নিসার আহমেদ। ১৬ বছর বয়সী ভারতীয় কিশোর। বাবা রিকশা চালক, মা গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। থাকেন দিল্লির আজাদপুরে রেলাইনের পাশের বস্তিতে। তার অদম্য স্বপ্নকে দমিয়ে রাখতে পারেনি দারিদ্রের কঠোর বিরুদ্ধতা। কিশোর নিসার পাড়ি জমাচ্ছেন ইতিহাসের সেরা স্প্রিন্টার উসাইন বোল্টের দেশ জ্যামাইকায়। প্রশিক্ষণ নেবেন পৃথিবী বিখ্যাত কিংস্টনের রেসার্স ট্র্যাক ক্লাবে।
মাসে ৫ হাজার রুপি আয়ের সংসারে যেখানে ঠিকমতো খাবার জোটে না, সেখানে ছেলের স্বপ্নের সারথি হতে একটুও কসুর করেননি নিসারের বাব-মা। সন্তানের স্বপ্নের জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ উজার করে দিচ্ছেন তারা। আর বাবা-মা’র প্রেরণা ও লড়াইয়ের কঠোর সাধনায় এরই মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন নিসার।
স¤প্রতি দিল্লির স্টেট অ্যাথলেট মিটে অনূর্ধ-১৬’র দুইটি রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন অশোক বিহারের গভর্মেন্ট বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের এই ছাত্র। শর্ট স্প্রিন্টে জিতে নিয়েছেন দুইটি সোনার মেডেল। ১০০ মিটার রেস ১১ সেকেন্ডে সম্পন্ন করেছেন, যা আগের রেকর্ডের চেয়ে .০২ সেকেন্ড কম। আর ২০০ মিটার স্প্রিন্ট শেষ করেছেন ২২.০৮ সেকেন্ডে, এর আগের রেকর্ডটি ছিলো ২২.১১ সেকেন্ডের।
নিসার বলেন, ‘বাবা-মা কোনরকমে আমাদের মুখে অন্ন যোগাচ্ছেন। যে বন্ধুদের সাথে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি, মাঝে মাঝে তাদের বিশাল বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু আমি কখনো তাদের বাড়িতে আনতে পারিনি। কারণ তাদের বসতে দিতেও পারবো না আমি। আমি মাঝে মাঝে কাঁদতাম। কারণ, আল্লাহ্ আমাকে খুব কষ্টকর একটি জীবন দিয়েছেন। কিন্তু দারিদ্র আমাকে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কঠোর পরিশ্রমে অনুপ্রাণিত করেছে।’
২০১৩ সালে নিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক সুরেন্দ্র সিং। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সে খালি পায়ে দৌড়াতো। আমি তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, কিন্তু তার প্রতিভায় আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তার সঠিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।’
গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড ও স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থা অ্যাংলিয়ান মেডেল হান্টের যৌথ উদ্যোগে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী সম্ভাবনাময় অ্যাথলেটদের জ্যামাইকা পাঠানো হচ্ছে। কিংস্টন ক্লাব অ্যাথলেটদের শক্তি, সক্ষমতা ও আগ্রহ যাচাই করেই চার সপ্তাহের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করেছে।
আজকের বাজার: সালি / ৩১ জানুয়ারি ২০১৮