ব্যাসেল-৩ শর্ত পূরণে লভ্যাংশ কমালো ইউসিবি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ব্যাসেল-৩ এর শর্ত পূরণে মূলধনভিত্তি শক্তিশালী করতে চায়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কমিয়েছে। আগের বছর ব্যাংকটি ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও, এবার দিয়েছে ১০ শতাংশ।

আজ বুধবার বিকেলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে ২০১৭ সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। সেখানে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ই আব্দুল মুহাইমেন লভ্যাংশ কমানোর কারণ ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, আমরা ব্যাসেল-৩ এর আওতায় ব্যাংকের মূলধন শক্তিশালী করতে চাই। ২০১৬ সমাপ্ত বছরে ইউসিবির ক্যাপিটাল অ্যাডিক্যুয়েসি রেশিও (সিএআর) ছিল ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। যদি ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করা হয়; তবে ২০১৭ সমাপ্ত বছরে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে। এর বেশি লভ্যাংশ প্রদান করলে ব্যাসেল-৩ এর শর্ত পূরণ কঠিন হয়ে যাবে। এই জন্য ম্যানেজমেন্ট সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ নিয়ে তিনি বলেন, এই জন্যে শেয়ারহোল্ডারদের সাময়িক কষ্ট হবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই কষ্ট থাকবে না। এটা আমাদের টেকসই ব্যাংকিংয়ের জন্য করতেই হচ্ছে। তবে ব্যাংকটির ম্যানেজমেন্ট ব্যাসেল-৩, পর্যাপ্ত প্রভিশনিং, এনপিএল কাভারেজ, কস্টিংসহ বেশ কিছু শক্ত পরিকল্পনা নেওয়ায় ইউসিবির ভিত আরও শক্তিশালী হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সংগঠন ‘ব্যাসেল কমিটি অন ব্যাংকিং সুপারভিশন’ এর ঘোষিত ব্যাসেল-৩ বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করে আসছে ২০১৫ সাল থেকেই।

ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। সেই হিসাবে ২০১৫ সালে তাদের ঝুঁকিকৃত সম্পদের ১০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১০.৬২৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১১.২৬ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১১.৮৭৫ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে এই সংরক্ষণের পরিমাণ হবে ১২.৫০ শতাংশ।

যেখানে ব্যাসেল-২ অনুযায়ী ব্যাংক সমূহকে তাদের ঝুঁকিকৃত সম্পদের ১০% মূলধন সংরক্ষন করতে হত, সেখানে ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ব্যাংককে ক্রমান্বয়ে ২.৫০ শতাংশ মূলধন বাফার সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

ইউসিবির আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ২৭২ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে পরিচালন মূনাফা হয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা। যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬৭ কোটি বা ৮.৬৯ শতাংশ।

২০১৭ সাল শেষে ব্যাংকটির অ্যাডভান্স ডিপজিট রেশিও (এডিআর) রয়েছে ৮০.৩ শতাংশে, কস্ট অব ইনকাম রেশিও রয়েছে ৫৩.৪৯ শতাংশে, রিটার্ন অব অ্যাসেট(আরওএ) রয়েছে দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং রিটার্ন অব ইক্যুইটি (আরওই) রয়েছে ১০.৩ শতাংশে।

ব্যাংকটির এনপিএল রেশিও ৮ শতাংশ থেকে নেমে অবস্থান করছে ৭.৪ শতাংশে।

ব্যাংকটি তার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আলোচ্য সময়ে সমন্বিতভাবে শেয়ার প্রতি আয় (কনসোলিটেডেট ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। আর এককভাবে ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৩১ পয়সা।

এসময় ইউসিবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত জামিল, আহসান আফজাল, আরিফ কাদরি, মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদ এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সোহরাব মুস্তাফাসহ ঊর্ধ্বত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএম/