মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আহরণে ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যোগ হচ্ছে ‘ফিন্যান্সিয়াল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। নতুন এই সিস্টেমে কেন্দ্রীয়ভাবে সরাসরি মনিটরিং করা যাবে সারা দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ। এজন্য এনবিআরকে ব্যয় করতে হবে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নতুন সিস্টেম চালু করার জন্য পরিবর্তন করতে হবে চলমান ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) মেশিন। বর্তমানে বুলগেরিয়া, জর্জিয়া ও চীনের ২৪টি প্রদেশসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহারে এসেছে সফলতা। এনবিআর ওই উদাহরণকে সামনে নিয়ে ফিনান্সিয়াল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে বাস্তবায়ন করতে চায়।
সংস্থাটি মনে করছে, নতুন এ সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে পারলে একদিকে ব্যবসায়িক লেনদেনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি মূসক আদায় বৃদ্ধি পাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। যদিও এ ধরনের ডিভাইস চালু প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের বাজারকে বলেন, বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য সবার আগে বর্তমান বাজারে বিদ্যমান সব ইসিআর পরিবর্তন করতে হবে। কারণ বর্তমান ইসিআরে ওই ডিভাইস সংযুক্ত করা সম্ভব নয়। এজন্য ২০০৮ সালের ইসিআর-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করতে হবে।
মেশিনের ওই প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেটা অনুমোদন হয়ে গেলে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। বর্তমানে যে ইসিআর মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে, তা সহসাই পরিবর্তন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, নতুন ইসিআর পরিবর্তনের বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের পর ক্রয় করা হবে ফিনান্সিয়াল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এজন্য এনবিআরকে ব্যয় করতে হবে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা। এ সিস্টেম চালু হলে ক্রেতা বা বিক্রেতার লেনদেনের তথ্য সরাসরি এনবিআরের কাছে আসবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সব তথ্য এক জায়গায় বসে পর্যবেক্ষণ করা।
বর্তমানে বুলগেরিয়া, জর্জিয়া, চীনের ২৪টি প্রদেশসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ডিভাইস ব্যবহার হচ্ছে। নতুন ডিভাইসের সঙ্গে এনবিআর সিম সংযুক্ত করতে চাচ্ছে। যাতে পণ্য বা সেবা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা, বিক্রেতা বা রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারেন।
জানা যায়, ভোক্তার কাছ থেকে আদায়কৃত ভ্যাট ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো সরকারের কোষাগারে জমা দিচ্ছে না, এমন পর্যবেক্ষণ থেকেই ২০০৮ সালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআর বাধ্যতামূলক করে একটি সাধারণ আদেশ জারি করে এনবিআর। তবে ভ্যাট আদায়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআর ব্যবহার বাধ্যমূলক করলেও স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং বা অটোমেশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা ভেস্তে যেতে বসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আদেশ অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১১টি ব্যবসা ও সেবার ওপর ইসিআর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি তথ্যানুসারে, সারাদেশে মোট দোকানের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ এবং তার ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৭ লাখ ৫০ হাজার দোকান ইসিআর ব্যবহারের উপযোগী। এ হিসাবে ৯৯ শতাংশ দোকানেই এখনো ইসিআর নেই। এনবিআরের হিসাবেই সারাদেশে ইসিআর ব্যবহারযোগ্য প্রতিষ্ঠান কমপক্ষে ১ লাখ। বিপরীতে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ৮ হাজার।
তবে ভ্যাট ব্যবস্থা অনলাইন করতে ৫০ হাজার ইসিআর ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ব্যবসায়ীদের বিরোধিতায় দুই বছরের জন্য ভ্যাট আইন-২০১২ বাস্তবায়ন স্থগিত করায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এনবিআর।
আজকের বাজার : এসএস/ এসএস/ ৬ জানুয়ারি ২০১৮