ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট

বিশ্বের প্রায় ৮৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯। সব মিলিয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় লাখে পৌঁছেছে। মৃত্যু হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। মরণঘাতী ভাইরাসটির দ্রুত প্রসারের সঙ্গে অনিশ্চয়তা বাড়ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যে। আমদানি-রফতানি সীমিত হয়ে পড়া, উত্পাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকা, পর্যটকদের আনাগোনা কমে আসা এবং খেলাধুলা ও কনসার্টের মতো বেশি মানুষের সমাগম হয় এমন অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলায় ক্রমেই চাপ বাড়ছে অর্থনীতির ওপর। ঘনীভূত হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট।

প্রথমবারের মতো ভ্যাটিকান সিটিতে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর পোপ ফ্রান্সিস প্রার্থনা সূচিতে পরিবর্তন এনেছেন। বেথেলহেমকে লক ডাউন করে রাখা হয়েছে। এছাড়া ওমরাহ পালন সাময়িক বন্ধ রাখার পর মক্কায় কাবা শরিফ জীবাণুমুক্তকরণের জন্য খালি করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

একইভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে ভারতের অস্কার খ্যাত ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এসবের প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। অর্থনৈতিক এ অনিশ্চয়তার মধ্যে গতকাল এশিয়ার পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত থাকবে—বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে এমন আভাস পাওয়ার পরই গতকাল এশিয়ার পুঁজিবাজারে ধস নামে।

গতকাল টোকিওর পুঁজিবাজারের লেনদেন ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে দিন শেষ হয়েছে। এছাড়া সাংহাইয়ে লেনদেন কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ, হংকংয়ে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া সিডনি, সিউল, ব্যাংকক, জাকার্তায় পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছে ২ শতাংশের বেশি। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, ওয়েলিংটন, তাইপে, ম্যানিলার পুঁজিবাজারেও ১ শতাংশের বেশি লেনদেন কমেছে।

মার্কেট ফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান মিশেল সাওয়াল পরবর্তী অবস্থা কী হবে সেটি এখনই অনুমান করা সম্ভব না বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ভাইরাসটি কোন পরিস্থিতি তৈরি করবে এবং এর ফলে ঠিক কী পরিমাণ অর্থনৈতিক ধস নামবে, সেটি জানতে চার থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল গতকাল জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে এ বছর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর জিডিপিতে ২১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে নিম্ন প্রবৃদ্ধি।

কভিড-১৯-এর প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে এনেছে লন্ডনভিত্তিক বিজনেস পত্রিকা সিটি এম। তারা বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের নিকট-প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন ২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে সর্বপ্রথম নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর থেকে ভাইরাসটি দ্রুত মহামারী আকার ধারণ করে। গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হুবেই প্রদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসতে থাকে। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে ৮০ হাজার ৫৫২ জন। এর মধ্যে গতকাল সংক্রমিত হয়েছে ১২৬ জন। যাদের সবাই উহানের বাসিন্দা আর মারা গেছে ২৯ জন। যাদের মধ্যে ২৩ জনই উহানের বাসিন্দা। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৪২ জনে।

চীনের বাইরে এখন সবচেয়ে বড় হটস্পট হিসেবে দাঁড়িয়েছে ইরান ও ইতালি। এর মধ্যে ইরানে গতকাল নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ১ হাজার ২৩৪ জন। আর মারা গেছে ১৭ জন। এ নিয়ে দেশটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৭৪৭ জনে। আর মারা গেছে ১২৪ জন। অন্যদিকে ইতালিতে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৮ জনে। সংক্রমিত হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৮ জন। ‍তথ্যসূত্র – বণিকবার্তা।

আজকের বাজার/ এ.এ