অরিন্দম শীল— অভিনেতা হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছেন বহু আগে। এরপর নির্মাতা হিসেবে একের পর এক উপহার দিয়েছেন আবর্ত, এবার শবর, ঈগলের চোখ, ব্যোমকেশ পর্ব, দুর্গা সহায় ও আসছে আবার শবর। মাঝে তিনি প্রযোজনাও করেছেন কাহানি ২, মেরি পেয়ারি বিন্দু, টিইথ্রিএন, ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী, গুণ্ডে, কাহানি, নোবেল চোর, শুকনো লঙ্কা, জিরোথ্রিথ্রি, ব্রেক ফেল, ভায়া দার্জিলিং, দ্য বং কানেকশন।
সেই অরিন্দম শীল এবার নির্মাণ করতে যাচ্ছেন ‘বালিঘর’। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় বাংলাদেশের বেঙ্গল ক্রিয়েশন এবং তার নিজের প্রযোজনা সংস্থা নাথিং বিয়ন্ড সিনেমা থেকে নির্মিত হবে। প্রধান চরিত্রে তার দীর্ঘদিনের বিশস্থ সঙ্গী আবির, রাহুল ও অনির্বাণ। আছেন পার্নো মিত্রও। বাংলাদেশের আরিফিন শুভ, তিশা ও নওশাবাও থাকছেন।
ভারতীয় শিল্পীরা তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। তাদের নিতে আলাদা করে ভাবতে হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশিদের নেওয়ার তার কী ভাবনা কাজ করেছে জানালেন সহজ-সরল ভঙ্গিমায়।
‘বালিঘর’-এ আরিফিন শুভ অভিনয় করবেন মধুময় চরিত্রে। বেশ জটিল একজন মানুষ। এটি নিয়ে বেশ ভাবনায় ছিলেন অরিন্দম। তখনই শুভ’র ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দেখা হল। মুগ্ধ হলেন তার অভিনয়ে। বেশ পরিপক্ক ও দক্ষ অভিনেতা মনে হলো তার কাছে। সিদ্ধান্ত নিলেন শুভকেই ‘মধুময়’ চরিত্রের জন্য তার চাই।
শুভজিত রায় নামে একজনের মাধ্যমে আরিফিন শুভ’র সাথে যোগাযোগ করলেন। কাকতালীয়ভাবে তখন দুজনেই দুবাইয়ে। ওই সময়ে মাত্র আধঘণ্টার মিটিংয়ে সব চূড়ান্ত হলো।
অরিন্দম বললেন, ‘ওকে (শুভ) এদেশের সুপারস্টার হিসেবে কাস্ট করিনি। ও ভালো অভিনয় করছে। অদ্ভুত সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে মধু চরিত্রে শুভ ছাড়া কেউ হতে পারে না।’
এইতো গেলো শুভ’র কাহিনি। নুসরাত ইমরোজ তিশাকে চিনেন ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ থেকে। অরিন্দম তখনও নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেননি। কিন্তু তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিনেমা কখনও বানালে তিশাকে নিয়ে কাজ করবেন। সে ইচ্ছে পূরণ হতে যাচ্ছে তারই ৯ম সিনেমায় এসে। ‘যেহেতু প্রথম যৌথ প্রযোজনা করবো তাই আমার এ সিনেমায় তিশা আমি রাখবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম।’
কাজী নওশাবা আহমেদকে পছন্দ করেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দেখে। তাকেও ‘সম্ভাবনাময়ী অভিনেত্রী’ বললেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য রচিত ‘ঢেউ আসে ঢেউ যায়’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘বালিঘর’ নির্মিত হবে। গল্পটি সাত বন্ধুর। ২ জন বাংলাদেশি আর বাকি ৫ জন ভারতের। এক জায়গায় খুব মিল— সবাই রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। তাদের বন্ধুত্বের শুরুটা হয় শান্তিনিকেতনে একসাথে পড়ার সময় থেকে। একটা সময়ে পড়ার পাঠ চুকিয়ে সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ১২ বছর পর তারা রি-ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী তারা কক্সবাজারে ঘুরতে যায়।
অরিন্দমের ভাষ্যে, ‘কক্সাবাজারে যাওয়ার পর তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বের নানান অপ্রকাশিত দিক উঠে আসে। প্রকাশিত হয় মুখোশ ও এর আড়ালের নানান কর্মকাণ্ড।’
অরিন্দম গল্প নিয়ে আরো বলেন, ‘এ গল্পটা নিয়ে কাজ করছি, কারণ আমাদের সবার ভাষা বাংলা। শুধু ভাষায় মিল না, মিল রয়েছে আমাদের সংস্কৃতি, রুচি ও আবেগে। আমরা সবাই একই ভঙ্গিমায় কাঁদি।’
‘বালিঘর’র সর্বমোট শুটিং হবে ২০ দিন। এর মধ্যে ১৭ দিন শুটিং হবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। শুধুমাত্র ৩ দিন শুটিং হবে কলকাতা ও তার আশেপাশে।
যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা অনুযায়ী দুদেশের সরকারের অনুমোদন স্বাপেক্ষে এপ্রিলে শুরু হবে ‘বালিঘর’র শুটিং।
আজকের বাজার: সালি / ২০ জানুয়ারি ২০১৮