ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ট্রাম্প জামাতার ব্যবসা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও তার উপদেষ্টা জারেড কুশনার ভুয়া কাগজ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন।

প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি নিউইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৩৪টি ভবন হাতিয়ে নেন। কুশনারের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান কুশনার প্রোপার্টিস ২০১৫ সালে যখন তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন কেনেন তখন সেখানকার বেশিরভাগ ভাড়াটেদের জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছিল। ভাড়াটেদের পরোক্ষভাবে উচ্ছেদের জন্য তারা ভাড়া বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল মুনাফা বাড়ানো।

এমন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মাত্র দু’বছরেই প্রতিষ্ঠানটি ভবন তিনটি কেনা দামের প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে অর্থাৎ ৬ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেয়। সেজন্য তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। শহর কর্তৃপক্ষ যখন বেশ কিছু ফ্ল্যাট স্বল্পমূল্যে বিক্রির ঘোষণা দেয় তখন ভুয়া কাগজ তৈরি করে তার প্রতিষ্ঠান এমন শতাধিক ভবন কিনে নেন তিনি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

গেল তিন বছরে কুশনারের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের সব কাগজপত্রে সিইও হিসেবে তিনি নিজেই স্বাক্ষর করতেন। যদিও ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই কুশনারই নিজেকে দেশটির সবচেয়ে সৎ ব্যবসায়ী এবং পরামর্শদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ নেন। কুশনারের মিথ্যা তথ্য সরবরাহের বিষয়টি তদন্তাধীন আছে বলে জানিয়েছে সরকারের একটি সূত্র।

এমন কারচুপি ফাঁসের পর ভাড়াটেদের অধিকার আদায়ে কাজ করা হাউজিং রাইটস ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অ্যারন কার বলেন, ‘লোভের কারণেই প্রতিষ্ঠানটি এমনটা করেছে। আসলে সরকারের কাছে তথ্য গোপন করে মূলধনের বিপরীতে বহু গুণ বেশি মুনাফা লাভের জন্য তারা সরকারের কাছে মিথ্যা তথ্য সংবলিত কাগজপত্র পেশ করে।’

প্রতারণার তথ্য ফাঁসের পরও কৌশল থেকে সরে আসেনি কুশনারের প্রতিষ্ঠান। প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, প্রতিষ্ঠানটির সব কাগজপত্র তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একটি সংস্থাকে তারা খতিয়ে দেখার জন্য দিয়েছে। যদি সেখানে কোনো অনিয়ম বা ভুল তথ্য বের হয়ে আসে তবে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত তা নিরসনের ব্যবস্থা করবে। কুশনার অবশ্য ভাড়াটের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগটি নাকচ করছেন না। অ্যারন কার বলছেন, ‘গত ৩০ বছরে হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ ও বরাদ্দ হয়েছে এবং অভিযোগের পাল্লাও ভারি হয়েছে।’

কুইন্সের অ্যাসটোরিয়া এলাকায় ২০১৫ সালের দিকে যে তিনটি ভবন কুশনার কিনেছিলেন, সেই সময় সরকারের কাছে সংস্কারের জন্য আবেদনের সময় উল্লেখ করেছিলেন যে সেখানে কোনো মানুষ বাস করে না। কিন্তু সেখানে মানুষ বাস করলেও তাদের কৌশলে ঘরছাড়া করা হয়। কিন্তু আবাসন অধিকার সম্পর্কিত সংস্থাটি তদন্ত করে দেখেছে, সরকারের কাছে কুশনারের প্রতিষ্ঠানটির পেশ করা প্রায় ৮০ ভাগ কাগজের তথ্যই সঠিক নয়। নিউইয়র্ক শহরে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালে এমন অন্তত ৩৪টি ভবন তারা ভুল তথ্য পেশ করে নিজেদের করে নেন। দীর্ঘদিন বিষয়টি অন্ধকারে থাকলেও সম্প্রতি একাধিক ভাড়াটে এবং ফ্ল্যাটের মালিকরা অভিযোগ জানাতে থাকে।

আজকের বাজার/আরজেড