মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আজ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও তিন বাহিনী প্রধানগণ উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান।
পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিজয় দিবস প্যারেড-২০২১ এর বিশেষ অতিথি ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে অভ্যর্থনা জানান। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্য, ঊধর্¡তন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এবং বৈদেশিক কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনীসমূহ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফে›স এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের বিষয়টি এই কুচকাওয়াজে বিমূর্ত হয়ে উঠে। বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ৯ পদাতিক ডিভিশন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক এবং প্যারেড উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজিম-উদ-দৌলা।
কুচকাওয়াজে বিভিন্ন বাহিনীর সর্বমোট ২৩টি কন্টিনজেন্ট এবং বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভুটান, ভারত এবং রাশিয়ার ৩টি কন্টিনজেন্ট ও মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক দল রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, এবারই প্রথম কুচকাওয়াজে ৫টি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের কন্টিনজেন্ট ও পর্যবেক্ষক দল অংশগ্রহণ করেছে। কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সম্মিলিত যান্ত্রিক বহরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৯ আর্টিলারি ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম। জাতিসংঘ কন্টিনজেন্ট ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের কন্টিনজেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৮১ পদাতিক ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শাহান সাদি।
কুচকাওয়াজের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মুর‌্যাল ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ’র প্রতিকৃতি প্রদর্শনীর পরই সুসজ্জিত বাহনে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করেন। চিত্তাকর্ষক যান্ত্রিক বহরে সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম স¤¦লিত আকর্ষণীয় ও সুসজ্জিত গাড়ী বহর অংশগ্রহণ করে।
যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে। বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্টে নেতৃত্ব দেন এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। নতুন প্রজন্মের নিকট মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার পথে ঢাকা শহরের সার্ক ফোয়ারা হতে জাহাঙ্গীর গেইট, বিজয় সরণী, বিজয় চত্বর, গণভবন হতে রোকেয়া সরণী হয়ে আগারগাঁও এবং রাসেল চত্বর হয়ে আমিন বাজার পর্যন্ত সড়কগুলোতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় দিবসের চেতনা স¤¦লিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। ব্যানার ও বিলবোর্ডসমূহের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা বাঙালি জাতির অমর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ছাড়াও কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সকল বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের ছবি প্রদর্শন করা হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডের সাজসজ্জা এবং পোডিয়ামের উভয় পাশে স্থাপিত বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে ফুটিয়ে তোলা হয় আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকার লাল ও সবুজ রং।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছরে মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ সুষ্ঠু ও সার্থক করতে গণপূর্ত অধিদপ্তর, পিডিবি, ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, টিএন্ডটি, ডেসকো, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, পিডব্লিউডি ও স্থাপত্য অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করেছে।