কয়েক সপ্তাহ আগেও শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের একক রাজত্ব ছিল। সার্বিক লেনদেনের প্রায় অর্ধকেই ছিল ব্যাংক খাতের দখলে। আবার শেয়ার দরেও ব্যাংক খাতের দাপট ছিল অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ যাবত ব্যাংক খাতের সেই একক রাজত্ব বিলীন হতে শুরু করেছে। ব্যাংক খাতের জায়গা দখল করে নিচ্ছে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতসহ অন্যান্য খাতের কোম্পানি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) সার্বিক লেনদেন পর্যালোচনায় এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত লেনদেনের ৩৫ শতাংশের বেশি ছিল ব্যাংক খাতের শেয়ারের। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ৫২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু নভেম্বর মাস থেকে ব্যাংকের সেই দাপট কমতে শুরু করে। এখন ব্যাংক খাতে লেনদেন এক-চতুর্থাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। সমাপ্ত সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার ডিএসইর লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ছিল সাড়ে ২৩ শতাংশের নিচে। এদিন প্রকৌশল ও বস্ত্র খাতের লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
শুধু লেনদেন নয়, শেয়ারের দর পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একই রকম অবনতি দেখা যাচ্ছে। লেনদেন কমার পাশাপাশি কমছে ব্যাংকের শেয়ার দর। অন্যদিকে বস্ত্র, প্রকৌশল ও অন্যান্য খাতে কোম্পানির লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি শেয়ার দরও বাড়ছে।
সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সমাপ্ত সপ্তাহে (নভেম্বর ২৬-৩০) ডিএসইতে ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছে ১০২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা মোট্ লেনদেনের ২৬.৬৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে (নভেম্বর ১৯-২৩) লেনদেন হয়েছে ১৬২৩ কোটি ২১ লাখ টাকা বা মোট্ লেনদেনের ৩৪.৬৩ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে অর্থাৎ নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে (নভেম্বর ১২-১৬) ডিএসইতে ব্যাংক খাতে লেনদেন ছিল ১৯০০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ৪০.৫৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, সমাপ্ত সপ্তাহে (নভেম্বর ২৬-৩০) ডিএসইতে ব্যাংক খাতের শেয়ারের সার্বিক দর কমেছে ০.৩২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে (নভেম্বর ১৯-২৩) ব্যাংক খাতের শেয়ারের সার্বিক দর কমেছে ০.৭৩ শতাংশ।
অপরদিকে, সমাপ্ত সপ্তাহে ডিএসইতে প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৫২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৩.৬২ শতাংশ। আর বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১১.৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৪৪৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৯.২১ শতাংশ। আর বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬.৭৫ শতাংশ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায় অনুষদ বিভাগের ডিন ও শেয়ারবাজার বিশ্নেষক মোহাম্মদ মূসা বলেন, মালিকানা বদলসহ নানা ইস্যুতে গত মে মাসের পর থেকে ব্যাংক খাতের শেয়ারে বড় জোয়ার এসেছিল। এখন তাতে ভাটা পড়ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ অনেকে ব্যাংকের শেয়ার দর বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছেন। এ কারণে এসব শেয়ারের লেনদেন ও বাজার দর কমছে।
মোহাম্মদ মূসা বলেন, গত ছয় মাসে সিটি, ইস্টার্নসহ বেশ কিছু ব্যাংকের শেয়ার দর দ্বিগুণ হয়েছে। এখন বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলছেন। সে কারণে এগুলোর দর কমছে। তবে যতটা কমতে পারত, ততটা এখনও দর সংশোধন হয়নি। এটা শেষ হলে অন্যান্য খাতে লেনদেন বাড়বে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২ ডিসেম্বর ২০১৭