১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার গুজরাটের নর্মদা জেলায় সর্দার সরোবর ড্যামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিবিসির খবরে হলা হয়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বাঁধ উদ্বোধনের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেও নর্মদা নদীর জলসীমা বৃদ্ধি পেয়ে মধ্যপ্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ও বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পরিবেশগত ঝুঁকি আর মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হওয়ার যুক্তিতে যিনি আগাগোড়াই এ প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছেন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেত্রী মেধা পাটেকর। আজ মধ্যপ্রদেশের বারওয়ানি জেলাতে এই ড্যামের বিরুদ্ধে ‘জল সত্যাগ্রহ’ আন্দোলন করেছেন তিনি।
এদিন ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির ৬৭তম জন্মদিন। নিজের জন্মদিনে তিনি যে প্রকল্পটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন, তাতে নর্মদা নদীর ওপর ওই ড্যামের উচ্চতা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩৮ মিটার। এর ফলে ওই জলাধারের ধারণক্ষমতা ১২.৭ লাখ কিউবিক মিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭.৩ লাখ কিউবিক মিটার।
সংরক্ষিত পানি একটি ক্যানাল নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে গুজরাটের প্রায় নয় হাজার গ্রামে পৌঁছে দেয়া হবে। এতে ১৮ লাখ হেক্টরেরও বেশি কৃষিজমি সেচের পানি পাবে বলে দাবি করছে সরকার। সর্দার সরোবর ড্যামে উৎপাদিত বিদ্যুৎ মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায়, ‘মা নর্মদার পানি দেশের লাখ লাখ নাগরিকের জীবনকে চিরতরে পাল্টে দেবে।’ কিন্তু ভারতের পরিবেশ আন্দোলনের যে কর্মীরা বহু বছর ধরে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা একমত নন। বরং এ ড্যাম লাখ লাখ গ্রামবাসীকে আশ্রয়হীন করেছে বলেই তাদের দাবি।
‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’ এর নেতৃত্ব বলছেন, এ প্রকল্পের ফলে বাস্তুচ্যুত মধ্যপ্রদেশের ১৯০টি গ্রামের চল্লিশ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতাতেই আনা হয়নি। যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো গড়া হয়েছে সেগুলোও বাসের অযোগ্য। শুক্রবার যখন ড্যামের উচ্চতা বাড়িয়ে ১২৮.৩ মিটার করা হয়, তখনই মধ্যপ্রদেশের নিসারপুর শহর ও আশেপাশের বহু গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
আজ রবিবারের মধ্যে ওই রাজ্যের বারওয়ানি জেলার রাজঘাটে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুও পানির তলায় চলে যায়। ওই সেতুটি পার্শ্ববর্তী ধার জেলার সঙ্গে রাজঘাটের সংযোগ রক্ষা করত। সর্দার সরোবর ড্যাম এভাবে বহু গ্রাম-শহর-জনপদকেই চিরতরে দেশের মানচিত্র থেকে মুছে দিয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন অ্যাক্টিভিস্টরা। ১৯৬১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু যখন এই প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তখন থেকেই বিতর্কের শুরু। প্রকল্পটিকে ঘিরে বিতর্ক ছিল বলেই ১৯৮৭ সালের আগে এর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।
প্রকল্পের চূড়ান্ত পর্যায়টির উদ্বোধন করার পর আজ প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশ্য দাবি করেছেন, এই ড্যামের বিরুদ্ধে বিপুল অপপ্রচার ও মিথ্যা ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। কিন্তু আসলে এটি হল প্রযুক্তিগত একটি বিস্ময়! বিশ্ব ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে রাজি হয়নি, কিন্তু তারপরও ভারত নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যে এই বাঁধ নির্মাণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
আজকের বাজার : এমএম / ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