ভাসানচরে যেতে রোহিঙ্গাদের প্রস্তুতি

কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে শিগগিরই ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ভাসানচরকে। কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্য থেকে এখনো পর্যন্ত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য সেচ্ছায় তালিকাভূক্ত হয়েছেন। প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় অনেক রোহিঙ্গা সরকারী সুযোগ গ্রহণের জন্য ভাসান চরে যেতে মনস্থির করছেন। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সৃষ্ট সুবিধাগুলোকে মূল্যায়ন করছেন কিছু কিছু রোহিঙ্গা।খবর ভিওেএ

যদিও রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী। কেউ কেউ অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ভাসানচরকেও বেছে নিচ্ছেন।

তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কয়েক দফায় ভাসানচর পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু বিষয় সরকারের বিবেচনার জন্য তুলে ধরেছিল। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত সম্মতি পর্যন্ত পৌঁছেনি।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা লুইস ডনোভান ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, জাতিসংঘ ভাসান চরে স্থানান্তর স্বেচ্ছামূলক হওয়া উচিত বলে মনে করে এবং বাংলাদেশ সরকার তা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভাসান চর সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের ধারণা দেয়ার পর রোহিঙ্গারা সেচ্ছায় স্থানান্তরে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।

রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়ার জন্য ভাসানচরে ইতোমধ্যে দেড় হাজার একর জুড়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করতে তৈরি করা হয়েছে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। নির্মাণ করা হয়েছে ১২০টি গুচ্ছ গ্রাম বা ক্লাস্টার। প্রতিটি ক্লাস্টারে রয়েছে ১২টি বড় টিনশেট, ৪তলা বিশিষ্ট একটি করে আশ্রয় কেন্দ্র ও একটি করে পুকুর। ভাসানচরে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ফুট পাঁকা সড়ক। স্থাপন করা হয়েছে সোলার প্যানেল, মোবাইল ফোন টাওয়ার ও ইন্টারনেট সংযোগ। রয়েছে কৃষি, হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, গবাদী পশু পালন, ব্যবসা বাণিজ্য, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানসহ নানামুখী সুযোগ। নিরাপত্তার জন্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, নৌবাহিনীর সম্মুখ ঘাঁটি, হেলিপ্যাডও স্থাপন করা হয়েছে ভাসানচরে। সর্বশেষ পুলিশের একটি পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ। এসব ইতিবাচক বিষয়গুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের অবহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।

ভাসানচরে এতো আয়োজনের পরও এটি কেবল অস্থায়ী আশ্রয়; সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান