ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ সিসা নামের নতুন নেশা দ্রব্যের প্রতি এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীর আসক্তি দিন দিন বেড়েই চলছে। এসব মাদকের ভয়াল থাবায় সর্বনাশের পথে রয়েছে দেশের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী। তাই নেশা দ্রব্য নির্মূলে এবার সাড়াশি অভিযানে নামছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে শতাধিক বারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকা ধরে শিগগিরই অভিযানে নামছে সংস্থাটি। রাজধানী ঢাকাতেই মাদক বিক্রেতা ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান ও বারের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও বারে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ মাদকদ্রব্য। অনেক বারের আইনি ভিত্তি থাকলেও সেখানে যে মদ বা সিসা বিক্রি হয় তার বেশির ভাগেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) হিসাবে রাজধানীতে বৈধ মদের বার ৫০ থেকে ৬০টি এবং সিসা বার বা সিসা লাউঞ্জ রয়েছে ১০৫টি।
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের বাজারকে বলেন, রাজধানীতে মদের শতাধিক বার রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ বারে নেই বৈধ আমদানির কাগজপত্র। রাজধানীর অলিতে-গলিতে গজিয়ে উঠা এসব বার থেকে মাদক দ্রব্য অবাধে চলে যাচ্ছে তরুণ-তরুণীদের হাতে। তাই যুব সমাজ রক্ষায় মাদক প্রতিরোধে কঠোর অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে সিসা নামের আরো একটি নেশা দ্রব্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও এখনো নিষিদ্ধ মাদকের তালিকায় নেই এই দ্রব্যটি। বর্তমানে রাজধানীতে সিসার অবাধ ব্যবহার ল্য করা গেছে। শুধু তাই নয়, সিসার সঙ্গে গাজা ও বিভিন্ন মাদদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আর একটি মাদক ইয়াবার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজে। ইয়াবা খুব সস্তা ও কালারফুল হওয়ায় তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করে। ইয়াবা উত্তেজকমুলক মাদক হওয়ায় সমাজের জন্য বেশ তিকর। যা সামাজিক একটি অস্থিরতা তৈরি করে। শিগগিরিই অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকায় একটি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, বিয়ার ও সিসা জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। তিন দিনের অভিযানে জব্দ করা বিদেশি মদের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮১ লিটার। অভিযানে ৯১টি বিদেশি মদের বোতলও উদ্ধার হয়। রেজিস্ট্রার খাতায় দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ওই হোটেলে ২৭ টন মদ ও বিয়ার বিক্রি হয়েছে। কিন্তু রেজিস্ট্রারের হিসাবে দেখা গেছে, হোটেলটি সাড়ে ৬ টন মদ ও বিয়ার বিক্রি করেছে। বাকি প্রায় ২১ টন মদ ও বিয়ারের হিসাব দিতে পারেনি হোটেল কর্তৃপ। এছাড়া হোটেলটি থেকে প্রায় ২২ কেজি সীসা ফেভারও উদ্ধার করা হয়, যার বিপরীতে কর্তৃপ আমদানি সংক্রান্ত কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। রাজধানীর গুলশান বা বনানীর মতো অভিজাত এলাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সিসার সঙ্গে অন্যান্য মাদক মিশিয়ে সেবন করা হয়। এতে তরুণ সমাজ মাদকদ্রব্য দ্বারা মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সিসা মাদকদ্রব্য আইনের আওতায় পড়ে না বলে শুল্ক গোয়েন্দারা সিসা আমদানির কাগজপত্র যাচাই করে শুল্ক আইনে ব্যবস্থা নেবে।
জানা যায়, বর্তমানে ভারত থেকে ফেনসিডিল আসা অনেকাংশে কমে গেছে। কিন্তু ফেনসিডিলের জায়গা দখল করেছে ইয়াবা নামের ভয়ঙ্কর নেশাদ্রব্য। বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায় সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেনসিডিলের অবৈধ কারখানা সিলাগালা করা হয়েছে। কড়া নজরদারির কারণে দেশে ফেনসিডিল পাচার হয়ে আসা অনেকাংশে কমে গেছে। তবে ইয়াবা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার বেড়েছে আশংকাজনক হারে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে নেশাটির জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই শুল্ক গোয়েন্দারা বারসহ নেশা করার আস্তানায়ও অভিযান চালাবে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীতে সিসাসেবীর সংখ্যা এখন ৫০ হাজারেরও বেশি। দেশে বার হিসেবে এর সংখ্যা দুই শতাধিক। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ১০৪টির তালিকা করেছে। অন্যদিকে সিসাসেবীদের মধ্যে ১৫ হাজার ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তবে প্রথম দিকে উচ্চবিত্ত ঘরের কিছু তরুণ-তরুণী মধ্যে সিসা সেবনের প্রবণতা ল্য করা গেলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে সর্বস্তরে। সাধারণত শীতের সময় সিসা বারগুলোতে ভিড়বাড়ে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আজকের বাজার : এসএস / ওএফ/ ২৩ জানুয়ারি ২০১৮