মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ফরিদপুরবাসী

শীত যেতেই ফরিদপুর শহরজুড়ে শুরু হয়েছে মশার তীব্র উপদ্রব। দিনে ও রাতে, ঘরে ও বাইরে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত রোগ-জীবাণু। বর্ষা মৌসুমের আগেই যদি মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে ডেঙ্গুসহ মারাত্মক প্রাণঘাতী সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। ফরিদপুর পৌরসভা সূত্র জানায়, আগের ৯টি ওয়ার্ড মিলে পৌর এলাকার আয়তন ছিল ১৭ দশমিক ৩৪ বর্গ কিলোমিটার। এখন পরিধি বেড়ে হয়েছে ২৯ ওয়ার্ড, আয়তন দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ৫৪ বর্গ কিলোমিটার। আর এ বিশাল এলাকায় মশা নিধনে রয়েছে পাঁচটি ফগার মেশিন, যার তিনটিই বিকল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, সড়কের পাশের ড্রেন ও ডোবাসহ নানা জায়গায় জমে থাকা পানিতে মশার ভয়াবহ বিস্তার ঘটছে, তৈরি হচ্ছে লার্ভা। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে ফরিদপুরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। আর এতে জেলার প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। শহরের প্রধান এলাকা মুজিব সড়কের পাশের দোকানিরা জানান, শহরের ড্রেনগুলো সংস্কারে কাজ চলছে। এতে ড্রেনের ময়লা ও আবর্জনাযুক্ত উন্মুক্ত পানিতে গিজগিজ করছে মশা। ওষুধ ব্যবসায়ী নিশান মাহমুদ বলেন, ‘নতুন ড্রেনের কাজ হচ্ছে। কিন্তু ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি পরিষ্কার করা হয়নি। মশা ডিম ছাড়ছে। সামনেই ডেঙ্গুর মৌসুম। এর আগেই এসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা উচিত। না হলে লোকজন নতুন করে আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে। মশার এ উপদ্রবের কারণে তাদের মনে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।’

স্থানীয় সংবাদকর্মী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর গরমের মৌসুম শুরুর আগেই মশার প্রচণ্ড উপদ্রব শুরু হয়েছে। বাসাবাড়ি, ব্যবসাকেন্দ্র সবখানেই এক দশা। ড্রেনগুলোর যেখানেই পানি জমে আছে সেখানেই মশার জন্ম হচ্ছে। পৌরসভা লোক দেখানোর জন্য যে মশার ওষুধ দেয় সেগুলো কতোটুকু কার্যকর তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। যদি সেগুলো কার্যকর হতো তাহলে এবার মশার উপদ্রব এতটা হতো না। মশা নিধনে যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে হয়তো গতবারের চেয়ে এবার ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগবালাইয়ের উপদ্রব বেশি হবে।’কলেজ শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, এবার ফাল্গুনের শুরুতে সামান্য যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে অনেক জায়গায় পানি জমে গেছে এবং সেই পানিতে এরইমধ্যে মশা বংশবিস্তার করেছে। ঝিলটুলীর বাসিন্দা এনামুল খন্দকার বলেন, ‘সন্ধ্যা হলেই বাসার দরজা-জানালা আটকে বসে থাকি। কয়েল জ্বালাই, মশার ওষুধ স্প্রে করি। তারপরও মশা সরে না। পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।’পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা জিয়াউল হাসান অভিযোগ করেন, ‘এখনও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। আর পৌরসভা আগের বছর নামকাওয়াস্তে যে ওষুধ ছিটিয়েছিল তাতে কিন্তু মশা মরেনি। আমরা এসব চাই না। আমরা চাই মশার উপদ্রব নিরসণে যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়।’ তবে মশা নিধনে কাজ চলছে দাবি করে ফরিদপুর পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু বলেন, ‘আমরা শহরকে পরিষ্কার রাখার জন্য কাজ করছি। নিয়মিত এ বিষয়ে মাইকিং চলছে। শুধু ফগার মেশিন নয়, স্প্রে করার যন্ত্র দিয়েও ড্রেনগুলোতে মশা মারার ওষুধ দেয়া হচ্ছে।’সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান