বেনাপোলে বানিজ্যে ধস নামার আশঙ্কা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার প্রধান কাস্টমস কমিশনার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে ভারত থেকে যত পণ্য বাংলাদেশে রফতানি হবে তার প্রতিটি চালান পেট্রাপোল বন্দরে ট্রাক থেকে আনলোড করে শতভাগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেই রফতানির অনুমতি দেবেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

একইভাবে বাংলাদেশ থেকে যে সব পণ্য রফতানি হবে সেসব পণ্যও ট্রাক থেকে খালাস করে শতভাগ পরীক্ষা করেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

১৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ’ পণ্য বোঝাই ট্রাক আমদানি হয় ভারত থেকে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় ব্যবহৃত ৮০ ভাগ কাঁচামাল আমদানি হয়ে থাকে। আবার বাংলাদেশ থেকেই প্রায় আড়াইশ ট্রাক ভারতে যায়।

ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হঠাৎ করে এ ধরনের নির্দেশনায় আমদানি বানিজ্য অর্ধেকে নেমে আসবে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন প্রায় ৮০০ ট্রাকের পণ্য আনলোড করে পরীক্ষা করা অসম্ভব হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বঙ ধরনের ধস নামতে পারে।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় এমনিতেই একটি পণ্যে চালান ভারত থেকে আমদানি হয়ে বেনাপোল বন্দর পর্যন্ত আসতে কোনও কোনও সময় ১৫ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। বর্তমানে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ও কালিতলা পার্কিংয়ে ৫ হাজার পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে আছে যত্রতত্রভাবে।

বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, অফিসিয়ালভাবে তারা এখন পর্যন্ত কোনও চিঠি হাতে পাননি। তবে এ নিয়ম চালুতে দ্রুত আমদানি বাণিজ্য সম্পাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে। এর আগে পেট্রাপোল বন্দর থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগে সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ ছাঙা ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে পরীক্ষা করা হতো না। তবে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, খুব দ্রুত এ সিদ্ধান্ত মেনে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য সম্পাদন করতে হবে।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র বলেন, কাস্টমসের এই আদেশে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পাদন কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে পচনশীল পণ্য চালান রফতানি কঠিন হয়ে দাঁঙাবে। আগে পাস করা হয়েছে এমন পণ্য চালান বন্দরে প্রবেশ করেছে।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ল্যান্ডপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ভারতীয় পেট্রাপোল কাস্টমস সহ-কমিশনারের স্বাক্ষরিত একটি আদেশ পাওয়া মাত্রই বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার/সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনসহ বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দফতরে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনই না বসলে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পঙবে।

সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে অনেক আগে থেকেই বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের।