বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবস আজ

২১ সেপ্টেম্বর, আজ বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবস। প্রতি বছর আজকের এই দিনে আলঝেইমার্স দিবস পালন করা হয়। আলঝেইমার্স দিবস উদযাপনের পিছনে লক্ষ্য হলো আলঝেইমার্স রোগের কারণ, লক্ষণ এবং গুরুতরতা সম্পর্কে আরো বেশি মানুষকে সচেতন করা।

আলঝেইমার্স একটি স্নায়বিক ব্যাধি এবং মস্তিষ্কের সংকোচন, মস্তিষ্কের কোষ মরে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে। স্মৃতিশক্তি, ভাষা, সমস্যা সমাধান এবং অন্যান্য চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস। ডব্লিউএইচওর সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, আলঝেইমার্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তম মৃত্যুর প্রধান রোগ। আলঝেইমার্স ৭৫ বছরের বেশি বয়সে অধিকাংশ মানুষ মারা যায়।

আলঝেইমার্স রোগটি প্রথম ১৯০৬ সালে জার্মান সাইকিয়াট্রিস্ট এবং নিউরোপ্যাথোলজিস্ট ডা. আলঝেইমার্স আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একজন নারীর মস্তিষ্কের টিস্যুতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন যিনি অস্বাভাবিক মানসিক রোগে মারা গিয়েছিলেন। বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবস প্রথম ২০১২ সালে পালন করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, পুরো সেপ্টেম্বর মাসটি বিশ্ব আলঝেইমার্স মাস হিসেবে পরিচিত। আলঝেইমার্স রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।

প্রয়োজনীয় জিনিস কোথায় রেখেছেন ভুলে যাওয়া, পরিচিতদের নাম ভুলে যাওয়া, জরুরি কাজ ভুলে যাওয়া, সবথেকে বড় কথা ‘ভুলে যাবো’ এই উত্কণ্ঠায় ভোগা। আমরা প্রত্যেকেই পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখেছি। তারা কি বয়সজনিত কারণে ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন? নাকি সমস্যা আরো ভয়াবহ আলঝেইমার্সের দিকে এগোচ্ছে? আজ বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবসে গড় তুলুন সচেতনতা।

বিভিন্ন শারীরিক বা সাইকোলজিকাল কারণে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন আলঝেইমার্স রোগে। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন মার্কিনিরা ভারতীয়দের থেকে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাপন বদলের কারণে বাড়ছে আলঝেইমার্স আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও। এই মুহূর্তে দেশে ৫০ লাখ মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই আলঝেইমার্স আক্রান্ত। চিকিত্সকদের আশঙ্কা, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্য দ্বিগুণ হবে।

ডিমেনশিয়ার কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবস। পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে প্রতি ৬৮ সেকেন্ডে একজন আক্রান্ত হন আলঝেইমার্স। বয়সের কারণে অনেক সময় স্বাভাবিক নিয়মেই স্মৃতিশক্তি কমে আসে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। কীভাবে বুঝবেন কোনটা স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ আর কোনটা নয়?

>> কোনো মানুষের নাম ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে পরিচিত ব্যক্তিকে মনে করতে না পারা স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ নয়।

>> মাঝে মাঝে কিছু ভুলে গেলেও সারাদিনের সব কাজ যদি ঠিকঠাক করতে পারেন তাহলে আপনি স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, তবে প্রতিদিনকার জীবনের প্রয়োজনীয় কাজ, যেমন বিল দিতে ভুলে যাওয়া বা কীভাবে দিতে হবে ভুলে যাওয়া আলঝেইমার্সের লক্ষণ।

>> অনেক সময় স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার কারণে আমরা প্রয়োজনীয় জিনিস কোথায় রেখেছি ভুলে যাই। তবে একেবারেই অপ্রত্যাশিত জায়গায় (যেমন চাবি ফ্রিজে রেখে দেওয়া) জিনিস রাখা বা প্রায়শই হারিয়ে ফেলা মানে অবশ্যই আপনার সমস্যা গুরুতর।

