মাদকমুক্ত ঘোষণা করা হলো মাগুরা কারাগারকে

মাগুরা জেলা কারাগারকে ‘মাদকমুক্ত’ ঘোষণা করেছেন কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আখেরুল ইসলাম। তিনি মাগুরা যোগদান করার পর থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলছেন মাগুরা জেলা কারাগারকে। ইতোমধ্যে মাগুরা জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কক্ষ, কয়েদিদের থাকার স্থান সহ মাগুরা জেলা কারাগারকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। মাগুরা জেলা কারাগার চত্বরে ‘মাদকমুক্ত’ ঘোষণা করতেও সক্ষম হলেন এবার।

কারাগার আধুনিক সভ্যতায় বন্দীদের সংশোধন ও সুপ্রশিক্ষিত করে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন কারণে মানুষ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে। আইন অনুসারে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি তাকে সংশোধন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব বাংলাদেশ কারা বিভাগের। তাই বাংলাদেশ কারা বিভাগের মূলমন্ত্র হচ্চে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ।’

সম্প্রতি স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে এক সাক্ষাৎকারে মাগুরা জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আখেরুল ইসলাম জানান, বন্দীদের নিরাপদ আটক নিশ্চিতকরণ সহ কারাগারের কঠোর নিরাপত্তা ও বন্দীদের মাঝে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাক্ষাৎ প্রার্থীদের সহজ ও ন্যায্য মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহের লক্ষ্যে কারাগারের বহির্বিভাগ ও অভ্যন্তরে ১টি করে দোকান চালু করা হয়েছে। এর ফলে আগত সাক্ষাৎ প্রার্থীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদি ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করে বন্দীদের সরবরাহ করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন কারাগারে অবৈধ দ্রবাদির প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, অন্য দিকে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখাও সহজ হচ্ছে।

মাগুরা জেলা কারাগার থেকে বন্দীদের সাথে দেখা করতে আসা ব্যক্তিরা কি কি সেবা পাবেন জানতে চাইলে জেলার বলেন, আত্মীয়-স্বজন হাজতী বন্দীদের সঙ্গে ১৫ দিন অন্তর অন্তর একবার দেখা করতে পারবেন। কয়েদী বন্দীর সাথে মাসে একবার দেখা করা যাবে। একবারে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের জন্য এবং সর্বোচ্চ পাঁচজন এক সাথে একজন বন্দীর সাথে দেখা করতে পারবে। বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে বন্দীদের সাথে আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। তবে অস্থায়ী টেলিফোন বুথে বন্দীদের সাথে কথা বলার সুযোগ করা হয়েছে।

এছাড়া কারাগারে আটক বন্দী অথবা কারো সম্বন্ধে কোন তথ্য জানতে চাইলে কারাগারের ফটকের সামনে অবস্থিত রির্জাভ গার্ডে কর্তব্যরত প্রধান কারারক্ষীর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। কারাগারে আটক বন্দীদের ব্যক্তিগত তহবিলে (পিসি) অর্থ জমা রাখার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। মোবাইল বা অন্য কোনও নিষিদ্ধ দ্রব্য নিয়ে সাক্ষাৎ কক্ষে প্রবেশ করা যাবে না। বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের দেখা সাক্ষাৎ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করা হয়েছে।

ওকালতনামা স্বাক্ষরের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত এই জেলার জানান, ওকালতনামা স্বাক্ষরের ব্যাপারে অবৈধ অর্থের লেনদেন রোধে কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ওকালতনামা দাখিলের জন্য নির্ধারিত বক্স রয়েছে। নির্ধারিত সময় অন্তর অন্তর বক্স খুলে ওকালতনামা স্বাক্ষরের পর বন্দীর বিজ্ঞ কৌশলী/আত্মীয়দের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ওকালতনামা বন্দীর স্বাক্ষরের জন্য কোন অর্থের প্রয়োজন হয় না মাগুরা জেলা কারাগারে।

যদি কেউ এ ব্যাপারে কোনও অর্থ দাবি করে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি রির্জাভ গার্ডে কর্তব্যরত প্রধান কারারক্ষী অথবা সরাসরি জেল সুপার/জেলার এর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়াও কারাগারে আটক বন্দীদের স্ব-স্ব ধর্ম প্রতিপালনের স্বার্থে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগসহ প্রতিপালনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

নারী কয়েদীদের বিষয়ে জানতে চাইলে আখেরুল ইসলাম বলেন, ‘নারী বন্দীদেরকে সেলাই, এমব্রয়ডারী, নকশীকাঁথা, বেডশিট, বালিশের কভার ও শাড়ির ওপর ডিজাইনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের তৈরিকৃত এসব পণ্য বাহিরে বিক্রয় করে আয়ের একটি অংশ এ শ্রমে নিয়োজিত বন্দীদের ব্যক্তিগত পিসিতে জমা দেয়া হয়।’

মাদকমুক্ত মাগুরা জেলা কারাগারসহ বন্দীদের সাথে মানবিক আচরণ করা, যথাযথভাবে তাদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং আত্মীয়-স্বজন, আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাৎ নিশ্চিত করা, একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে কাজ চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মাগুরার সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করেন এই ভারপ্রাপ্ত জেলার। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান