ভোজ্য তেলের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে : বাণিজ্যমন্ত্রী

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভোজ্য তেলের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিশ^বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য পরিস্থিতি প্রচার মাধ্যমে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন,‘ভোজ্য তেল একটি আমদানি নির্ভর পণ্য। দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ স্থানীয় উৎপাদন থেকে মিটানো হয়, বাকী ৯০ ভাগই আমদানি করে প্রয়োজন মিটাতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবার কারণে আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে ভোজ্য তেলের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে এবং বাজারে যাতে তেলের কোন ঘাটতি না হয় এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে।’
টিপু মুনশি আজ সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের  সম্মেলন কক্ষে ভোজ্য তেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তৃতাকালে এ সব কথা বলেন।
‘আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতেও ভোজ্য তেলের মুল্য আমাদের দেশের তুলনায় বেশি বেড়েছে’ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত ভোজ্য তেলের মূল্য ১৯৮ টাকা। একই সময়ে ভারতে বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ২২৪ দশমিক ৬৫ টাকা, পাকিস্তানে প্রায় ২৩৮ দশমিক ৬৯ টাকা এবং নেপালে প্রায় ২১৪ দশমিক ৭৫ টাকা। আমরা কঠোর ভাবে মনিটরিং করছি যাতে তেলের ক্রয় মূল্য, পরিবহন ব্যয়, শুল্কসহ সবধরনের ব্যয় ধরে যৌক্তি পর্যায়ে ভোজ্য তেলের মূল্য নিশ্চিত করা যায়।’
তিনি বলেন, ভোজ্য তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিলগেইট থেকে শুরু করে পাইকারী এবং খুচড়া পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অনিয়ম ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে কিছু অসৎব্যবসায়ী বাজারে ভোজ্য তেল সরবরাহ না করে মজুত করার চেষ্টা করেছে। তবে, অভিযান পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। আগামীতে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য আহবান জানানো হয়েছে।
আজকের ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী জুন থেকে আবারও এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে ভোজ্যতেল সরবরাহ করা হবে। এ সময় তিনি জানান, টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে ভোজ্য তেল সরবরাহ অব্যাত রয়েছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে দেশের ১ কোটি নি¤œআয়ের পরিবারকে ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ^বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ১০ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। অগ্রাধীকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত তেল খালাস, শুল্কায়ন এবং পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিলারদের নামে ভোজ্য তেলের  সাপ্লাই অর্ডারের (এসও) মাধ্যমে তেল উত্তোনের সময় কমিয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে, যাতে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। রিফাইনারীগুলো থেকে প্রতি দিনের তেল সরবরাহের তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা নেয়া হচ্ছে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব  তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড টেরিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আফজাল হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মালেকা খায়রুন্নেছা, টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান,জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমানসহ ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা এ প্রেস ব্রিয়িংয়ে উপস্থিত ছিলেন।