ভ্যাট নিয়ে আমাদের যে চ্যালেঞ্জ ছিল আজ দেখছি সেটা আমাদের জন্য অপরচুনিটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন গবেষণার মাধ্যমে আমরা চ্যালেঞ্জগুলো আরও মোকাবেলা করার সুযোগ পাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিয়েই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান ৮ অক্টোবর রোববার রাজধানীর আইডিইবি ভবনে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
‘জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর অভিঘাত বিষয়ে গবেষণা’ বিষয়ক এ মতবিনিময় সভায় দেশের সব বেসরকারি গবেষণা সংস্থা অংশগ্রহণ করে।
নজিবুর রহমান বলেন, আমি সব সময় বলি-এভরি চ্যালেঞ্জ ব্রিংস অপারচুনিটি। ভ্যাট নিয়ে আমাদের যে চ্যালেঞ্জ ছিল আজ দেখছি সেটাও আমাদের জন্য অপরচুনিটি হয়ে দাঁড়িয়েছে হচ্ছে। আমরা এখক নতুন ভ্যাট আইনের আরও গভীরে যেতে চাই। ব্যবসায়ীদের এ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে চাই।
তিনি বলেন, এফবিসিসিআই ও এনবিআর স্বাধীনতার পর থেকে হাত ধরে চলছে। এফবিসিসিআই-এনবিআর পার্টনারশীপ এখন হ্যান্ড এন্ড গ্লাফস এর মতো। চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৫ সালে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে ভ্যাট জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ, ট্যাক্স ওয়ার্কিং গ্রুপ ও কাস্টমস ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি হয়। এ ৩ ওয়ার্কিং গ্রুপকে এখন সক্রিয় করতে হবে। নতুন ভ্যাট আইনের ইম্প্যাক্ট নিয়ে যে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা হবে তা যৌথভাবে হবে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, এককভাবে এনবিআর আর কিছু করতে চাই না। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ, বিনিয়োগকারীদের নিয়েই কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যক্ষ আইন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এ আইন নিয়েও আমরা এফবিসিসিআই এর সাথে যৌথভাবে কাজ করবো। আয়কর আইনের যে নতুন খসড়া তৈরি হচ্ছে সেটা নিয়ে আমরা এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বসতে চাই। বসে কোথায় কোথায় দৃষ্টি নিবন্ধ করা প্রয়োজন সে বিষয় বুঝতে চাই। একইভাবে কাস্টমস অ্যাক্ট এর যে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়েছে, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উন্ডো অথোরাইজ ইকোনমিক অপারেটর, গ্রিন চ্যানেল, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট নিয়ে যে কাজ করছি তা নিয়েও বসতে চাই।
চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব প্রয়োজন ব্যবসার উন্নয়নের জন্য। আমাদের যদি অবকাঠামো উন্নত হয়, ব্যবসায় অগ্রগতি হবে। অবকাঠামো বাড়লে মান সম্মান বাড়বে। দেশে বিনিয়োগ আসবে। আমাদের ব্যবসার দর কষাকষি বাড়বে।
তিনি বলেন, ভ্যাট নিয়ে এনবিআর বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফোরামে কাজ করছে। গ্লোবাল ফোরাম অন ভ্যাট। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সমাজও বলেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজের সাথে এনবিআর যেভাবে কনস্ট্রাকটিভলি অ্যাঙ্গেজড তা খুবই প্রশংসনীয়। এ ধরনের ফোরাম আমরা বাংলাদেশে নিয়ে আসতে চাই। আমরা একটি রিজিওনাল ফোরাম হোস্ট করতে পারি যেখানে ভ্যাট নিয়ে যেসব দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে এনে তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি এবং এগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে পারি।
চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট বাস্তবায়নে চারটি প্রতিপাদ্য বিষয় আছে। তা হচ্ছে-ব্যবসায় সহায়তা প্রদান করা, দেশিয় শিল্পের সুরক্ষা বিধান, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখা ও দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এ চারটি বিষয়ে এনবিআর আগেও মনোযোগী ছিল, ভবিষ্যতে আরও মনোযোগী হবে।
নতুন ভ্যাট আইনের ইম্প্যাক্ট নিয়ে গবেষণার বিষয়ে তিনি বলেন, এ অ্যানালাইসিস হবে অপারেশনাল একশন রিসার্চ। এখান থেকে একটি একটি একশন প্লান তৈরি হবে।
প্রস্তাব দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেশিয় গবেষণা সংস্থা নিয়ে একটি কনসোটিয়াম অফ রিসার্চ এনটিটিসিজ তৈরি করতে চাই। বিশেষ করে সিপিডি, পিআরআই, বিআইডিএস, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, বেসিস ওই কনসোর্টিয়ামে থাকতে পারে। তারা একটি গবেষণা করতে পারে। এনবিআর, এফবিসিসিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিডাসহ সব সংস্থা নিয়ে একটি রিভিউ গ্রুপ করতে পারি। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিভিউ করে এ গবেষণা শেষ করতে পারি। পরে তা একটি পলিটিক্যাল লেবেলে উপস্থাপন করতে পারি। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প এ গবেষণায় সব ধরনের সহায়তা দেবে।
সভায় এফবিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল হাসান। নতুন ভ্যাট আইনের বিস্তারিত তুলে ধরেন ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের উপ পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহিম।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৮ অক্টোবর ২০১৭