ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই সরকারি ফান্ড দেয়া হোক

মো. গোলাম সারওয়ার ভুঁইয়া : সম্প্রতি দেশে একটি বিষয় খুব আলোচনা হচ্ছে। তাহলো আর্থিক খাতে, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা। তো সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার ব্যাপারে এটা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকেও কিন্তু একটা অঙ্গীকার ছিলো।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা শুরু থেকেই বলে আসছেন। কিন্তু তা এক সময় অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেল। ডিপোজিট এবং ল্যান্ডিং দুটাই। কিন্তু উনি বলেছেন, এটা কমিয়ে আনতে হবে। যদি সুদের হার কমানো না হয় সে ক্ষেত্রে শিল্প বাণিজ্যে বিরুপ প্রভাব পড়বে।

যখন সুদের হার বেড়ে গেল ১৪-১৫%। এখন ধরেন ১৪% ১৫% লোন নিয়ে একটা ব্যাবসায় কত পার্সেন্ট প্রফিট করতে হবে টু সার্ভিস দিস লোন। এই লোনটা টাইমলি সুদসহ পরিষদ করতে গেলে, অন্যান্য এক্সপেন্সসেন্স মিলিয়ে তাকে তো টোয়েন্টি পার্সেন্টের উপর লাভ করতে হবে, যা ভেরি ডিফিকাল্ট এবং অল মোস্ট ইম্পসিবল। এপার্টলি ব্যাংকগুলো হয়তো হায় ইন্টারেস্টে ল্যান্ড করতে পারছে, কিন্তু ইন দ্যা লং রান বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাপে পড়ে যাচ্ছে।

এই লোন এনপিএল হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাচ্ছে এবং কিছু লোন এনপিএল হয়েও গেছে। কারণ ব্যবসায় লাভের হার থেকে সুদের হার বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই সে টাইমলি তা শোধ করতে পারে না।

সে জন্য সরকার যেটা প্রদান করেছেন তা করতে হবে। ব্যাংকারদের অনেকগুলো দাবি ছিলো, তাদের সিআরআরটা কমিয়ে আনা, সেটা উনি কমিয়েছেন। ব্যাংকের কর্পোরেট ট্যাক্সের হারটা আড়াই পার্সেন্ট কমানো হয়েছে। ব্যাংক মালিকদের আরো কিছু দাবি ছিলো তা উনি মেনে নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটা কমানোর জন্য। তো আমরা ওই ঘোষণা আসার পর থেকেই কিন্তু ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেক্টর আমরা কিন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি নামিয়ে আনার জন্য। বাট কিছু চ্যালেঞ্জ এখানে আছে। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে যে, এর আগে যখন সুদের হারটা বেড়ে গেল তখন ডিপোজিট রেটও বেড়ে গিয়েছিলো। এখন আমরা পহেলা জুলাইতে দেখলাম যে অল মোষ্ট সিক্সটি পার্সেন্ট. অফ আওয়ার ফান্ড ৫ পারসেন্ট থেকে ১০ পারসেন্ট এর ওপরে এবং মোস্টলি ১১ পারসেন্ট রেটে আমাদের ডিপোজিট নেওয়া। ব্যাংকের সাথে আমাদের যে ক্রেডিট লাইনগুলো আছে সেগুলোও ১০ পারসেন্টের উপরে নেওয়া।

যে ডিপোজিট গুলো হয়েছে আমাদের কাছে, এটা ম্যাচুউর্ড হওয়া পর্যন্ত কিন্তু এটার রেট কমানো যাবে না । ডিপোজিটর চাইলেই কিন্তু সে হ্যান্ড ক্যাশ করতে পারে কিন্তু আমরা পারি না। আমাদেরকে ওয়েট করতে হবে। তো এই বিষয়গুলো কিন্তু আমার সেন্ট্রাল ব্যাংকে বলেছি। তখন সরকারের পক্ষ থেকে যে সরকারি ফান্ড বলা হলো ফিফটি ফিফটি রেশিউতে সরকরি ব্যাংক কিংবা বেসরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার জন্য। আরো কিছু পদক্ষেপ সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে আশা করি আমরা ধিরে ধিরে এটা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে পারবো।

