ভ্যাট আইন স্থগিতে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হবে

নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ার ফলে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদে ১৬তম (বাজেট) অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এ কথা জানান। ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন ভ্যাট স্থগিত হওয়ার ফলে ২০ হাজার কোটি টাকার মত আমাদের রাজস্ব আয় হ্রাস পাবে। আমরা দেখবো, বাজেটে কোথায় কিভাবে এটা অ্যাডজাস্ট করা যায় কিনা অথবা দেশবাসীকেও বলবো সকলে যদি আয়কর দেন সেটা কিন্তু তাদেরই উন্নয়নের কাজে লাগবে।

শেখ হাসিনা জনগণের অর্থে দেশের উন্নয়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি হবে, মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা হবে, আমরা বিদ্যুৎ ও ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারবো। সবদিক থেকেই মানুষ উপকৃত হবে। এই সামান্য একটু ট্যাক্স দিলেই তিনি অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তাতে আমাদের ঘাতটিও পূরণ হবে, দেশও উন্নত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার) সালের বাজেট ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। সেখানে আজ ২০১৭-১৮ সালে আমরা দিয়েছি ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট। সেইসাথে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে বাজেট আমরা ৬ হাজার ২৫ ভাগ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের ২০১৬-১৭ অর্থবছর আমরা যে বাজেট দিয়েছিলাম, সাধারণত সবসময় আমরা বাজেট পর্যালোচনা করি এবং একটা পর্যায়ে কতটা ব্যয় করা সম্ভব তা নির্ধারণ করে কিছু কাটছাঁট করি।

তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পূরক বাজেটে কোনো কাটছাঁট করিনি। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম কি পরিমাণ টাকা ব্যয় করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারি। আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। সেটা হলো ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আসাদের যে উন্নয়ন বাজেট ছিলো প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার মধ্যে আমরা ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকাই উন্নয়ন বাজেটে ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো অনেকে পারসেন্টেজ হিসাব করে অনেক বড় বড় পত্রিকার হেড লাইন করে ফেলেছেন। অনেকেই এটা একবারও দেখেননি যে কত কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট ছিল আর কত কোটি টাকার বাস্তবায়ন হয়েছে। আর ১ লাখ কোটি টাকার উপরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কে করতে পেরেছে? কে দিতেই বা পেরেছে। কোন সরকার কোনদিনও পারেনি। কেবল আওয়ামী লীগ সরকারই পেরেছে। সেদিক থেকেও আমরা বলবো একটা ইতিহাস আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার বক্তৃতার প্রেক্ষিতে রাজধানীর জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পেছনে পাকিস্তান আমলের আইয়ুবশাহী শুরু করে জিয়া, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং এরশাদ সরকারের জলাশয় ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ ও বক্স কালভার্ট নির্মাণের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, মতিঝিল, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা এবং ধোলাইখাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে রাজধানীতে কেবল আন্ডারগ্রাউন্ডে পানি টেনে নেয়ার মাধ্যমে জলবদ্ধতা সবসময় দূর করা যাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা উদাহারণ হিসেবে বলেন, সচিবালয় এবং তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মুখের জলাবদ্ধতা দূর করতে তার সরকার রাস্তার নিচে দিয়ে ক্যানেল কেটে সচিবালয়ের আন্ডারগাউন্ডের সঙ্গে ওসমানী উদ্যানের পুকুরটির সংস্কার করে তার সঙ্গে সংযোগ করে দেয়ায় তাতে পানি সরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্ডারগ্রাউন্ডের পানি সরার পথের সঙ্গে তেজগাঁও বিমানবন্দর এলাকায় এসএসএফের একটি ক্যানেলের সংগে সংযোগ করে দেয়াতেই পানি সরার সুযোগ পাচ্ছে। এরকম পানি সরানোর সুযোগ না দিয়ে কেবল আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন দিয়ে রাজধানীর জলাবদ্ধতা সহজেই দূর করা যাবে না বলেও জানান।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ভূমি খেকোদের দখলের জন্যই রাজধানীতে আজকের জলাবদ্ধতা বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের জন্য কোনভাবেই বক্স কালভার্ট প্রযোজ্য নয়। রাস্তা থাকলে তার দুই পাশ দিয়ে খাল থাকবে। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।

এছাড়া সামনে কোরবাণীর ঈদকে লক্ষ্য ধরে সরকার দেশে লবণ আমদানীর উদ্যোগ নিয়েছে বলেও সংসদ নেতা তার ভাষণে উল্লেখ করেন।

আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ১৪ জুলাই ২০১৭