রোহিঙ্গারা এবার ভুয়া বাবা-মা’র পরিচয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় কিছু নারী-পুরুষ বাবা-মা সেজে রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করছেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও।
নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার এ চেষ্টায় তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ কিছু স্বার্থান্বেষী মহল।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জন্ম সদন থেকে শুরু করে নাগরিকত্বের সদনও পেয়ে যাচ্ছেন তারা নানা পন্থায়। ‘ভাড়ায় খাটা বাবা-মা’রা নিজেদের ভোটার আইডি, স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা ব্যবহারে সহযোগিতা করছেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা এবং তার আশপাশে এ ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
সারা দেশে ভোটার তথ্য সংগ্রহ সম্প্রতি শেষ হয়। চট্টগ্রামে ভোটার হালনাগাদ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক বিশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
ইসি সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন,ইসি ভুয়া সনদ প্রদানকারী জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। বিষয়টি চিঠি দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের আরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের ধারণা রোহিঙ্গাদের অনেকে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে তারা যেন ভোটার হতে না পারে সেজন্য বিশেষ কমিটি কাজ করছে। কমিটিতে ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা রয়েছেন। তাদের যাচাই-বাছাইয়ের পরই ভোটার করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে সহযোগিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনেক রোহিঙ্গা আবার বাংলাদেশে বিয়েও করেছে। এক্ষেত্রে শ্বশুর বাড়ির লোকজনই তাদেরকে ভোটার করতে তাদের সন্তান পরিচয় দিয়ে নিজেদের এনআইডি জমা দিচ্ছেন। অনেক রোহিঙ্গা বছরের পর বছর বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সখ্য রয়েছে। টাকার বিনিময়ে তারাও এসব রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে চাপ দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে উল্লেখ করে বলেন, যে সব রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে ভোটার হয়েছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাদ দিলে অন্যরা সতর্ক হবেন। তিনি এলাকাভিত্তিক ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেয়ার প্রস্তাব করেছেন।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, জনপ্রতিনিধিদের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। কিছু জনপ্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন। রোহিঙ্গা শনাক্তকরণে ডিএনএ টেস্ট করার প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।
তিনি বলেন, ভুয়া পিতা-মাতা শনাক্তকরণে দু-একজনের ডিএনএ টেস্ট করা যেতে পারে।
ওই সভায় পার্বত্য তিন জেলার ভোটার করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা ওঠে আসে। এর মধ্যে রয়েছে- পার্বত্য অঞ্চলের অনেক বাসিন্দা ভূমিহীন, অনেকের বাড়িতে বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ নেই। তাই তারা ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে দলিল বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট দিতে পারছেন না।
আলীকদম উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় সেখানে ডকুমেন্ট ফটোকপি করতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসের কারণে সেখানে অনেক ভাসমান লোক রয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নেই। ওই সভায় ভোটার আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