অলরেডি কিন্তু শুরু হয়েছে। বাট সব লোন তো শুরুতেই একসাথে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব না। যেহেতু আমাদের কাছে এই মুহুর্তে ফান্ড এভাইলেবল না।

আমরা রেট টা কমিয়েছি, ডিপোজিট সাইটটা কমিয়েছি যেটা আমাদের বিড সোর্স। বাট ডিপোজিট যেটা আগে ১১ পার্সেন্ট ছিলো এক বছরে সেটা সাড়ে আট পার্সেন্ট করা হলো, টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। ডিপোজিট একটা ওয়েট করছে। তারা টাকা ডিপোজিট করছে না। অন-দ্য আদার হ্যান্ড সুদের হার দশের উপর রয়ে গেছে। ওটা না কমানোর কারনে মানুষ চেষ্টা করছে যে ডিপোজিটটা ব্যাংকে না করে সঞ্চয় পত্র কেনার জন্য।  তো সেখানেও যদি একটা নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, ওইটার সুদের হার কমানো না হয়, লাভের হার কমানো না হয় তাহলে ফান্ড পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন।

কম সুদে যদি আমরা ডিপোজিট না পাই আমাদের পক্ষে কিন্তু সিঙ্গেল ডিজিটে লগ্নি করা ডিফিকাল্ট হবে। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা এটা কমাবো। কিন্তু ডিপোজিটার যারা তারা তো আসছে না। আমরা যেহেতু সাতের উপরে দেবোনো। তাহলে তারাতো অন্য দিকেই চেষ্টা করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিভিন্ন রকম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। কিন্তু তা কার্যকরিভাবে করা হয়নি। সেটা যত তাড়াতাড়ি করা হবে, এক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন ততদ্রুত হবে।  সরকারের এই যে সিদ্ধান্ত, সেটার সাথে আমরাও পুরোপুরি একমত যে, শিল্প বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হলে সুদের হার কমানোর বিকল্প নাই।

হাইেরেটে লোন নিয়ে কেউ টাকা শোধ করতে পারবে না। আমাদের চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি। ব্যাংক থেকে আমরা তিনটা ফর্মে টাকা পাই। একটা ট্রেজারিতে আমরা টাকা নেই, আমরা ব্যাংক থেকে টার্ম লোন নেই এবং ব্যাংক থেকে আমরা প্লেসমেন্ট নেই। তাছাড়াও কল মানিতেও টাকা নেই ব্যাংক থেকে। কল মানিটা একটু কমই আছে, বাট সেটা আমরা এককোটিতে থার্টি পার্সেন্টের উপর উঠতে পারি না। টার্ম লোনটা এখনো ১০ পারসেন্টের উপরে রয়ে গেছে। ব্যাংক কিন্তু সেটা কমাচ্ছে না। তাই আমাদের লিমিটেশন আছে। ব্যাংকের যে প্লেসমেন্ট’টা ম্যাচিউর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর রিনিউ করার সময় কমবে। তাই আমাদের জন্য কঠিন। এরপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কমানোর জন্য।

কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি, আবার কমাতে যে অনেক ক্ষেত্রে পারছি না। কারণ আমাদের যারা কাষ্টমার, তার তো বিজনেস চালাতে হবে। তার তো টাকার দরকার। এখন তাকেও যদি দশের কমে দিতে পারবো না বলে না দেই, তাহলে তো ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ব্যাংক আমাদের বলেছে, আপনারা এসএমইটা আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করেন। ট্রেডিংটা আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করেন, সার্ভিসটাও আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করেন। আমরা তাদেরকে ফাইন্যান্স করে যাচ্ছি কিন্তু। হয়তো রেটটা হয়তো একটু বেশি হচ্ছে।