>> আজ কি বার? স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার কারণে অনেক সময়ই আপনি সপ্তাহের দিন ভুল করতে পারেন, তবে যদি তারিখ, ঋতু, সময়ের প্রবাহমানতা গুলিয়ে যায় তাহলে অবিলম্বে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

>> কথা বলার সময় অনেক সময়ই সঠিক শব্দ খুঁজে পাই না আমরা, তবে যদি দেখেন আপনার প্রিয়জন কথার খেয়াল রাখতে পারছেন না, এক কথা থেকে আরেক কথায় চলে যাচ্ছেন, এই মুহূর্তে বলে পরের মুহূর্তে নিজেই ভুলে যাচ্ছেন ? তাহেল বুঝবেন আলঝেইমার্সের লক্ষণ প্রকট হচ্ছে।

>> রাস্তায় বেড়িয়ে দিক ঠিক করতে না পারার সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগি, কিন্তু পরিচিত রাস্তায় যদি বারবার হারিয়ে যান বা বাড়ির রাস্তা ভুলে যান তবে আপনি আলঝেইমার্সে আক্রান্ত।

>> অনেক সময় দিনটা ঠিকঠাক নিজের পরিকল্পনা মতো না চললে বা হঠাত্ পরিবর্তন এলে অনেকেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া বিরক্ত হওয়া, ভয় পাওয়া, উত্কণ্ঠায় ভোগা বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়া আলঝেইমার্সের জোরালো লক্ষণ।

>> মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে না পারা বা দুর্বল বিচারবুদ্ধির পরিচয়ও আলঝেইমার্সের লক্ষণ হতে পারে।

>> অফিসে, অনুষ্ঠানে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক, কিন্তু অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা, পছন্দের কাজ করতে ভালো না লাগা মানে আপনার অবশ্যই কোনো সমস্যা হচ্ছে।

আলঝেইমার্সের সঙ্গে যাপন:-

>> আলঝেইমার্সে অক্রান্ত হলে সবথেকে প্রথমে নিজেকে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় দেওয়া।

>> পরিবারের ভালোবাসা, সাহায্য চান। নিজের পছন্দের কাজ করুন, স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন।

>> সময়, স্থান ও ব্যক্তির পরিচয় ভুলে যাওয়া এই রোগে স্বাভাবিক। তাই একটি ডায়রিতে আপনার দরকারি কাজ, তারিখ, পরিবার, বন্ধুদরে নাম-ঠিকানা লিখে রাখুন।

>> বইপড়া, খেলাধুলো, ক্রসওয়ার্ড পাজল সলভ করা বা বাদ্যযন্ত্র বাজালে অ্যালজাইমারের সঙ্গে বোঝাপড়া করা সহজ।

>> সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে ব্যাপৃত রাখলে মস্তিষ্ক সচল থাকে, আলঝেইমার্সের সঙ্গে বোঝাও সহজ হয়।

>> আলঝেইমার্সে আক্রান্ত মানুষদের বোঝা উচিত যে জীবনে বিভিন্ন রকম আবেগে থাকা স্বাভাবিক। তাই একা একা সময় না কাটিয়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে আবেগের দোলাচল ভাগ করে নিন।

>> মানসিক চাপ ও অবসাদের সঙ্গে ঠিকঠাক মোকাবিলা করতে পারলে পজিটিভ জীবনবোধ তৈরি হবে।

>> নিজের খাওয়া দাওয়া ও শরীরচর্চার ওপর জোর দিন।

আলঝেইমার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে বসবাস:-

অপনার প্রিয়জন যদি আলঝেইমার্সে আক্রান্ত হন তবে তার সবথেকে বেশি প্রয়োজন আপনার সাহচর্য, কারণ এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। আপনার সচেতনতা ও সংবেদনশীলতার জোরে প্রিয়জন ভরসা পেতে পারেন।

আলঝেইমার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবসময় চোখে চোখে রাখুন:-

আলঝেইমার্সে আক্রান্ত ব্যক্তির দেখাশোনা করা অনেক সময়ই চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তি মাঝে মাঝেই খিঁটখিটে হয়ে উঠতে পারেন, বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন ভালোবাসা, সাহচর্য, ধৈর্য্য ও প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার মানসিকতা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঙ্গ দিন। তথ্য-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান