নামাইটস– ১৪৯/৯ (২০ ওভার) (জহুরুল ৫০, সাকিব ২৬; নাজমুল ৮/২, উদানা ২৫/২)
ফল- রংপুর রাইডার্স ৫৭ রানের ব্যবধানে জিতে শিরোপাজয়ী।
ম্যাচসেরা : ক্রিস গেইল
আজকের বাজার: সালি/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৭