আমার কাছে  প্রায়োরিটি হচ্ছে কাস্টমারের ব্যাবসা চালু রাখতে হবে। তার যে ফান্ড লাগবে, তার যোগান দিতে হবে। তো গত ২০-২৫ দিনে কিন্তু আমরা কয়েকবার বসেছি আমাদের এ গ্রেডের ক্লাইন্টদের সাথে, তো উনারও কিন্তু খুব আন্তরিক, উনারাও কিন্তু প্রবলেমটা বুঝতে পারছেন। আসলে ব্যাংক যত তাড়াতাড়ি পারবে, আমরা পারবো না। যেহেতু আমরা ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। তো আমরা যেটা বলেছি উনাদের কাছে, যে ব্যাংক যেমন আমাদের ডিপোজিটের ক্ষেত্রে যেটা বলা হচ্ছে যে সিক্স পার্সেন্টেই ডিপোজিট হয়তো করবে। আমরা চাই একটু বেশি হবে, হয়তো ৭ বা সাড়ে ৭।

ব্যাংক থেকে যে ফান্ডটা পাই, রেট কমার কারনে যেন ব্যাংক আমাদের থেকে কোন ডিপোজিট উইথড্রো করে না নেয়। ওটা রিনিউ করুক কম রেটে, বাট উইথড্রো না করুক। মেইবি আমরা সিক্সের যায়গায় হয়তো একটু বেশি দিবো। আমরা পয়েন্ট ৫ পারসেন্ট বা ১ পারসেন্ট বেশি দেবো।

কিন্ত আমাদের কাছে টার্ম লোন যা আছে ওই টাও একইভাবে যেন রেটা টা কমিয়ে আনে। আর একটু বলেছি যে সরকারি ফান্ড আমরা কিন্তু পাচ্ছি না। এখানে থার্টি ফাইভ/ থার্টি ফোর আমাদের এনবিএফআই আছে। তার মধে ১৪ টা প্রতিষ্ঠানকে বলা হচ্ছে যে এলিজেবল ফোর টেকিং গভমেন্ট ফান্ড। বিভিন্ন রেটিং এর ভিত্তিতে।  তো আমরা যেটা বলেছি যে, ব্যাংকের ক্ষেত্রে তো রেটিং এর বিষয়টা আনা হয়নি। সব ব্যাংকেই ফান্ড পাবে।   আমরা বলছি যে, আমাদেরর সবার জন্য ওপেন করে দেওয়া হোক। আমদের এটলিষ্ট সেভেন বা এইট পার্সেন্ট বা টেন পার্সেন্ট ফান্ড আমাদের থাকুক। তো সরকারি ব্যাংক ৫০ বেসরকারি যে ৫০ তার মধ্যে ১০ আমাদের জন্য রাখুক এবং অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের মেনডেট নাই টাকা ডিপোজিট করার। তাদের রুলসে বলা আছে যে তারা তফসিলে ব্যাংকে আমানত রাখবে। তফসিলে ব্যাংকে বাট ইউ আর নট সিডিউল ব্যাংক।  আমরাও যাতে আমনাত নিতে পারি সে ব্যাবস্থা’টা করতে হবে। এখানে ধরেন পেট্রোলিয়াম কর্পারেশন আছে, এখানে বিটিআরসি আছে, বিটিএমসি আছে, অনেকই আছে যারা কোন এনবিআইএর কাছে টাকা রাখে না। ইন্সুরেন্স অথোরিটি, সাধারন বিমা কর্পারেশন তাদের রুলসে বলা আছে তারা তফসিল ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণ করবে। সেখানে তফসিল ব্যাংক ছাড়াও তারা যাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা রাখে সে ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি।

মো. গোলাম সারওয়ার ভুঁইয়া

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

আইআইডিএফসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।