ব্রোকার হাউজের মূলধন বাড়ালে বাজারে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল আসবে

মোস্তাক আহমেদ সাদেক : ব্যাংক যে রকম বেসেল ওয়ান, বেসেল টু ও বেসেল থ্রী করেছে। এখন বেসেল থ্রী চলছে। একই রকম বিষয় ঘটতে যাচ্ছে ব্রোকার কমিনিটিতে। যেমন আমাদের পেইড আপ ক্যাপিটালের ওপর আমাদের এসেটের ওপর কোনো দিন বাধ্যবাধকতা ছিল না। আমাদের কতটুকু পেইড আপ থাকতে হবে। আমি হ্যান্ডল করছি এক হাজার কোটি টাকা, অথচ পেইড আপ ক্যাপিটাল এক কোটি টাকা। তাহলে তো এটা হয় না। এই জন্য একটা আইন আনা হচ্ছে, যেটা নাকি সব ব্যাংকগুলোর বেলায়ও প্রযোজ্য হয়েছে।

বেসেল ওয়ান, বেসেল টু যেমন দেখছেন আপনি। আমাদের প্রাইমারিলি যেটা করতে হচ্ছে, সেটা হচ্ছে প্রথমে যদি আপনি শুধুমাত্র বিডিং করতে যান, তাহলে আপনার পাঁচ কোটি টাকার মতো পেইড আপ ক্যাপিটাল থাকতে হবে। আর যদি ফুল প্যাকেজ ব্রোকারেজ করতে চান তাহলে আপনার ডিলার লাইসেন্সসহ আপনার পনের কোটি টাকার মতো পেইড আপ ক্যাপিটাল থাকতে হবে।

এটা ইমিডিয়েট ইমপ্লিমেনটেশন করতে গেলে আমাদের অনেক ব্রোকারেরই প্রবলেম হয়ে যাবে। সেই জন্য আমরা একটু সময় চাচ্ছি। আমরা এটলিস্ট তিন-চার বছর সময় চাচ্ছি। তিন-চার বছরে এটা ইমপ্লিমেনটেশন করার জন্য। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ দুই আড়াই বছরে এটা করতে চেষ্টা করছে। আমরা চাচ্ছি তিন-চার বছরে এটা করতে। তাতে যেটা হবে, মার্কেটে তারল্য একটু বাড়বে। মার্কেটের সঙ্গে এটা কিন্তু সরাসরি সেভাবে সম্পৃক্ত না।

আমরা বলি, বিদেশিরা বিনিয়োগ যখন করে তখন সে আমাদের ইনকোয়ারি করে। সে আমাদেরকে হাজার কোটি টাকা বিশ্বাস করে পাঠাবে, তখন সে দেখে আমাদের এসেট কত আছে, আমাদের তারল্য কতটুকু আছে, আমরা কতটুকু রিস্ক নিতে পারব। তাছাড়া আমাদের এখানেও ক্লাইন্টরা আমাদের কোটি টাকার ওপরেও দিচ্ছে, দেখা গেল আমাদের নিজের তহবিল কিন্তু নাই। এটা তো হতে পারে না। এই জন্য এটা হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং এটা হবেও। তবে একসঙ্গে করতে গেলে আমাদের ব্রোকার কমিনিটির একটু প্রবলেম হয়ে যাবে। সেই জন্য আমরা একটু সময় চাচ্ছি।

ইন্টারন্যাশনালি যদি আমরা দেখতে যাই, তাহলে দেখতে হবে যে ইন্টান্যাশনাল যেসব ব্রোকার তারা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার। প্রাকটিক্যালি ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট ছাড়া ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এই গুলো ছাড়া অন্যান্য জায়গায় যদি দেখেন তাহলে সবখানে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকাররা হলেন স্টক ব্রোকার। আমাদের দেশে সেটা হতে যাচ্ছে। তবে তা ধীরে ধীরে হবে।

যেমন আমাদের দেশে যখন প্রাইভেট ব্যাকংগুলো হয়েছিল তখন কিন্তু তারা এক শত কোটি টাকা পঞ্চাশ কোটি টাকা দিয়ে শুরু করেছিল। এখন তো চার শত কোটি টাকা মিনিমাম লাগে। ঠিক তেমনভাবে আমরা যখন ব্রোকার হয়েছি তখন পেইড আপ ক্যাপিটালের তেমন কোনো বালাই ছিল না । বিশ-পচিশ লাখ টাকা পেইড আপ দিয়ে আমরা কোম্পানি শুরু করেছি। এখন তো অনেকেরই পাঁচ কোটি টাকা দশ কোটি টাকা পেইড আপ আছে।

