আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেষ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার কার্যকর হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তবে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ কিছুটা লাঘব করতে বাজেটে এবার ২০০’র বেশি পণ্য ভ্যাট অব্যাহতি পেতে পারে। নতুন আইনে বিদ্যমান প্রায় ১৯ শ’ ভ্যাটমুক্ত পণ্য তালিকার সঙ্গে এই দুই শ পণ্য ও সেবা যোগ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এনবিআর সেই তালিকা চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে নতুন ভ্যাট আইনই হচ্ছে অর্থমন্ত্রীর এবারের বিশাল রাজস্ব লক্ষ্য অর্জনের মূল অস্ত্র। সামগ্রিকভাবে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআরকে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে, যা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্য থেকে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। আর নতুন ভ্যাট আইনের ওপরেই ভরসা করে আগামী অর্থবছরে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে চায় এনবিআর।
দক্ষ মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, বিনিযোগের গতি সঞ্চারসহ আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বাজেট চূড়ান্ত করেছে সরকার।
এটি বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ১১তম বাজেট।
এবারের বাজেটে অভ্যন্তরীণ শিল্পের সুরক্ষায় বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কের তালিকাও বহাল থাকছে। তাই নতুন ভ্যাট আইনে ১৭০টি পণ্য ও সেবায় সম্পূরক শুল্ক থাকার কথা। এর পরিবর্তে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কের তালিকার ১৪ শ পণ্য ও সেবার ওপরেই সম্পূরক শুল্ক রাখা হচ্ছে।
নতুন করে যেসব পণ্য ও সেবা ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় আসছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হালকা প্রকৌশল খাতে মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) সংযোজন শিল্প; ভোজ্যতেল; সফটওয়্যার শিল্প; বাস ট্রেন লঞ্চের টিকিট; সব ধরনের প্রশিক্ষণ সেবা, হার্টের রোগীর রিং, ডায়ালাইসিসের কৃত্রিম কিডনি ইত্যাদি।
নতুন আইনে মৌলিক খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন, চিকিৎসা ও শিক্ষা, কৃষি, মৎস্যসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাতের ১ হাজার ৮৭৪টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি আছে। শেষ মুহূর্তে এই তালিকায় আরও পণ্য ও সেবা যুক্ত হচ্ছে।
বর্তমানে মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর ও এসি সংযোজন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন হারে ভ্যাট দিতে হয়। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এই তিন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হতে পারে। এতে দেশে তৈরি মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর ও এসির দাম কমতে পারে।
দেশে তৈরি সফটওয়্যার কিনলে বর্তমানে ৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট দিতে হয়। এটি আর থাকছে না। এমনকি ওয়েবসাইট তৈরি করে তা সরবরাহ পর্যায়েও ভ্যাট বসার কথা। এর ওপরেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে। মোটা দাগে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের সব ধরনের পণ্য বা সেবা সরবরাহের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে।
এ ছাড়া আন্তনগর ট্রেনে ভ্রমণের টিকিটের ওপর নতুন আইনে ভ্যাট বসার কথা ছিল। এই ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে। ট্রেনের টিকিট কিনলে ভ্যাট দিতে হবে না। তবে এসি সিট বা বাথের টিকিট কিনলে ভ্যাট দিতে হবে। একইভাবে ৪০ সিটের অনধিক নন-এসি বাসের যাত্রীদের টিকিটের ওপর ভ্যাট দিতে হবে না। তবে এসি বাসের টিকিটে ভ্যাট কাটা হবে। তবে নগর সার্ভিসের এসি বা নন–এসি বাসের টিকিটে ভ্যাট থাকবে না। লঞ্চ-স্টিমারে ভ্রমণের টিকিটের ওপর ভ্যাট থাকবে না। এ ছাড়া রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবার ওপর ভ্যাট বসার কথা থাকলেও তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে কেবল সরকারি প্রশিক্ষণ সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি আছে। নতুন ভ্যাট আইনে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রশিক্ষণ-কর্মশালার ওপর ভ্যাট তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যে প্রশিক্ষণ সেবা দেয়, সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে যে ফি নেওয়া হয়, তা ভ্যাটমুক্ত থাকবে। তবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিউশন ফিসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফির ওপর ভ্যাট থাকবে। তবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ফির ওপর ভ্যাট নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা আছে। সেই কারণে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট আদায় করতে পারবে না এনবিআর।
ভোজ্যতেল আমদানি থেকে শুরু করে সরবরাহ ও বিক্রি—সব পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা হচ্ছে। বর্তমানে তিন পর্যায়ের পরিবর্তে এক পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
নতুন আইনে ভ্যাট মওকুফের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের তালিকা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আবার কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতিতেও এ সুবিধা থাকছে। হার্টের রোগীদের অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে রিং পরাতে হয়। এই রিংয়ের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আবার ডায়ালাইসিস করতে কৃত্রিম কিডনি যন্ত্র কেনায় ভ্যাট থাকবে না। তেমনি রক্তের ব্যাগ কিনতেও ভ্যাট দিতে হবে না।
৭৫০ বর্গফুটের কম আয়তনের ফ্ল্যাট কেনায় দেড় শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে। আবার জমি কেনার নিবন্ধনের সময় আড়াই শতাংশ ভ্যাটও থাকছে না।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১ জুন ২০১৭