অপেক্ষার প্রহর শেষ করে বেজে উঠেছে বিশ্বকাপের ঘড়ির ঘন্টা। বিশ্বকাপের উন্মাদনায় পুরো ফুটবল বিশ্ব কাপছে। প্রত্যেক দলেই কিছু মূল্যবান বা কিছু নামি-দামি খেলোয়াড় থাকে। এবারের বিশ্বকাপেও এমন কিছু সুপার স্টার খেলোয়াড় খেলবেন, মূলতঃ স্টার খেলোয়াড়দের উপরই দলের ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করছে।
দেখে নিন সেরা ১০ খেলোয়াড়কে
১. লিওনেল মেসি :বিশ্বের সেরা অ্যাটাকিং লাইনআপসহ মোটামুটি একটা দল পেয়েও মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা যেন কল্পনা করা দায়। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেই প্রমাণ হয়েছিল মেসি কি আর্জেন্টিনার জন্য। একাই দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনাল পর্যন্ত। ১৭-১৮ মৌসুমে দলীয় সাফল্যর সাথে সাথে ব্যক্তিগত সাফল্যও হাতে এসে ধরা দিয়েছে মেসিকে। দলীয়ভাবে জিতেছেন লা-লিগা আর কোপা দেল রে ট্রফি। জিতেছেন লা-লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পিচিচি ট্রফি ও ইউরোপের সর্বোচ্চ গোল দাতার পুরস্কার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু। দীর্ঘ ৩২ বছরের বিশ্বকাপ না পাওয়ার আক্ষেপ মেটাতে এই মেসির কাঁধে ভর করেই রাশিয়া যাচ্ছে আর্জেন্টিনা বাহিনী। হবে নাকি দীর্ঘ ৩২ বছরের আক্ষেপের অবশেষ? নামটা যেহেতু সর্বকালের অন্যতম সেরা লিও মেসি! অসম্ভব কিছুই না! বিশ্বের কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের চোখ এখন ওই একজনের দিকেই, সবাইভাবে জাদুকরী মেসির এক জাদুই পারে ম্যাচের ফলাফল পরিবর্তন করে দিতে।
২. মোহামেদ সালাহ :লিভারপুল উইঙ্গার সাবেক এই রোমা জাতীয় দলকে নিজ হাতে করে তুলেছেন এই রাশিয়া বিশ্বকাপে। হয়ে গেছেন মিশরের জাতীয় হিরো। খেলার ধরণ অনেকটা মেসির মত বিধায় অনেকে তাকে ‘দ্বিতীয় মেসি’ বলে ডাকছে। তবে সালাহ তো সালাহই! সালাহ একটাই! এবারের লিগ মৌসুমে করেছেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৩২ গোল, সাথে ঝুলিতে আছে ১০টি গোল করানোর কীর্তি। কেভিন ডি ব্রুইনকে হারিয়ে জিতেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
৩. রোনালদো :
বিশ্বকাপে এই রোনালদোকে পেয়ে হয়তো অনেকটা হাফ ছেড়েই বেঁচেছেন পর্তুগিজ বস ফার্নান্দো সান্তোস। কেননা দলের এক এবং একমাত্র সেরা খেলোয়াড় যে এই রোনালদোই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো সেরা খেলা উপহার দিয়ে দলকে নিয়ে গেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে।
৪. নেইমার :বিশ্বকাপে নিজের সেরাটাই দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড় নেইমার। ২০১৪ বিশ্বকাপের ন্যায় এবারও ব্রাজিলিয়ানদের হেক্সা জয়ের স্বপ্ন নেইমারের কাঁধেই থাকছে। দলে জেসুস, কৌতিনহো , ফিরমিনো, উইলিয়ানদের মত সেরা সেরা খেলোয়াড় থাকতেও ব্রাজিলিয়ানদের হেক্সা জয়ের মিশন তাকে কেন্দ্র করেই। কোচ তিতের ‘মেইন ম্যান’ তো তিনিই!
৫. রবার্তো ফিরমিনো :ব্রাজিল কোচ তিতে এই বিশ্বকাপে পড়েছেন এক মধুর সমস্যায়। সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলাবেন কাকে? গ্যাব্রিয়েল জেসুস না ফিরমিনোকে! প্রিমিয়ার লিগ কি ইউরোপিয়ান সেরাদের আসর চ্যাম্পিয়ন্সলিগ দু’জায়গাতেই করেছেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স। ইংলিশ লিগে করেছেন ১৫ গোল সাথে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৭ গোল আর চ্যাম্পিয়ন্সলিগে ১০ গোল করে করিয়েছেন আরও ৮টি। বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হয়েই এবার রাশিয়াতে যাচ্ছে ফিরমিনো। এই তারকা যে কোনো সময়ে গোল করে খেলার ফলাফল পাল্টে দিলেও থাকবে না অবাক হওয়ার মত কিছুই!
৬. ইস্কো আলার্কন :নিঃসন্দেহে স্পেনের সেরা খেলোয়াড় হয়ে এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছেন ইস্কো। এবারের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে ইস্কোকে মাঠে ফ্রি রোলে খেলায় অর্থাৎ যে কোনো পজিশনেই খেলতে তিনি পারদর্শী। মৌসুমে করেছেন ৭ গোল করিয়েছেনও ৭টি। লা ফুরিয়া রোজা’দের বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধার মিশনে তাই এবার অগ্রণী ভূমিকাই পালন করতে দেখা যাবে ইস্কো আলার্কনকে।
৭. কাইলিয়ান এমবাপ্পে :টানা দ্বিতীয়বারের মত ফ্রেঞ্চ লিগের মৌসুম সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের খেতাব নিজের ঘরে তুলেছেন। আগের মৌসুমে ১৮০ মিলিয়ন দিয়ে মোনাকো থেকে তাকে দলে ভেরায় ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডকে দলে নিয়ে যে মোটেও ভুল করেনি খেলাইফি, তার প্রমাণ এমবাপে দিয়েছেন মাঠেই। তালে তাল মিলিয়ে খেলে গেছেন নেইমার, কাভানি, ডি মারিয়াদের সাথে। জিতেছেন টানা দ্বিতীয়বারের মত সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ফ্রান্স দলে আছেন পল পগবার মতো তারকা। তবে দলের আক্রমণ ভাগের বড় একটা দায়িত্ব এই তরুণের উপরই বর্তাচ্ছে।
৮. কেভিন ডি ব্রুইন :এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় নিঃসন্দেহে এই বেলজিয়ান। ছিলেন এবারের মৌসুমের সিটির মধ্যমনি হয়ে। বেলজিয়ান দলের সেরা খেলোয়াড় হয়েই এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে যাচ্ছেন কেভিন!
৯. পল পগবা :জুভেন্টাস থেকে বিশাল ট্রান্সফার ফি’তে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পর থেকে অবশ্য আগের মত আর স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছেনা পগবা। যদিও ইনজুরি বড় একটা কারণ। কিছু ম্যাচে দারুণ খেললেও পারফরম্যান্সে ছিল না ধারাবাহিকতা। এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে করেছেন ৬ গোল করিয়েছেন ১০ খানা।রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ভালো বা খারাপ করা বলতে গেলে পুরোটাই নির্ভর করছে পগবার সেরাটা দেওয়ার উপর।
১০. টনি ক্রুস :জার্মানি ফুটবল দল আর লা-লিগা জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের কারিগর ধরা হয় তাকে। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মাঠে তার কোনো বিকল্প নেই। মাঝমাঠের ভারসাম্য আনতে পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।এবারের জার্মান দলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছেন এই মিডফিল্ডার।
আজকের বাজার/আরআইএস