ব্রেক্সিট আলোচনা ত্বরান্বিত করতে সম্মত মে-ইয়ুংকার

চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আগে ব্রেক্সিট চুক্তির প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে এবং ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রধান জঁ ক্লদ ইয়ুংকার। সোমবার এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান তারা। খবর এএফপি।

২০১৯ সালে জোট থেকে ব্রিটেনের প্রস্থানের আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই সমাপ্ত হবে, এ-সংক্রান্ত আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে সোমবার ইসিপ্রধানের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে অংশ নিতে সংক্ষিপ্ত নোটিসে ব্রাসেলসে উপস্থিত হন মে।

নৈশভোজ শেষে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে ক্রমে খারাপের দিকে যাওয়া আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তৃত বিবরণে ঘাটতি ছিল। তবে মে ও ইয়ুংকার জানান, একটি গঠনমূলক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনার এখন পর্যন্ত অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে পর্যালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও ইসি প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে আগামী মাসগুলোয় এ প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করা উচিত বলে সম্মত হয়েছেন তারা।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ইসিপ্রধানের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে তাদের সঙ্গে আরো যোগ দেন ব্রিটেনের ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস, ইইউর ব্রেক্সিট-বিষয়ক প্রধান আলোচক মিশেল বানিয়ে। এছাড়া দুই নেতার শীর্ষ সহযোগীরাও নৈশভোজে যোগ দেন।

বৈঠকের আগে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান ইয়ুংকার। তবে বৈঠকের পর এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেয়া হবে বলে ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের তিনি জানান।

আগামীকাল এবং শুক্রবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। আলোচনায় যদি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়, তবে আলোচকরা ব্রিটেনের সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন কিনা, এ বৈঠক থেকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে এ মুহূর্তে প্রস্থান আলোচনা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায়, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন স্থগিত করা হতে পারে বলে ইইউর তরফ থেকে আভাস পাওয়া গেছে। ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য মাল্টিবিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধের বিষয় নিয়ে ব্রেক্সিট আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। জোট ত্যাগের আগে ব্রিটেনকে অবশ্যই এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে জোর দিয়েছে ইইউ।

ব্রেক্সিট বিলের পাশাপাশি ২০১৯ সালের মার্চে ব্রেক্সিটের আগে ব্রিটেনে বসবাসকারী ৩০ লাখ ইউরোপীয় নাগরিকের অধিকার এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভবিষ্যৎ-সংক্রান্ত আলোচনার অগ্রগতিও দাবি করেছে ইইউ। অন্যদিকে এখনো একটি ইতিবাচক সংকেতের বিষয়ে আশাবাদী ব্রিটেন। ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রশমিত হবে বলে আশা করছে দেশটি। ব্রিটেনের আশা, হঠাৎ জোট ত্যাগ ব্যবসা ও নাগরিকদের যে প্রান্তসীমায় এনে দাঁড় করিয়েছে, সে পরিস্থিতি নিরসনে দুই বছরের একটি রূপান্তরকালীন সময় পাওয়া যাবে।

এদিকে গত সপ্তাহে ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক সতর্ক করে জানান, ডিসেম্বর নাগাদ আলোচনায় কোনো অগ্রগতি দেখা না গেলে, তারা বিকল্প বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন টাস্ক।

সম্মেলন থেকে রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সম্মত হতে দেখা গেছে জোট নেতাদের। ডিসেম্বরে যেন দ্রুত পরবর্তী ধাপে চলে যাওয়া যায়, সে কারণে এ কাজ শুরু করে দিতে আগ্রহী তারা। ইইউ রূপান্তর নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করার দিকে এগোলেও ফ্রান্স ও জার্মানির চাপের কারণে শর্ত কঠোর করেছেন তারা। বাণিজ্য নিয়ে কোনো অগ্রগতির আগেই ব্রেক্সিট বিলের নিষ্পত্তি চায় দেশ দুটি।

এদিকে সোমবার ব্রিটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইভান রজার্স সতর্ক করে বলেন, ব্রিটিশ সরকার যদি একক বাজার ও কাস্টমস ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, তবে এ সিদ্ধান্ত জোটের সঙ্গে তুরস্কের যে দূরত্ব, তার চেয়েও দূরে নিয়ে যাবে যুক্তরাজ্যকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদত্যাগ করেন তিনি।

ব্রেক্সিট কৌশল নিয়ে এরই মধ্যে নিজ দেশে নিজের রাজনৈতিক দলের মধ্য ও কট্টরপন্থী উভয়েরই সমালোচনার মুখে পড়েছেন টেরিসা মে। তা সত্ত্বেও মে একটি সুযোগের আশা করছেন, যা তার অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং ব্রিটেনের জোট ত্যাগকে ঘিরে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা কিছুটা প্রশমিত করবে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৮ অক্টোবর ২০১৭