ম্যাচটা মোটেও সহজ ছিল না। ২৬৬ রানের বেশ বড়সড় লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে দ্বিতীয় বলেই আউট দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানটি। তারপর মাত্র কয়েক ওভারের ব্যাবধানে আরও ৪ উইকেটের পতন। এমন একটি নাজুক জায়গা থেকে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরে আসতে পারবে অতি আশাবাদিরাও তেমনটি ভাবতে পারেননি। যেন রূপকথার জয়। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আর মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের দুদ;রআন্ত নৈপুণ্যে টাইগাররা শুধু ম্যাচেই ফিরেনি, ছিনিয়ে নিয়েছে এক অবিশ্বাস্য জয়। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে ৫ উইকেটের ব্যবধানে।
প্রথম চার ব্যাটসম্যানের দ্রুত বিদায়ের পর দলকে এগিয়ে নেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের এক জুটি গড়েন তারা।
তীব্র চাপের মধ্যে দলের হাল ধরলেও এক মুহুর্তের জন্য সাকিব ও রিয়াদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রানের চাকা সচল রাখেন। ৪১ ওভারের আগে পর্যন্ত রিকোয়ার্ড রানরেট ৭ এর উপড়ে উঠেনি। ৪১ তম ওভারে তা সাতের উপরে উঠলে ছিল মাত্র পরবর্তী ২ বল পর্যন্ত। এর পর রিকোয়ার্ড রানরেট ফের ৭ এর নিচে নেমে আসে।
আজকের ম্যাচে জয়ের পাশাপাশি বড় প্রাপ্তি সাবিক ও রিয়াদের সেঞ্চুরী। এক ওয়াপন ডে ম্যাচে বাংলাদেশের দু’জন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরী খুব বিরল ঘটনা।
দলকে তরী একেবারে কিনারে এনে দিনের সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব বোল্ড হয়ে গেলেও রিয়াদ ছিলেন ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। দলের জয় নিশ্চিত করেই তিনি থামেন। তার হাঁকানো দুর্দান্ত এক চারেই দল ২৬৬ রানের টার্গেট পেরিয়ে যায়। ১৬ বল বাকী থাকতেই রান হয়ে যায় ২৬৮।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আজকের ম্যাচটি নিউজিল্যান্ডের জন্য ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। বাংলাদেশের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। পুরো ৫০ ওভার খেলে তারা ৮ উইকেটের বিনিময়ে ২৬৫ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। কিউই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেইলর সর্বোচ্চ ৬৩ এবং অধিনায়ক উইলিয়ামস দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৭ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়া গাপটিল ৩৩, ব্রুম ৩৬ ও নিশাম ৩৩ রান সংগ্রহ করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে মোসাদ্দেক হোসেন বোলিংয়ে সেরা নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৩ রানে ৩ উইকেট সংগ্রহ করেন। এছাড়া তাসকিন ২ টি এবং মুস্তাফিজ ও রুবেল ১টি করে উইকেট সংগ্রহ করেন।
২৬৬ রানের টার্গেট তেমন বড় না হলেও বাংলাদেশের মতো ধারাবাহিকতাহীন দলের জন্যে তেমন সহজও নয়। তবু ভরসা ছিল আগের ম্যাচ দুটিতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের ধারাবাহিক নৈপুণ্য। প্রথম ম্যাচে শতক, পরের ম্যাচে ৯৫ রান করা তামিম ইকবাল আজও দলকে একটি নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেবেন এমন স্বপ্ন ছিল সবার। কিন্তু শুরুতেই আশার গুড়ে বালি পড়ে। ম্যাচের প্রথম ওভারে দ্বিতীয় বলে টিম সাউদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান। তিনি অবশ্য রিউ হওয়ার পর রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে পাল্টায়নি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (গাপটিল ৩৩, রনকি ১৬, উইলিয়ামসন ৫৭, টেইলর ৬৩, ব্রুম ৩৬, নিশাম ২৩, অ্যান্ডারসন ০, স্যান্টনার, মিল্ন ৭, সাউদি; মাশরাফি ০/৪৫, মুস্তাফিজ ১/৫২, তাসকিন ২/৪৩, রুবেল ১/৬০, সাকিব ০/৫২, মোসাদ্দেক ৩/১৩)।
বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৬৮/৫ (তামিম ০, সৌম্য ৩, সাব্বির ৮, মুশফিক ১৪, সাকিব ১১৪, মাহমুদউল্লাহ ১০২*, মোসাদ্দেক ৭*; সাউদি ৩/৪৫, বোল্ট ১/৪৮, মিল্ন ১/৫৮, নিশাম ০/৩০, স্যান্টনার ০/৪৭, অ্যান্ডারসন ০/১৯, উইলিয়ামসন ০/১৯)।