বুধবার আয়কর মেলা; সেবা দেয়া হবে ১৫ লাখ করদাতাকে

পহেলা নভেম্বর বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় আয়কর মেলা। আটটি বিভাগীয় শহর, ৫৬টি জেলা ও ৮৭টি উপজেলাসহ সারা দেশে মোট ১৫১টি জায়গায় হবে এবারের আয়কর মেলা। আয়কর সম্পর্কে নাগরিকদের ধারণা দেয়া মেলার মূল উদ্দেশ্য হলেও এর মাধ্যমে করজাল বৃদ্ধি ও বড় অংকের রাজস্ব আহরণের চিন্তা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবারের মেলায় ১৫ লাখ করদাতাকে সেবা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এনবিআর জানিয়েছে, গত অর্থবছরে প্রায় ১১ লাখ নতুন করদাতা যুক্ত হওয়ায় এবং সর্বশেষ আয়কর মেলার সফলতার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আরো বড় পরিসরে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গত বছরের আয়কর মেলায় দুই লাখের মতো আয়কর রিটার্ন জমা পড়ে। এবার সংখ্যাটি পাঁচ লাখে উন্নীত হবে বলে আশা করছে এনবিআর। মেলায় অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর আহরণ হবে বলে ধারনা কর্মকর্তাদের।

মেলা সম্পর্কে এনবিআর সদস্য ও আয়কর মেলার সমন্বয়ক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আয়কর মেলায় রাজস্ব আহরণে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি। মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন করদাতা বৃদ্ধি ও মানুষের মধ্যে কর সচেতনতা তৈরি করা। তবে আয়কর দাতাদের সেবা দেয়ার মাধ্যমে বড় অংকের রাজস্ব আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এখন পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন ৩০ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছর তা ৩৫ লাখে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা মেলার মাধ্যমে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। এবারের মেলায় আগের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশিসংখ্যক করদাতার সমাগম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন এনবিআর ভবনসহ আটটি বিভাগীয় শহরে সাত দিনব্যাপী চলবে এবারের আয়কর মেলা। জেলা শহরে চলবে চারদিন ও ৮৭ উপজেলায় দুদিন করে চলবে এবারের মেলা। অন্যান্যবারের মতো এবারো মেলায় করদাতাদের সব ধরনের তথ্যসেবা দেবেন কর্মকর্তারা।

এনবিআরের তথ্যমতে, ট্যাক্স কার্ড দিতে এরই মধ্যে ১৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করেছে এনবিআরের ট্যাক্স কার্ড নির্ধারণী কমিটি। ৩৫টি ক্যাটাগরিতে এ ট্যাক্সকার্ড দেয়া হবে এবার। ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের মধ্যে বিশেষ শ্রেণীতে সিনিয়র সিটিজেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী ও তরুণ করদাতাদের আলাদা ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার আয় ও ব্যবসার ভিত্তিতে বেতনভোগী, ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, হিসাববিদ, নতুন করদাতা, খেলোয়াড়, অভিনেতা, গায়ক, সাধারণ ব্যবসায়ী ও অন্যান্যসহ মোট ৭৬টি ট্যাক্স কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১৪টি খাতের প্রত্যেকটি পৃথক ট্যাক্সকার্ডসহ অন্যান্য খাত মিলে মোট ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে আটটি পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্যাক্স কার্ডের জন্য করদাতাদের চূড়ান্ত তালিকা করে তা এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তবে সংখ্যাগত জটিলতায় কর বাহাদুর পরিবারের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, করদাতাদের সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সম্পর্ক বাড়াতেই কর মেলার আয়োজন। গত কয়েক বছরে মেলায় করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এনবিআরকে উত্সাহ জুগিয়েছে। মেলায় উত্সবমুখর পরিবেশে করদাতারা সব সেবা পাচ্ছেন। এবার মেলার পরিধি আরো বড় করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ট্যাক্স কার্ডের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো কর বাহাদুর পরিবারকে সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। যেসব পরিবারের সব সদস্য সরকারকে কর দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে, তাদের এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৩০ অক্টোবর ২০১৭