বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা) ঋণ দেবে ভারত। এটি ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নামে পরিচিত। এর আগেও এলওসির আওতায় দুইবার ঋণ দিয়েছে ভারত। এটি হবে তৃতীয় ঋণ।
৪ অক্টোবর বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং ঢাকা সফররত ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির উপস্থিতিতে চুক্তিটি সই হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাজ কুইনা নিজ নিজ দেশের পক্ষে এই ঋণচুক্তিতে সই করেন।
সকাল ১০টা ৫ মিনিটে অর্থমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে চারশ কোটি ডলারের ‘ক্রেডিট লাইন এগ্রিমেন্ট’ সই হয়। এর আগে ভারত সরকারের প্রথম দফায় প্রতিশ্রুত ঋণের ৮০ কোটি ডলার থেকে এ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় দফায় প্রতিশ্রুত ২০০ কোটি ডলার ঋণে ১২টি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭ কোটি লাখ ডলার, যা আসবে দেশটির এক্সিম ব্যাংক থেকে। এর আগে বেলা ১০টার দিকে ভারতের অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ে পৌঁছান। এ সময় তাকে স্বাগত জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এবারের চুক্তির অর্থ দিয়ে ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অন্য স্থানে নেওয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন, বুড়িগঙ্গা রিভার রেস্টুরেশন প্রজেক্ট, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ, ঈশ্বরদীতে রেল ও সড়কপথের জন্য আইসিডি নির্মাণ, মংলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তরল বর্জ্য শোধনাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।
কোনো ঋণচুক্তির আওতায় এটিই হচ্ছে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় ঋণ। এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার বা প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছান ভারতের অর্থমন্ত্রী। বিকেল ৩টায় ভারতের একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার কুর্মিটোলায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে পৌঁছান তিনি। তাকে স্বাগত জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে সেখান থেকে অরুণ জেটলিকে সোনারগাঁও হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরের সময় তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য গত এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বাংলাদেশের জন্য ৪৫০ কোটি ডলারের একটি ভারতীয় ক্রেডিট লাইন এগ্রিমেন্টের ঘোষণা দেয়া হয়। এরআগে ২০১০ সালের ৭ আগস্ট দুই দেশের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের প্রথম এলওসি ঋণচুক্তি হয়। পরে অবশ্য ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদানে রূপান্তর করে ভারত। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ২০০ কোটি ডলার ঋণ বা দ্বিতীয় এলওসি দেয়ার সমঝোতা চুক্তি হয়। পরে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়।
এ চুক্তি সইয়ের ফলে বাংলাদেশকে ভারতের দেয়া সর্বমোট ক্রেডিট লাইনের পরিমাণ দাঁড়াল আটশ কোটি ডলার। তৃতীয় ডলার ক্রেডিট লাইন চুক্তি সইয়ে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারভিত্তিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জন করবে। এ ঋণের আওতায় ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৪ অক্টোবর ২০১৭