যেটা নিয়ে আমরা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে দরবার করব, সেটা হচ্ছে হেয়ার কাটিং নিয়ে। আমাদের প্রফিটের ওপর এতো পারসেন্ট প্রভিশন করতে হবে, রিসিভয়েবলের ওপর প্রভিশন করতে হবে। প্রভিশনের যে ব্যাপারগুলো রাখছে সেটার জন্য আমরা একটু আপত্তি করব। ধরেন, আমরা হাউজের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ করব, আমরা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে চেক পাব। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে যদি একটা ব্রোকার চেক পায়, সেটাতে প্রভিশন করার কী আছে? সেখানেও প্রভিশনের কথা বলছে।

মার্কেট তো ভালো স্টেবলের দিকে যাচ্ছিল এবং ভালো আছে বলে মনে হচ্ছে এখনো। ইলেকশন ইয়ার তো উঠা-নামা করবেই বাজারে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আমরা যে বিহেবিয়ারটা চাচ্ছিলাম তাদের কাছ থেকে তেমন হচ্ছে না। যেমন তারা লং টাইমের কোনো ইনভেস্টমেন্টে খুব বেশি যাচ্ছে না। যেটা ফরেন ইনভেস্টমেন্টরা যাচ্ছে। আমাদের লোকালরা সেভাবে যাচ্ছে না। আগামী দিনগুলো কিন্তু অনেক অনেক সুন্দর দিন আসছে আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য। যেমন আমাদের স্টক মার্কেটের জন্য, পুঁজি বাজারের জন্য আমরা বলছি। আমরা যদি স্ট্রেটেজিক পার্টনারের জিনিসটা সমাধান করতে পারি আগামী মাসের মধ্যে তাহলে কনফিডেন্স লেভেলটা অনেক বেড়ে যাবে।

বিদেশিদের অনেক ইনকোয়ারি আছে। আমাদের নক করছে। তো ওরা আসবে। আমাদের দেশের অনেকেই বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। তারা যখন দেখবে যে চেন্নাই স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পার্টনার তখন তাদের কনফিডেন্স লেবেলটা অনেক বেশি বেড়ে যাবে। কোম্পানির নিজস্ব কোনো ডিসক্লোজার আছে কিনা, পারচেজেস ইনফরমেশন আছে কিনা। পারচেজেস ইনফরমেশন থাকলে আপনি ডিসক্লোজ করবেন। মনে করেন, একটা কোম্পানি এক্সপেনশনে যাবে, যেভাবেই হোক এটা লিকড হয়েছে কোম্পানি থেকে, এখন কিছু কিছু ইনভেস্টমেন্টররা জানে, তারা শেয়ারটাকে নিয়ে টানাটানি করে অনেক উপরে উঠিয়ে দিয়েছে।

এনকোয়ারির দরকার আছে। এখন স্টক এক্সচেঞ্জের একটা দায়িত্ব আছে এটাকে জানা যে আপনাদের ডিসক্লোজ করার মতো কিছু আছে কিনা। সেই জন্য চিঠিটা দেয়। এখন কোম্পানি জানিয়ে দেয়, না, আমাদের কিছু নাই। এই যে নাই কথাটা লিখে দিল, তাতে আপনারা জানলেন যে এটায় কিছু নাই। কিন্তু যদি পরে দেখা যায় যে সে এক্সপানশন করছে উইদিন এ মান্থ অর টু। তাহলে তো তাকে ধরা যায়, আপনি আমাকে কেন এসব আনডিসক্লোজ রেখে এটা কেন করলেন। এই জিনিসগুলোর জন্য একটু অসুবিধা হয়। আমাদের ইস্যুয়াররাও সেভাবে প্রস্তুত হয় না আমাদের বাজারের যে কী কী ইনফরমেশনগুলো কখন দিতে হয় অনেক ইস্যুয়াররাই এখন পর্যন্ত সেভাবে এগিয়ে আসেনি। ধরেন, বাজার বাড়লে ইস্যুয়াররা তাদের শেয়ার সেল করতে থাকে।

যখন ডিক্লারেশনটা আসে ইস্যুয়ারের কোম্পানি এতগুলো শেয়ার বিক্রি করছে, তখন বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি তখন মনে করবেন, এখন কেন কিনব? একটু পরে কিনি। ও যদি বেচে তাহলে দাম হয়তো একটু কমবে অথবা একটা কিউরিসিটি জাগে, কোম্পানির ভিতর জানি কী হয়েছে। ডিরেকটরের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি বলব যে রেগুলেটরি ফেইলর আছে। যখন মার্কেট বাড়তে থাকে তখন কিন্তু তাদের প্রতিটা ট্রেকে প্রতিটা মুহূর্তে মনিটরিং হয়। তখনও কিন্তু বুঝতে পারা যায় শেয়ারটা নিয়ে কী হচ্ছে।

মোস্তাক আহমেদ সাদেক
প্রেসিডেন্ট
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন।

রাসেল/