মাননীয় আদালত, কার কাছে যাব; তছুরুপ করা হয়নি একটি টাকাও: খালেদা

সরকারের মন্ত্রীরা বিচারাধীন মামলা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কার কাছে যাব।’ নিজেকে খুবই সামান্য একজন মানুষ হিসেবে অভিহিত করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, তিনি তার সীমিত শক্তি ও মেধা উৎসর্গ করেছেন দেশ ও জাতির জন্য।

বৃহস্পতিবার ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা কাল্পনিক ও বানোয়াট বলে দাবি করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘হয়রানি করতেই উদ্দেশ্যেমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে, যা পুরোপুরি কাল্পনিক ও বানোয়াট। একটি টাকাও তছরুপ করা হয়নি বলে দাবি করেন বেগম জিয়া।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুদক।

২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে করা মামলায় দুদক যে অভিযোগ এনেছে তা স্ববিরোধিতায় ভরপুর। এটি দুদকের আইনের কর্তৃত্ব ও আওতার বাইরে।

আদালতের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিচারের নামে দীর্ঘদিন ধরে আমি হয়রানি, পেরেশানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছি। এতে আমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম।’

এর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে দুই শর্তে জামিন পান খালেদা জিয়া। এক লাখ টাকা বন্ডে দুজন আইনজীবীকে জামিনদার থাকতে হবে এবং খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে চাইলে আগে থেকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে- এই হলো দুই শর্ত।

এরপর তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য শুরু করেন।

এক ঘণ্টা লিখিত বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়া বাকি বক্তব্য পরে দেয়ার সুযোগ চান। বলেন, আমি গতকাল জার্নি করে এসেছি। আমি বাকি বক্তব্য পরে দিতে চাই।

পরে বিচারক আগামী ২৬ অক্টোবর মামলার নতুন দিন ধার্য করেন।

খালেদা জিয়া এ সময় তার বিরুদ্ধে করা মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি দলের নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সরকারের হস্তক্ষেপে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া নিজের মামলায় ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন।

তিনি প্রথমেই প্রশ্ন তুলে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের মামলার বিচারকাজ যেখানে করা হয়েছে, সেখানে তার মামলার বিচার কেন করা হচ্ছে।

শাসকগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে মামলার বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া এ বিষয়ে আদালতে উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটি উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা করে। ওই মামলায় একজন বিচারক তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন, পরবর্তীতে ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু তৎপরতা চালানো হয়, যার ফলে সেই বিচারক সপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যান। সেই বিচারক নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এসব ঘটনা অহরহই ঘটছে ।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘মাননীয় বিচারক, আপনি যেখানে বসে বিচার করছেন, যে এজলাসে বসেছেন, এটা কোনো আদালতের প্রাঙ্গণ নয়। ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক আমলে দেশের নেতা-নেত্রীদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে কোর্ট কাচারির বাইরে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ ট্রাইব্যনুালের এজলাস বসেছিল।’

মাননীয় আদালত, আমি কার কাছে যাব?

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা ছিল এমন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর সেই মামলাগুলো একে একে প্রত্যাহার ও নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, শাসক দলের মন্ত্রীরা বিচারাধীন মামলার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। মাননীয় আদালত, আমি কার কাছে যাব? আমি আদালতের প্রতি বিশ্বাস রাখতে চাই।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আরও যেসব মামলা করা হয়েছে সেগুলো অন্য আদালতে বিচারাধীন হলেও এ দুটি মামলা এখানে আনা হলো কেন? এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য বিচারের নামে আমাকে জনসমক্ষে হেনস্তা ও অপমান করা। এটি থেকেই প্রমাণিত হয়, সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আমার মামলার কাজ এখানে চালাচ্ছে।’

এ ধরনের আচরণকে স্বাধীন বিচারের অন্তরায় উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাকে এভাবে হেনস্তা ও অসম্মান করার প্রতিকার কোথায় পাব?’

ট্রাস্ট্রের একটি টাকাও অপচয় করা হয়নি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে যে অনুদান এসেছিল, তা এতিমখানার কল্যাণেই ব্যয় হয়েছে। সেই ব্যয়ের পর বাকি অংশ ব্যাংকে গিচ্ছিত রাখা হয়েছে। ব্যাংকের সুদ যুক্ত হয়ে সেই টাকা এখন অনেক বেড়েছে। একটি টাকাও তছরুপ বা অপচয় করা হয়নি