নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা বিভাগের জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।
১৯ জুন সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন বিষয়ক প্রথম বিভাগীয় সভায় ঢাকা বিভাগের জেলা প্রশাসকেরা এ আশ্বাস দেয়।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় নতুন ভ্যাট আইনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ, মূল্য সংযোজন কর) কমিশনার মো. মতিউর রহমান।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে প্রথম চ্যালেঞ্জ ভোক্তাদের জানানো ভ্যাট কীভাবে ক্যালকুলেশন করা হয়েছে, ভোক্তা পর্যন্ত কত ভ্যাট যাবে। কারণ ভোক্তা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পড়বে না। মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট ক্যালকুলেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে হবে। বড় ব্যবসায়ীদের রেয়াত পেতে সমস্যা হবে না। কারণ তাদের হিসাব অনেক স্বচ্ছ ও সহজ। কিন্তু খুচরা বিক্রেতাদের রেয়াত নিতে সমস্যা হবে। রেয়াত সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের এডুকেটেড করা চ্যালেঞ্জ। ভ্যাট অনলাইন নিবন্ধন নেওয়ার ক্ষেত্রে সেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়- তা যাচাই করাও চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে দোকানে দোকানে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার বা ইসিআর দিতে না পারলে সঠিকভাবে ভ্যাট আসবে না। ইসিআর সরবরাহ, এর মাধ্যমে ভ্যাট আহরণ এনবিআর ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ভোক্তা পণ্য কেনার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাট দিয়ে দেয়। ভোক্তা কেন সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারবে না- তার দেওয়া ভ্যাট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা?
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে আমরা সভা, প্রচার করে যাচ্ছি। নরসিংদী এলাকায় ৪ হাজার শিল্প-কারখানা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, নতুন আইনে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে ভ্যাট রিটার্ন দিতে হলে ক্যালকুলেশনের জন্য জনবলের প্রয়োজন। ভ্যাট ক্যালকুলেশন করা চ্যালেঞ্জ।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনেক সভা করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা ইসিআর ব্যবহার করে ভ্যাট দিলেন। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা একই পণ্য বিক্রি করলেন কিন্তু ভ্যাট দিলেন না- তাহলে সব ক্রেতাতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যাবে। ফলে বড় ব্যবসায়ী ইসিআর মেশিন রাখতে আগ্রহী হবেন না।
তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টার্নওভারের আওতায় থাকবে তারা তো ভোক্তা থেকে ঠিকই ভ্যাট নেবেন- কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন না। মাঠ পর্যায়ে ভোক্তার ভ্যাট সঠিকভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমাদানের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা বা কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করতে না পারলে ভ্যাট আইন ফলফসূ হবে না।
কর অঞ্চল-৭ এর কর কমিশনার মেফতা উদ্দিন খান বলেন, হোটেলগুলোতে ভ্যাট ফাঁকি দিতে গিয়ে আয় গোপন করে। এতে সরকার ভ্যাটের সঙ্গে আয়করও হারাচ্ছে। ভোক্তার ভ্যাট সঠিকভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আন্দোলন বা গণ জোয়ার সৃষ্টি করতে পারলে- ভ্যাট আত্মসাৎ প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও কমবে।
ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনার মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাট ফাঁকি হয় বা ফাঁকির প্রচেষ্টা থাকে। ভ্যাট ফাঁকি রোধের জন্য এনবিআর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভ্যাট চেকার নামে একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। ভোক্তা যদি মনে করে যে তার ভ্যাট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা- সে ওই অ্যাপে যাচাই করে দেখতে পারে। আর যদি জমা না হয় তাহলে এনবিআরের অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে সবাই সচেতন হয়ে চালান বুঝে নিলে ভ্যাট ফাঁকি রোধ হবে।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন বলেন, ব্যবসায়ীরা সহজে ভ্যাট দিতে চায় না। সরকারের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রী চান নিজস্ব আয়ে পদ্মাসেতুসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। টাকা আসবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুধু এনবিআর নয় জেলা প্রশাসকদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব উঠে। এর ফলে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভ্যাট আহরণ শুধু এনবিআর নয় সব সরকারি কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব পড়ে গেছে।
সভায় এনবিআর সদস্য ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল হাসান, ঢাকা পূর্ব কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১৯ জুন ২০১৭