মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা মেনে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, সংবাদ সম্মেলনে আশাবাদ

গত আড়াই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমেছে ৭৬২ পয়েন্ট। দীর্ঘদিন ধরে  পুঁজিবাজার প্রাণহীনভাব চলছে। এ বিষয়ে  বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)ও বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বৈঠকে কিছু প্রস্তাবনা তৈরি করে। এ প্রস্তাবটি বুধবার অর্থমন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়।

এই প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নিলেই পুঁজিবাজার প্রাণ ফিরে পাবে বলে মনে করছেন বিএমবিএর সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ ডিবিএ ও বিএমবিএর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বুধবার অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভণর, বিএসইসির চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ডিবিএর প্রস্তবনা নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। বৈঠকে আহ্বান করা হয়, মন্ত্রণালয় থেকে যত দ্রত সম্ভব প্রস্তাবনা বিবেচনায় নেওয়ার জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক, সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আহসান উল্লাহ, বিএমবিএ’র সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী, ডিবিএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন এবং সহ-সভাপতি ড. জহির।

পুঁজিবাজারে চলমান সংকট উত্তরণে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের(বিএমবিএ) পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো  বিশেষ বিবেচনায় অর্থ মন্ত্রণালয় তা মেনে নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক যত দ্রুত বাস্তবায়ন করবে তত দ্রুত পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

দাবি গুলো হচ্ছে-

১। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১(সংশোধিত ২০১৩)  বাধ্যবাধকতার বাইরেও নতুন করে ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত ভিত্তি গণনা করার বিষয়টি আরোপিত হয়েছে। এতে বাজারে তারল্য প্রবাহের ক্ষেত্রটি সংকোচিত হয়েছে। এমন অবস্থায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ এর ক ধারা অনুসারে একক/ সলো ভিত্তিতে এক্সপোজার গণনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

২।  ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১(সংশোধিত ২০১৩)  এর ২৬ এর ক ধারায় প্রযোজ্য সব সিকিউরিটিজেের বাজার মুল্য অনুর্ভুক্ত করার বিধান আছে।তবে যেসব সিকিউরিটিজেের বাজার মুল্য নেই তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত না করা বা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন বন্ড ডিবেঞ্চার প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ার ও অতালিকাভূক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে ব্যাংকের এক্সপোজেরর হিসাবের বাইরে রাখা।

৩।কৌশলগত বিনিয়োগ, যা পুরো মেয়াদকাল পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে এবং যে সব সিকিউরিটিজের লেনদেন হয় না। সেই সব সিকিউরিটিজকে এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ দেয়া।

৪। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সপোজার লিমিট গণনা করার ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজার মূল্য অনুযায়ী গণনা না করে ক্রয় মুল্যের ভিত্তিতে গনণা করা।

৫। ব্যাংক তার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারিকে প্রদত্ত ঋনের যে অংশ ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করে তা পুঁজিবাজারে এক্সপোজার হিসেবে গণনা না করে শুধুমাত্র উক্ত ঋনের যে অংশ পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সিকিউরিটেজে বিনিয়োগ করা হয়; তাই উক্ত ব্যাংকে প্রকৃত পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে গণনা করা।

এ ছাড়াও আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, ব্যাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রস্তাব যত দ্রুত বিবেচনায় নিবে, তত দ্রুতই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। দুই এক দিনের মধ্যে অগ্রগতি  না হলে গভর্নরে সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো।

উল্লেখ, ২১ মার্চ বুধবার এই নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) এবং অর্থমন্ত্রণালয় জরুরী বৈঠক করেছে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলোর এক্সপোজারসহ প্রস্তাব গুলো পুনর্বিবেচনার জন্য তাগিদ দিয়েছে।